বিমানবন্দর রেলস্টেশন ঘিরে সক্রিয় চক্র, হয়রানির শিকার যাত্রীরা

লেভেলক্রসিং পোস্টে নির্ধারিত কর্মীদের পরিবর্তে দায়িত্ব পালন করছেন হকার ও ভাসমান লোকেরা- সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ০৩:২১ | আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ০৩:৫২
রাজধানীর বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের আশকোনা লেভেলক্রসিং পোস্টে নির্ধারিত কর্মীদের পরিবর্তে এখন দায়িত্ব পালন করছে হকার ও ভাসমান লোকেরা। এই লেভেলক্রসিংয়ে চারটি পোস্টে ১২জন কর্মী পালাক্রমে দায়িত্ব পালনের কথা; কিন্ত সংশ্লিষ্ট স্টেশনে কর্মরত কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় তা শুধু যেন কাগজ কলমেই।
এমন পরিস্থিতিতে মারাক্তক ঝুঁকি নিয়ে বিমানবন্দর লেভেলক্রসিং দিয়ে চলাচল করেন হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগামী বিভিন্ন বিমান যাত্রী, কর্মী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ। এতে যে কোনও সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
সোমবার সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, রেলের কর্মীদের পরিবর্তে বিমানবন্দর স্টেশন এলাকার লেভেলক্রসিং পোস্টে দায়িত্ব পালন করছে কয়েকজন হকার। শুধু তাই নয় লেভেলক্রসিং ও তার আশপাশ এলাকা জুড়ে বসেছে শতাধিক হকারের দোকান। পাশাপাশি শতশত ব্যাটারিচালিত যান ইজিবাইক অবস্থান নিয়ে থাকছেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত স্টেশন ও তার আশপাশ এলাকায় হকার ও ইজিবাইকের ভীড় লেগেই থাকে। এতে চলাচলে চরম ভোগান্তির শিকার হন বিমানবন্দরগামী বিমান যাত্রী, কর্মীসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন। এ ছাড়া বিমানবন্দর স্টেশন এলাকায় সক্রিয় একটি চক্রের কবলে পড়ে ছিনতাই ও পকেটমারের শিকার হন বিভিন্ন আন্তঃনগর যাত্রী। চক্রটির মাধ্যমে এ রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় জমে ওঠে মাদক কেনা-বেচার আসর।
চট্রগ্রাম, সিলেট ও রংপুর থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর ট্রেনের কয়েকজন যাত্রী জানান, বিমানবন্দর স্টেশনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীরা শুধু যাত্রীদের টিকিট দেখা নিয়ে ব্যস্ত। কোনও যাত্রীর কাছে টিকিট না থাকলে ভয়ভীতি দেখিয়ে কৌশলে তারা হাতিয়ে নেন মোটা অঙ্কের টাকা। অথচ স্টেশন এলাকায় হকারসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে কোনও ভূমিকা তাদের নেই।
এ ব্যপারে বিমানবন্দর রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার মো. হালিমুজ্জামান সমকালকে বলেন, বিমানবন্দর স্টেশনের আশকোনা লেভেলক্রসিংয়ের চারটি পোস্টে মোট ১২ জন রেলওয়ের কর্মী রয়েছেন।
তিনি বলেন, এসব কর্মীর সার্বক্ষণিক পালাক্রমে দায়িত্ব পালনের কথা। কিন্ত কর্মীদের পরিবর্তে লেভেলক্রসিং এলাকায় হকারদের দায়িত্ব পালন বিষয়টি বিভিন্ন ট্রেন যাত্রীদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এ বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্টেশন মাস্টার হালিমুজ্জামান আরও জানান, বিমানবন্দর স্টেশন এলাকায় ছিনতাই, পকেটমার, গাজা, মদসহ হকারদের প্রতিরোধ করার দায়িত্ব হচ্ছে জিআরপি থানার নিয়ন্ত্রণাধীন বিমানবন্দর পুলিশ ফাঁড়ি পুলিশের। এ ছাড়া রেলওয়ের সম্পদ ও বিভিন্ন মালামাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব হচ্ছে রেলওয়ের নিরাপত্তা (আরএনবি) বাহিনীর।
এ ব্যপারে বিমানবন্দর স্টেশনে কর্মরত (আরএনবি) নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান মো. ফিরোজ আহমেদ সমকালকে বলেন, বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেন যাত্রীদের টিকিট দেখার নামে কৌশলে অর্থ আদায় বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বিমানবন্দর স্টেশনে নিরাপত্তা কর্মীদের পাশাপাশি রেলওয়ের টিটিক কালেক্টর (টিটি) বাহিনী রয়েছে। তারাই মূলত জরিমানা আদায় করেন যাত্রীদের কাছ থেকে।
বিমানবন্দর জিআরপি পুলিশের এসআই মো. আলী আকবর সমকালকে বলেন, কয়েকদিন হলো যোগদান করেছি। বিমানবন্দর স্টেশনে যেসব অনিয়ম দুর্নীতি রয়েছে তা অচিরেই সমাধান করার চেষ্ট চলছে।
তিনি আরও জানান, স্টেশন মাস্টারের নিয়ন্ত্রণে লেভেলক্রসিং পোস্টে দায়িত্ব পালন করেন কর্মীরা। স্টেশন এলাকায় হকার, মাদক, পকেটমার, ছিনতাইসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত চক্রের বিরুদ্ধে জিআরপি পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
- বিষয় :
- বিমানবন্দর
- রেলওয়ে ক্রসিং
- স্টেশন