ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

সরেজমিন গাবতলী পশুর হাট

১০ শতাংশ পশুও ওঠেনি হাটে

১০ শতাংশ পশুও ওঠেনি হাটে

করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে কোরবানির পশু কিনতে হাটে না গেলেও কেউ কেউ যাচ্ছেন সরাসরি খামারে। গরুর ছবি তুলে পাঠাচ্ছেন স্বজনদের কাছে। বুধবার চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর শিকলবাহা শাহ আমানত এগ্রো খামার থেকে তোলা-মো. রাশেদ

অমিতোষ পাল

প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০২০ | ১২:০০ | আপডেট: ২২ জুলাই ২০২০ | ১৫:৫৯

বিগত বছরগুলোতে ঈদুল আজহার এক মাস আগে থেকেই গাবতলীতে কোরবানির পশুর হাটের প্রস্তুতি পুরোদমে শুরু হয়ে যেত। ট্রাক ভরে ভরে পশু আসতে শুরু করত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। ঈদের দিন যতই এগিয়ে আসে, ভিড়ও বাড়তে থাকত ক্রেতা-দর্শনার্থীদের। এবারের প্রেক্ষাপট বিগত বছরগুলোর তুলনায় পুরোটাই ভিন্ন। আর এ চিত্র কেবল গাবতলী স্থায়ী পশুর হাটের ক্ষেত্রেই নয়, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আরও যে ১৬টি পশুর হাট বসার অনুমতি দিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, সেগুলোর চিত্র আরও খারাপ। কোথাও এখনও গরু রাখার খোঁয়াড়ই তৈরি করা হয়নি। কিছু কিছু হাটে বাঁশ-কাঠ নিয়ে জড়ো করা হয়েছে। যারা হাটগুলোর ইজারা নিয়েছেন তারাও অনেকটা সংশয়ে আছেন। পশু আমদানি হবে কি-না। হলেও বিক্রি হবে কি-না। সেই বেচাবিক্রি দিয়ে ইজারার অর্থ তুলতে পারবেন কি-না। কারণ করোনাভাইরাসের কারণে এবার নিম্ন ও মধ্য আয়ের একটি বড় অংশ পশু কোরবানি থেকে বিরত থাকতে পারে। দিলেও যিনি একাই একটা পশু কোরবানি দিতেন, তিনি হয়তো অংশীজন খুঁজবেন। বিত্তশালীরাও হয়তো কোরবানির পশুর সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারেন। হাটের ইজারাদার, ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেও এমন চিত্র পাওয়া গেছে। গাবতলী পশুর হাটের ম্যানেজার আবুল হাশেম বলেন, ঈদের মাত্র আট-নয় দিন বাকি। অন্য বছরগুলোতে এই সময়ে হাটে যে পশু জমা হতো, এবার তার ১০ ভাগ পশু আছে কি-না সন্দেহ। ১৫-২০ দিন আগে থেকেই লোকজন কোরবানির পশু কেনা শুরু করতেন। প্রতিদিন একশ'-দুশ' গরু-ছাগল বিক্রি হয়ে যেত। এবার পশুও নেই। ক্রেতাও নেই। দর্শনার্থীও নেই। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত কেবল চারটি খাসি বিক্রি হয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, নিয়মিত পশু রাখার যে খাঁচাগুলো আগে থেকেই আছে, সেই খাঁচারও অনেকগুলো ফাঁকা। ক্রেতা-দর্শনার্থীও নেই। অথচ এ সময়ে হাটে বিভিন্ন ধরনের বাহারি পশু উপচে পড়ত। হাট ডিঙিয়ে বেড়িবাঁধেও খাঁচা তৈরি করত হাট কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয়রা জানান, আগে ঈদের অন্তত ২০ দিন আগেই বোঝা যেত গাবতলীতে একটি বড় পশুর হাট রয়েছে। দৃষ্টিনন্দন তোরণ ও মাইকিংয়ে কান ঝালাপালা হয়ে যেত স্থানীয়দের। এবার এসবের কোনো বালাই গতকালও চোখে পড়েনি। পশু ক্রেতা-বিক্রেতাদের খাবার-দাবারের জন্য হাট ঘেঁষে থাকা যে খাবার হোটেল রয়েছে, সেগুলোতেও বসার জায়গা পাওয়া যেত না। গতকাল গিয়ে দেখা গেছে সেই খাবার হোটেলগুলোও খাঁ খাঁ করছে। ১৪নং খাবার হোটেলের মালিক ইশারফ জানান, হাটে গরু নেই, কাস্টমার নেই।

