শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ
কালো কাপড়ের আবরণ নিয়ে প্রশ্ন

শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ
আবু সালেহ রনি
প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০০:২১ | আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২০:৪৫
রাজধানীর মিরপুরে ১৯৭২ সালের ২২ ডিসেম্বর নির্মিত হয় প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ। সেই থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে স্মরণ করেন মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের। গতকাল শনিবার সেই স্মৃতিসৌধে গিয়ে হতবিহব্বল হয়েছেন অনেকেই। স্মৃতিসৌধের ফলকটি ঢেকে দেওয়া হয়েছিল কালো কাপড়ে! তাতে লেখা ছিল ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী সমাধিস্থল’। কেউ কেউ ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে এ ঘটনার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কারও কাছে সদুত্তর না পেয়ে অনেকে ফোন দিয়ে সমকালকেও জানিয়েছেন উৎকণ্ঠার কথা। পরে এ বিষয়ে সমকাল থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট তিন মন্ত্রণালয়ে কথা বলেও কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। পরস্পরকে দায় চাপিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এই স্মৃতিসৌধের ফলকের দুটি অংশ, বাম পাশে লেখা রয়েছে–বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘পূরবী’ কাব্যগ্রন্থের ‘সুপ্রভাত’ কবিতার অংশবিশেষ– ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী,/‘‘ভয় নাই, ওরে ভয় নাই।/নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ক্ষয় নাই, তা’র ক্ষয় নাই।’’ একই ফলকের ডান দিকে লেখা আছে– ‘শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে স্মৃতিসৌধের ফলক উন্মোচন করলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’
এ ব্যাপারে স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন (অব.) আলমগীর সাত্তার বীরপ্রতীক সমকালকে বলেন, ‘দেশে এখন যে অবস্থা তাতে পারলে মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করার চেষ্টা হয়। এটি তারই বহিঃপ্রকাশ। স্মৃতিসৌধের ফলক কালো কাপড়ে ঢেকে রাখা অত্যন্ত নিন্দনীয়। স্বীকৃত বিষয়গুলোকে অস্বীকার করে জাতিকে বিভাজিত করা হচ্ছে। এগুলো সাময়িক। সত্যই স্থায়ী হবে।’ শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে উৎকণ্ঠা জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সন্তানদের সংগঠন প্রজন্ম ৭১-এর সভাপতি আসিফ মুনীর তন্ময়। তিনি বলেন, ‘স্মৃতিফলক কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা বিষয়টি জনগণের কাছে পরিষ্কার হওয়া দরকার। জনগণ ও শহীদ পরিবারের জন্য বিষয়টি বেদনাদায়ক।’
কালো কাপড়ে ঢেকে রাখা স্মৃতিসৌধ ফলকের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে আলম খায়রুল নামে একজন লিখেছেন, ‘সব বেসম্ভবের দেশ।’ ফেসবুক পোস্টে তাঁর মতো আরও অনেকে সমালোচনা করেছেন।
এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইশরাত চৌধুরী সমকালকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা নেই। এর উত্তর সিটি করপোরেশন বা গণপূর্ত মন্ত্রণালয় দিতে পারবে। আমরা শুধু অনুষ্ঠানটি করি, তত্ত্বাবধানসহ অন্যান্য বিষয় তাদের।’
গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হামিদুর রহমান খান বলেন, ‘এটি আমাদের করতে বলা হয়েছে, আমরা করেছি। গণপূর্ত তত্ত্বাবধান করে, এটি করতে বলা হয়েছে।’ কারা করতে বলেছে– এমন প্রশ্ন তিনি বলেন, ‘অ্যাসেটটি (স্থাপনা) উত্তর সিটি করপোরেশনের, আর অনুষ্ঠানটি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের। এই দুটি মন্ত্রণালয়ের যদি কোনো রিকোয়ারমেন্ট (চাহিদা) থাকে সেটি বাস্তবায়ন করে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর।’
জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) মীর খায়রুল আলম সমকালকে বলেন, ‘স্মৃতিসৌধের ফলক কালো কাপড়ে ঢেকে রাখার বিষয়ে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বলতে পারবে, কারণ এটি তাদের স্থাপনা। সিটি করপোরেশন কোনো স্থাপনা নির্মাণ করে না। অনুষ্ঠানটি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের। গণপূর্ত সার্বিকভাবে স্থাপনা নির্মাণসংক্রান্ত বিষয়ে ভূমিকা রাখে। আর আমরা স্থাপনা পরিষ্কার-পরিচ্ছনতা, মশক নিধনসহ অন্য বিষয়গুলো করে থাকি।’
- বিষয় :
- শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