সাহেদের কবজা থেকে মুক্ত হচ্ছে তিন বাড়ি

সাহাদাত হোসেন পরশ
প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২০ | ১২:০০ | আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২০ | ১৪:৪৮
বহুরূপী প্রতারণায় রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ শত শত মানুষকে সর্বস্বান্ত করেছিলেন। হাসপাতাল ও অফিস বাবদ রাজধানীর উত্তরা ও মিরপুরে তিনটি ভবন ভাড়া নিয়েছিলেন তিনি। এর মধ্যে মিরপুর-১২ নম্বর সেকশনে একটি ছয়তলা বাড়ি ভাড়া নিয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের শাখাও খোলেন। হাসপাতালের আরেকটি শাখা ছিল উত্তরায়। তবে ২০১৬ সালে মিরপুরের যে বাড়ি ভাড়া নিয়ে হাসপাতাল চালু করেছিলেন, মালিককে নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে ভাড়া খুব একটা পরিশোধ করতেন না। সব মিলিয়ে ভাড়া বাবদ সাহেদের কাছে ৪৫ লাখ টাকা পাওনা রয়েছেন ভবন মালিক ফিরোজ আলম চৌধুরী। এ ছাড়া পানি, বিদ্যুৎ এবং গ্যাস বিল বাবদ ওই ভবনের কয়েক লাখ টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে। শেষ পর্যন্ত প্রতারণায় চ্যাম্পিয়ন সাহেদের কবজায় থাকা মিরপুর ও উত্তরার তিনটি ভবন প্রকৃত মালিকরা বুঝে পাচ্ছেন। র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্রেট দু-এক সপ্তাহের মধ্যে এসব ভবন হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন।
মিরপুরে যে ভবনে রিজেন্ট হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছিল ওই ভবনের মালিক ফিরোজ আলম চৌধুরী গতকাল সমকালকে বলেন, পরিচিত এক ব্যক্তির মাধ্যমে সাহেদের সঙ্গে পরিচয়। প্রথমে তার মুখে খুব ভালো ভালো কথা বের হতো। মানবসেবা করতে হাসপাতাল তৈরি করতে আমার ভবনটি ভাড়া নেওয়ার প্রস্তাব দেন। মাসে আড়াই লাখ টাকায় চুক্তি হয়েছিল। ২০১৬ সালে তাকে হাসপাতাল তৈরির জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। তবে অনিয়মিতভাবে ভাড়া পরিশোধ করতেন। ভাড়া চাইলে আমলে নিতেন না। কাউকে তোয়াক্কা না করার একটা ভাব ছিল। বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিয়েছিলাম। থানায় জিডিও করি। উকিল নোটিশও দেওয়া হয়।
কোনো কিছুতেই কাজ হয়নি।
ফিরোজ আলম আরও বলেন, পানির বিল বাবদ আট লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। ভবনটি সিলগালা থাকায় বিদ্যুতের মিটার চেক করা সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যুৎ বিলও কয়েক লাখ টাকা বাকি পড়েছে হয়তো। ভবনটি বুঝে পেতে ম্যাজিস্ট্রেট একটি আবেদন করতে বলেছেন। আমরা সেটা করেছি। আপাতত সাহেদ চক্র থেকে ভবনটি বুঝে পাচ্ছি, সেটাই বড় সুসংবাদ। তবে এত বকেয়া পরিশোধ করে কীভাবে আবার ভবনে পানি, গ্যাস ও বিদ্যুতের লাইন সচল করব, সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি। বাজারদর হিসাবে আমার ভবনের ভাড়া নূ্যনতম ১০ লাখ টাকা ছিল। কেউ হাসপাতাল করে মানুষের সেবা করবে- সেটা চিন্তা করে কম টাকায় সাহেদকে ভাড়া দিয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হলো।
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম সমকালকে বলেন, মূলত উত্তরা ও মিরপুরের দুটি বাড়িতে হাসপাতাল চালাত সাহেদ। উত্তরার আরেকটি ভবনে তার অফিস ছিল। তিনটি ভবনই মালিকের কাছে হস্তান্তর করা হবে। দীর্ঘদিন ঠিকমতো ভাড়া না পাওয়ায় বাড়ির মালিকরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত। এ ছাড়া এসব ভবনের নিরাপত্তারক্ষীরা মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না। সেখানে একটা অমানবিক বিষয় রয়েছে।
সারওয়ার আলম আরও বলেন, রিজেন্ট হাসপাতাল নির্মাণকালে উত্তরার ভবনটি ভাড়া নেওয়ার সময় সাহেদে নিজেকে সাবেক মেজর বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। ১৪ লং কোর্সের বলে জানান সাহেদ। ওই বাড়িটির মালিক কানাডা প্রবাসী। তার এক আত্মীয় ভাড়ার বিষয়টি দেখভাল করে থাকেন। পরে তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, সত্যিকার অর্থে সাহেদ সাবেক মেজর নন। এরপর তাকে ভাড়াটিয়া হিসেবে আর রাখা হবে না- এটা জানানো হলে অনেক অনুনয়-বিনয় করে ওই বাড়িতে হাসপাতালের কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন সাহেদ।
উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি তপন চন্দ্র সাহা সমকালকে বলেন, এখন পর্যন্ত উত্তরা পশ্চিম থানায় সাহেদের বিরুদ্ধে ১২টি মামলা হয়েছে। তার মধ্যে ১১টি মামলার তদন্তভার চলে গেছে সিআইডির কাছে। একটি মামলার তদন্ত র্যাবের কাছে। অন্য একটি মামলার তদন্ত করছে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ। থানা পুলিশ যে মামলাটির তদন্ত করছে, সেটি হলো ভুয়া করোনার রিপোর্ট সরবরাহ করে মেট্রোরেল কর্মীদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়ার ঘটনা।
গত ৭ জুলাই রাজধানীর উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালান র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ভ্রাম্যমাণ আদালত। হাসপাতাল থেকে ভুয়া করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় র্যাব বাদী হয়ে সাহেদসহ ১৭ জনের নামে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করে। মামলার ৯ দিনের মাথায় ১৫ জুলাই সাহেদকে সাতক্ষীরা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরদিন ১৬ জুলাই সাহেদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সাহেদকে নিয়ে ১৮ জুলাই উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি পিস্তল ও মাদক উব্দার করে। ৩০ জুলাই সাহেদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ১৯ আগস্ট অভিযোগপত্র আমলে নেন আদালত। গত ২৮ সেপ্টেম্বর অস্ত্র মামলায় সাহেদের বিরুদ্ধে প্রথম কোনো মামলার রায় হয়। এতে তাকে যাবজ্জীবন কারাদ দেন আদালত।
৯১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে চট্টগ্রামের একটি প্রতারণার মামলায় সাহেদকে বর্তমানে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। নগরীর ডাবলমুরিং থানার এই মামলায় রোববার সাহেদকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছিল পুলিশ।
- বিষয় :
- সাহেদ
- রিজেন্ট গ্রুপ
- রাজধানী