ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

ঢাকায় আজ মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত

ঢাকায় আজ মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত

ফাইল ছবি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৫ | ১৩:০৯

সাগরে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে গতকাল থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এটি আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। এ অবস্থায় আজ শুক্রবার একদিনে ঢাকায় মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক জানান, আজ শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ১৯৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশের নিরিখেও একই সময়ে মৌসুমে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের তথ্য রেকর্ড করা হয়েছে। আজ শুক্রবার নোয়াখালীর মাইজদীকোর্টে সর্বোচ্চ ২৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ১৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। তখন পর্যন্ত এটিই ছিল মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। 

আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক জানান, আজ শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত একদিনে চাঁদপুরে বৃষ্টি হয়েছে ২৪২ মিলিমিটার, কুমিল্লায় ১৭৯, ফরিদপুরে ১৭১, চট্টগ্রামে ১৬৪, নারায়ণগঞ্জে ১৬১, মাদারীপুর, ফেনী ও পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় ১৬০, বরিশালে ১৪১, রাঙামাটিতে ১৪০, কিশোরগঞ্জের নিকলিতে ১৩১, মানিকগঞ্জের আরিচায় ১১৯, বান্দরবানে ১১৩, বগুড়ায় ১১২ এবং নেত্রকোণায় ১০৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর বাইরে দেশের বিভিন্ন স্থানে কম-বেশি বৃষ্টি হয়েছে।

সাধারণত ২৪ ঘণ্টায় ১ থেকে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে হালকা, ১১ থেকে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে মাঝারি, ২৩ থেকে ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে মাঝারি ধরনের ভারী, ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে ভারী এবং ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি রেকর্ড হলে তাকে বলা হয়ে থাকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত।

এদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করার পর এটি স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে সাতক্ষীরা ও আশেপাশের এলাকায় স্থল গভীর নিম্নচাপ আকারে অবস্থান করে। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টাঙ্গাইল ও আশেপাশের এলাকায় অবস্থান করে এটি।

তবে এর প্রভাবে আজ দিনভর বৃষ্টি ঝরবে। শুধু আজ নয়, আগামী চারদিন পর্যন্ত থাকবে বৃষ্টি। আবহাওয়াবিদ মো. শাহিনুল ইসলাম বলেন, নিম্নচাপের প্রভাব রয়ে যাবে, অর্থাৎ বৃষ্টি হতেই থাকবে। দেশের সব সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। 

আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ বলেছেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় হওয়ার আশঙ্কা নেই। ২৪ মে টেকনাফ দিয়ে মৌসুমি বায়ুর প্রবেশ ঘটে। এটা অনেক সক্রিয়। এ সক্রিয়তা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে দেয়নি।  

আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও রংপুর বিভাগ পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। অনেক জায়গায় দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।

আজ শুক্রবার ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ সময় আকাশে বিদ্যুৎ চমকাতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। 

শনিবার রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।  রোববার চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। 

এদিকে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে উপকূলীয় এলাকা। মঙ্গলবার সৃষ্ট লঘুচাপটি বৃহস্পতিবার গভীর নিম্নচাপে রূপ নেয়। ভোর থেকে শুরু হয় ভারী বৃষ্টি। মাঝেমধ্যে ছিল ঝোড়ো হাওয়া। ফুঁসতে থাকে নদনদী। বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় গ্রামের পর গ্রাম। জোয়ারে ডুবেছে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা। ১ থেকে ৩ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে।

আরও পড়ুন

×