মুরাদনগরে নিপীড়ন
সেই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা ৫ দিনেও হয়নি
মোবাইল ফোন যাচ্ছে ফরেনসিকে

ফাইল ছবি
সমকাল প্রতিবেদক, ঢাকা, কুমিল্লা ও মুরাদনগর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৫ | ২২:৫১ | আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৫ | ০০:৪৪
কুমিল্লার মুরাদনগরে ধর্ষণের শিকার সেই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা পাঁচ দিনেও হয়নি। বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনার পর শুক্রবার মুরাদনগর থানায় মামলা করেন তিনি। এরপর পুলিশ ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পুলিশ বলছে, ভুক্তভোগী মত বদলানোয় তার পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
ওই নারীর এক মহিলা আত্মীয় মুঠোফোনে সমকালকে বলেছেন ‘আটক ফজর আলীকে যেভাবে নির্যাতন করা হয়, এতে তিনি মারা যেতে পারেন বলে ওই নারী ও তার পরিবারকে ভয় দেখানো হয়েছে। এরপর তিনি ডাক্তারি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন এবং এখন মামলা নিয়েও অনীহার কথা বলছেন। তবে পুলিশ চাইলে ওই নারী ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে চান বলেও তার আত্মীয় জানান।
এদিকে নিপীড়নের দৃশ্য ধারণের সঙ্গে জড়িত আরও কয়েকজনকে খুঁজছে পুলিশ। এখন পর্যন্ত এই ঘটনার মূল অভিযুক্ত ফজর আলীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিপীড়নের পর ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেপ্তারদের মোবাইল ফোন পাঠানো হচ্ছে ফরেনসিক পরীক্ষায়। তবে প্রথমে কার আইডি থেকে এটি ছড়ানো হয়েছে সেটি সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়নি।
কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মিজানুর রহমান সমকালকে বলেন, মামলার শুনানির সময় ধর্ষণ করা হয়েছে কিনা এটা আদালতে প্রমাণ করতে হয়। শারীরিক পরীক্ষার সনদপত্র না পাওয়া গেলে বাদীর ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার আশঙ্কা থাকে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট শিল্পী সাহা সোমবার রাতে সমকালকে বলেন, ‘ধর্ষণের মামলার ক্ষেত্রে ভিকটিমকে ডাক্তারি পরীক্ষার বিষয়টির গুরুত্ব বুঝিয়ে ঘটনার পরদিনই পরীক্ষা করানোর দরকার ছিল। এখন দেরিতে হলেও ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষাসহ তার বস্ত্রের ডিএনএ নমুনা দেওয়া জরুরি। না হলে মামলার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ক্রটি থেকে যাবে।’
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মুরাদনগর সার্কেল) একেএম কামরুজ্জামান বলেন, ওই নারীকে ট্রমা কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরত আনতে সবার সহযোগিতা জরুরি। নির্যাতন ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যারা জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আমরা কথা বলছি।
মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান বলেন, ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে চেষ্টা করেছি। তবে তিনি রাজি না হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শারমীন সুলতানা বলেন, ‘আইনেই বলা আছে ভিকটিম নারী যদি ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে না চান তাহলে তা করা যাবে না। এখানে জোর করে ডাক্তারি পরীক্ষা আইনের বিধানে নেই।’
পুলিশ জানায়, ধর্ষণের ঘটনায় একমাত্র আসামি ফজর আলী পুলিশ পাহারায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ভিডিও ভাইরালকাণ্ডে গ্রেপ্তার ৪ আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করা হবে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলছেন, ঘটনার রাতে ভুক্তভোগীর ঘরে ঢোকার পরই নিপীড়নের জড়িতরা তাদের মোবাইল ফোনের ক্যামেরা সচল করে। ওই নারী ও ফজর আলীকে মারধর করে তার ভিডিও ধারণ করে তারা। এই ঘটনায় ফজরের ভাই শাহ পরান ছাড়াও নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতা সুমন জড়িত ছিল। এছাড়া রমজান, অনিক, আরিফসহ ১৫-২০ জনের সংশ্লিষ্টতা মিলেছে। বিবস্ত্র করে নির্যাতনের সময় ওই নারী বাঁচার জন্য আহাজারি করতে থাকেন। এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী চিৎকার করলে তাঁর মুখ চেপে ধরা হয়।
স্থানীয়দের কয়েকজনের ভাষ্য, ফজর আলী ও তার ভাইয়ের সুসম্পর্ক ছিল না। ঘটনার রাতে ওই নারীর বাড়িতে ভাই প্রবেশ করেন এটা দেখার পর অন্যদের ডেকে আনেন শাহ পরান। যাদের ডেকে আনা হয়েছিল তারাই ওই নারীকে নির্যাতন ও ভিডিও ধারণ করেছে।
সোমবার ভুক্তভোগী নারী সমকালকে জানান, তার পরিবার ফজর আলীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ দেয়। এই সূত্র ধরে তার সঙ্গে মাঝে মাঝে কথা হতো। তবে এটি পছন্দ করতেন না শাহ পরান। কয়েক দিন আগে তিনি তাদের বাড়িতে আসেন। এরপর তার মোবাইল ফোন দেখতে চান। তবে দিতে রাজি না হওয়ায় সেট কেড়ে নিয়ে মাটিতে আছড়ে ফেলেন শাহ পরান। এই ঘটনায় পর ফজর আলীর কাছে তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে বিচার দেন তিনি। এরপর শাহ পরানকে মারধর করেন ফজর। এর প্রতিশোধ নিতে ফজর আলী ও ভুক্তভোগীর ওপর নিপীড়ন চালানো হয়।