সারা বছর গাবতলীর হাটে খাসি বিক্রি করা বাবুল বলেন, 'এবার পশুও কম। যা আছে তা কেনারও কোনো লোক দেখা যাচ্ছে না। এ জন্য দাম অনেক কম। অন্য বছর যে খাসি ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হতো, এবার তা ১৫ হাজারেই বিক্রি করে দিচ্ছি।'

পটুয়াখালী সদরের মাঝখালি গ্রামের হাবিবুর রহমান ময়মনসিংহের খামার থেকে কিছু গরু হাটে তুলতে চান। এ জন্য গতকাল তিনি হাটের চিত্র দেখতে যান। খোঁজ-খবর নিয়ে এ প্রতিবেদককে বলেন, তার খামারে দুটি বড় আকৃতির গরু আছে যেগুলোর ওজন ১৮ থেকে ২০ মণ। অন্যগুলো ছোট ও মাঝারি। হাট যা দেখলেন তাতে হয়তো সব গরু হাটে তোলা যাবে না। বড় দুটি গরুই তুলবেন। কারণ ওই দুটি গরু কম দাম হলেও বিক্রি করে ফেলা দরকার। তিনি জানান, বেড়িবাঁধে বড় যে খামারগুলো রয়েছে, অনলাইনে তাদের পশুগুলো আগেভাগেই বিক্রি হয়ে গেছে। গাবতলী হাট থেকে দেখতে শুনতে ভালো বড় গরুগুলো কিনে তাদের খামারে তুলছেন। নিজেদের খামারে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে বড় করা পশুগুলো বেশি দামে বিক্রি করে দিচ্ছে। তার টার্গেট ওদের কাছে বড় গরু দুটি বিক্রি করা।

পশু কিনে বাসাবাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য রঙবেরঙের দড়ি ও মালা কেনারও কয়েকটি দোকান রয়েছে গাবতলী পশুর হাটে। বিক্রেতারা দড়ি-মালা নিয়ে বসে আছেন। কিন্তু বিক্রিবাট্টা নেই। দড়ি ও মালা বিক্রেতা মালেক মোল্লা জানান, গতকাল পর্যন্ত তিনি কোনো মালা বিক্রি করতে পারেননি। তবে দড়ি দু'একটি বিক্রি হয়েছে। সেগুলো দেখে বোঝা যায় কোরবানির পশু নেওয়ার জন্য কেনেনি। তারা পেশাদার মাংস ব্যবসায়ী। সেই দড়ি বিক্রিও স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক কম।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের আগের এই সময়ে পঞ্চগড়, দিনাজপুর, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে ট্রাকে গরু নামত গাবতলীর হাটে। সেই ট্রাকেরও দেখা নেই। হাটের পাশেই কয়েকটি ট্রাক অবশ্য দেখা গেল। ট্রাকচালক সাজিদুল জানান, মেহেরপুর থেকে সোহরাব ব্যাপারী কয়েকটি গরু এনেছেন। কিন্তু আর কেউ তো কিছু বলছে না।

হাট-সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, হাটের এই অবস্থা থাকবে না। কয়েক দিনের মধ্যেই হাটগুলোতে পশুর সমাহার বাড়বে। এবার হাটগুলোয় পশু আমদানি না হওয়ার পেছনে একটি বড় কারণ ছিল কোথায় হাট বসবে আর বসবে না সেটা চূড়ান্ত হতে সময় লেগেছে। যে কারণে ফড়িয়া ও খামারিরাও সিদ্ধান্তহীনতায় ছিলেন। দু'দিন আগে সেটা চূড়ান্ত হয়েছে। হাটের ইজারাদাররা হাট বসানোর কার্যাদেশও পেয়ে গেছেন। এখন হাটগুলো জমে উঠবে। কিন্তু বিগত বছরগুলোর মতো হবে না। সার্বিকভাবে এবার হাটের ইজারাদার, ফড়িয়া, খামারি, ক্রেতা-বিক্রেতাদের মুখে আগের মতো হাসি থাকবে না। কারণ মহামারি করোনা।

আরও পড়ুন

×