ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

জীর্ণ আবাসিক হলে ঢামেক শিক্ষার্থীদের ঝুঁকিতে বাস

জীর্ণ আবাসিক হলে ঢামেক  শিক্ষার্থীদের ঝুঁকিতে বাস

শহীদ ডা. ফজলে রাব্বি হল নির্মাণের সাত দশকেও সংস্কার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। সোমবার তোলা -সমকাল

 যোবায়ের আহমদ

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৫ | ২৩:৫৮ | আপডেট: ২৪ জুন ২০২৫ | ০১:৫১

সেই ১৯৫৫ সালে চালু হয়েছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) একমাত্র আবাসিক ছাত্রাবাস শহীদ ডা. ফজলে রাব্বি হল। ৭০ বছর পার হলেও প্রায় ৭৫০ ছাত্রের আবাসন সুবিধার হলটির কোনো সংস্কার হয়নি। নতুন কোনো হলও নির্মাণ হয়নি। বর্তমানে হলটির জরাজীর্ণ হাল; পিলার ফেটে, ছাদ থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। এরই মধ্যে কিছু কক্ষকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। তবু ছাত্রদের বিকল্প আবাসন ব্যবস্থা হয়নি।  

দুই সপ্তাহ ধরে আবাসন সংকট নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। গত শনিবার কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। গতকাল সোমবারও শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সভা করেছেন।  

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তদানীন্তন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদ ভবনকে (বর্তমান ঢামেক হাসপাতালের মূল ভবন) অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্পে রূপান্তর করা হয়। যুদ্ধের পরে ১৯৪৬ সালে সেখানেই গড়ে ওঠে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এরপর বিভিন্ন সময় ভবনের কিছু অংশ বর্ধিত হলেও কলেজটির অবকাঠামোর উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি হয়নি। 
গতকাল রাজধানীর বকশীবাজার-সংলগ্ন কলেজের একমাত্র হলে গিয়ে দেখা যায়, মূল ভবনের ছাদের বড় বড় পলেস্তারা খসে পড়ার পাশাপাশি পিলারগুলোও ফেটে ভেতরের কংক্রিট বেরিয়ে এসেছে। 
ছাত্রদের ডা. ফজলে রাব্বি হলের মূল ভবনে মূলত এমবিবিএসের ছাত্ররা থাকেন। ভবনটিতে ১২০টি কক্ষ রয়েছে। গণপূর্ত অধিদপ্তর ডা. ফজলে রাব্বি হলের মূল ভবনের চারতলাকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করার পর সেখানে শিক্ষার্থীরা থাকেন না। চারতলায় ৩০টির মতো কক্ষ রয়েছে। ফলে নতুন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের আবাসনের কোনো সুষম ব্যবস্থা হয়নি।  

হলের ভেতরে এ, বি, সি ব্লক ভবনে জ্যেষ্ঠ ছাত্র এবং ডা. মিলন ইন্টার্নি হোস্টেলে পোস্টগ্র্যাজুয়েট ইন্টার্ন ছাত্ররা থাকেন। সেই ভবনগুলোর অবস্থাও ভালো না। অন্যদিকে, ছাত্রীদের ডা. আলীম চৌধুরী হলেরও একই হাল। ১৯৫০ সালে নির্মিত পুরোনো এ হলটিতে সাড়ে ৫০০ ছাত্রীর আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে। 
কলেজের ইন্টার্ন ছাত্র সাজ্জাদ হোসেন সমকালকে বলেন, মহাপরিকল্পনার কথা জানিয়ে বিগত সময়ে কলেজের কোনো সংস্কার কাজই হয়নি। ফলে পুরো কলেজের ভবনেরই অবস্থা ভালো নয়। সবগুলো ভবন পুরোনো। 

বর্তমান চলমান আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র (কে-৭৯) আবদুল্লাহ আল নোমান। তিনি সমকালকে বলেন, অনেকে হলে থাকে না নিয়মিত। তবে ওয়ার্ডে ডিউটি করতে হয় সেজন্য সবাই হলে বেড রাখে। তাই সবাইকে আবাসন সুযোগ দিতে হয়। নতুন ব্যাচের জন্য গণরুমের আসনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আমরা এটার প্রতিবাদ করেছি। 
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের সভায় আমরা প্রতিটি দাবি নিয়ে কথা বলেছি। যেহেতু দাবিগুলো রাতারাতি বাস্তবায়নযোগ্য নয়, তাই আমরা বাস্তবায়নের জন্য রূপরেখা চেয়েছি। তারা বলেছেন, সামনে সরকার মেডিকেলের জন্য যে কাজ করবে, এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। আমরা বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে বসব। ছাত্রদের বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা করা হলে আমরা ক্লাসে ফিরব। 

কয়েক বছর আগে কলেজ এবং হাসপাতালের আমূল সংস্কারে একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সর্বশেষ ২০২৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাপরিকল্পনার সঙ্গে মিলিয়ে ঢামেকের মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী। তবে সরকারের আর্থিক সংকটে প্রকল্পগুলো আলোর মুখ দেখেনি। তবে প্রবল ঝুঁকি থাকার পরও হলের কোনো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।  
এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল আলম বলেন, কলেজ এবং হাসপাতালের একটি অবকাঠামো পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। তবে সেটি একনেকে পাস হয়নি। এই মহাপরিকল্পনার কারণে অন্য কোনো বড় সংস্কারও ঢাকা মেডিকেল কলেজে হয়নি। যার কারণে কলেজের একাডেমিক ভবন ও ছাত্রদের হোস্টেলের এ দুর্দশা চলছে। আমরা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি।  

আরও পড়ুন

×