ঢাকা রেলওয়ে থানা
পাঁচ বছরে অপমৃত্যুর মামলা দেড় হাজার
বেশির ভাগই ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণহানি

ফাইল ছবি
আব্দুল হামিদ
প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৫ | ০১:৪৭ | আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৫ | ০৯:৫৪
ঢাকা রেলওয়ে থানার আওতায় আছে ২৮টি স্টেশন ও ২২৪ কিলোমিটার রেললাইন। নারায়ণগঞ্জ, বিমানবন্দর, টঙ্গী, জয়দেবপুর ও টাঙ্গাইল রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি একই থানার অধীনে। অপরাধের ধরন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বছরজুড়ে অপমৃত্যুর মামলার তদন্ত করতেই গলদঘর্ম কর্মকর্তারা। রেলওয়ে থানায় অপরাধের ঘটনায় যত মামলা হয়, এর তিন গুণ হয় অপমৃত্যুর মামলা।
২০২০ সাল থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ বছরে ২ মাসে অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে ১ হাজার ৪০৩টি। বিশেষ ক্ষমতা আইনে এবং নারী-শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধে মামলা হয়েছে ৫০৭টি। এর মধ্যে মাদকে ১৯২টি, চুরি ও ছিনতাই ১৫৫টি এবং নারী-শিশু ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে ছয়টি। এদিকে চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে ৬১টি এবং অন্যান্য ২৪টি। এ ছাড়া ২০২০ সালে ২১৯টি, ২০২১ সালে ২৪৩টি, ২০২২ সালে ২৮৭টি, ২০২৩ সালে ৩০৯টি ও ২০২৪ সালে ২৮৪টি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। এসব মামলার (ইউডি) মধ্যে ২০২৪ সালের ২৮১টি এবং চলতি বছরের ৫৯টি ছাড়া বাকি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশ।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অপমৃত্যুর মামলা বেশি হয় ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর ঘটনায়। আবার ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। হত্যার পর রেললাইনে মরদেহ ফেলেও দুর্ঘটনার নাটক সাজানো হয়।
ঢাকা রেলওয়ে থানার এসআই আব্দুল বারেক বলেন, ‘রেলওয়ে থানায় নতুন এসেছি। এখানে অপমৃত্যুর মামলা বেশি হয়। বর্তমানে তিনটি মামলা তদন্ত করছি। মেডিকেল রিপোর্ট এলেই আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।’
থানায় দৃষ্টিনন্দন লাইব্রেরি
কমলাপুর স্টেশনের পূর্ব-দক্ষিণ পাশে ঢাকা রেলওয়ে থানা। থানায় প্রবেশ করতেই ডিউটি অফিসারের কক্ষ। বাম পাশে ওসির কক্ষ। থানায় গিয়ে হাজতখানায় আছে পরিপাটি লাইব্রেরি। থরে থরে সাজানো রয়েছে বই। লাইব্রেরির বিষয়ে একাধিক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত আসামি বই পড়ে না, বই মাথার নিচে দিয়ে ঘুমায়। তবে ব্যতিক্রমও আছে।
গত ১৭ মার্চ সকালে থানার ডিউটি অফিসারের কক্ষে ৯ বছর বয়সী এক শিশুকে দেখা যায়। কথা বলে জানা গেল, তার নাম মোহাম্মদ সিয়াম হোসেন। বাবা মো. মুকিম ও মা ছালমা বেগম মারা গেছেন। তার কোনো অভিভাবক নেই। ১৬ মার্চ রাতে খুলনার কয়রা থেকে ট্রেনে চড়ে কমলাপুরে চলে এসেছে। সকালে স্টেশনে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখে রেলওয়ে থানায় তাকে হস্তান্তর করে লোকজন। পরে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন লোকাল এডুকেশন অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (লিডো) সোশ্যাল মবিলাইজার মাহফুজুর রহমানকে জানানো হয়। তিনি শিশুটিকে নিয়ে যান। রেলওয়ে থানায় শিশুটির বিষয়ে একটি জিডি করেন তিনি।
মাহফুজুর রহমান সমকালকে বলেন, কমলাপুর স্টেশন, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, সায়েদাবাদ ও গাবতলী বাস টার্মিনালসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় তাদের (লিডো) টিম কাজ করে। উদ্ধার শিশুদের প্রথমে আঞ্চলিক শেল্টার হোমে রেখে পরিবারের সদস্যদের খোঁজা হয়। কারও সন্ধান না পেলে তাদের মোহাম্মদপুরে লিডোর পিস হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে ৭০ জনের বেশি শিশু আছে।
২০ মার্চ দুপুর ২টার দিকে থানার সামনে জটলা দেখা যায়। অনেকের হাতে লাঠি। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রেলস্টেশন থেকে ছিনতাই করে পালানোর সময় একজনকে পথচারীরা মারধর করে থানায় দিয়েছে। থানার ডিউটি অফিসারের কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, এক যুবক কান্না করছে। পাশেই এক কিশোর বলছে, এই যুবক ছিনতাইকারী। থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই মো. শামীম তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। অভিযুক্ত যুবকের নাম মোহাম্মদ আলী। বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেছে। দক্ষিণ কমলাপুরে একটি মেসে থাকে।
থানার ওসি জয়নাল আবেদীন সমকালকে বলেন, অপমৃত্যুর মামলা হয় সবচেয়ে বেশি। চুরি-ছিনতাইয়ের অভিযোগেও মামলা হয়। এই থানায় ওয়ারেন্ট তামিল করতে হয় না। সংশ্লিষ্ট থানার অনুরোধে আসামি ধরা হয়। এ ছাড়া মোবাইল ফোন ও জিনিসপত্র হারানোর অভিযোগে জিডি হয় বেশি।
কমলাপুর স্টেশনের ডোমঘরের কর্মী আকাশ বলেন, রেললাইনের ২২৪ কিলোমিটার এলাকায় কোনো লাশ থাকার খবর পেলেই ছুটে যান তারা। লাশ ভ্যান বা ট্রেনে কমলাপুরে নিয়ে আসেন। এখান থেকে পুলিশ ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়।