ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

নাগরিক প্রতিবাদ সভায় বিশিষ্টজন

চলমান সাম্প্রদায়িক হামলা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়

চলমান সাম্প্রদায়িক হামলা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়

আলোচনা সভায় বক্তারা। ছবি: সমকাল

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২১ | ১০:৪৫ | আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২১ | ১০:৪৫

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলমান সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এ ধরনের ঘটনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আন্দোলন এবং দেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপনের চেতনাবিরুদ্ধ। 

বৃহস্পতিবার সিটিজেন প্ল্যাটফর্ম ফর এসডিজি'স, বাংলাদেশ আয়োজিত সভায় এ কথা বলেছেন দেশের বিশিষ্টজন। মানবাধিকার কর্মী হামিদা হোসেনের সভাপতিত্বে সিরডাপ মিলনায়তনে সশরীরে উপস্থিত থেকে এ প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, রাশেদা কে চৌধুরী, ড. বদিউল আলম মজুমদার, খুশী কবির, রিজওয়ানা হাসান, শামসুল হুদা, নির্মল রোজারিও, আলী ইমাম মজুমদার প্রমুখ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নেন ড. শাহ্‌দীন মালিক এবং জাতীয় পার্টির এমপি ফখরুল ইমাম।

ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পরিস্থিতি যে এতটা ভয়াবহ, সেটি আমরা অনুধাবন করতে পারিনি। যারা অপরাধ করেছে, তাদের বিচার করতে হবে। প্রশাসনিক ব্যর্থতার তদন্ত হওয়া দরকার। এটি করার জন্য জনমত সৃষ্টি করতে হবে। আমরা জনমত সৃষ্টিরই কাজ করছি। রাষ্ট্রের দায়িত্ব নাগরিকের নিরাপত্তা দেওয়া। সেই নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে না।

অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সন্ত্রাস দমন অনেকটা এগিয়ে গেছে। আমার ধারণা ছিল, বাংলাদেশে এ রকম ঘটনা আর ঘটবে না। কিন্তু আমি খুবই বিব্রত। এ রকম সহিংসতা বাংলাদেশে চলতে পারে না। সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে সবাই সমান। সংখ্যালঘু শব্দটি বাদ দিতে হবে।

সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহ্‌দীন মালিক বলেন, কিছু হলেই আমরা বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাই। কিন্তু বিচার বিভাগীয় তদন্ত বলে আইনে কিছু নেই। এটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা। মন্দিরে সহিংসতার ঘটনায় যতগুলো মামলা হয়েছে, ৯৯ শতাংশ গ্যারান্টি দিচ্ছে কোনো মামলারই বিচার হবে না। কারণ একটি ঘটনায় ৩০০ আসামি করা হয়েছে। একটি ঘটনায় ৩০০ লোককে আসামি করে তদন্ত করা, তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে দোষ প্রমাণ করা আইনি ব্যবস্থায় সামর্থ্যের বাইরে। আমাদের পুলিশ কয়েক বছর ধরে গ্রেপ্তার-বাণিজ্য করছে। এখন রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, '৭৫-পরবর্তী সময়ে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোগত পরিবর্তন, রাজনীতিতে ধর্মীয় অপশক্তির সঙ্গে মীমাংসা ও প্রশ্রয় এবং সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্ম ব্যবহারের কারণে আজ এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা অভিযোগ করছেন, আমরা পূজা করতে যাবো- পুলিশ চাচ্ছি, পুলিশ পাচ্ছি না। অবাক হয়ে যাচ্ছি, পূজা করতে গেলেও পুলিশ লাগছে। ঈদ করার সময়ও কি আমাদের পুলিশ দেবে? ঈদের জামাতের পাশে পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকবে? এটা তো একটা উৎসব, প্রাণের দাবি। সেখানে পুলিশ দিয়ে করতে হবে? আমরা হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার কথা বলছি; কিন্তু আদিবাসীদের ওপর হামলা কারা করছে? আমরা নাম বলতে পারব না, সাহস নেই। তাদের কাছে আবার আমরা হিন্দুদের নিরাপত্তা আশা করছি। যারা এক জায়গায় গিয়ে ভক্ষক হয়, অন্য জায়গায় গিয়ে রক্ষক হবে?

নাগরিক জোট সিএসও অ্যালায়েন্সের আহ্বায়ক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, যে সহিংসতা ঘটে গেছে, তার জন্য ভুক্তভোগীদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। এ রকম ঘটনা হওয়া উচিত ছিল না। এটা আমরা কোনো দিন আশঙ্কাও করিনি। নানা অসংস্কৃতির কথা আমরা বলছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপসংস্কৃতিও কিন্তু আমাদের কুরে খাচ্ছে। যারা বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে, তাদের বিষয়ে রাষ্ট্র কী করছে সেটি জানতে চাই।

আরও পড়ুন

×