ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

প্রত্যাবর্তনেও সেরা, ফেরার ম্যাচেও সেরা বোলিং তাসকিনের

প্রত্যাবর্তনেও সেরা, ফেরার ম্যাচেও সেরা বোলিং তাসকিনের

তাসকিন আহমেদ

সেকান্দার আলী, কলম্বো থেকে

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৫ | ১১:৫৩ | আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৫ | ১১:৫৪

বাংলাদেশের পেস বোলিং নিয়ে অহংকারের যে জায়গা তৈরি হয়েছিল তা ভেঙে গিয়েছিল আরব আমিরাত ও পাকিস্তানে টি২০ সিরিজ হার। উভয় সিরিজে বোলিং ইউনিটে একটা বড় শূন্যতা চোখে পড়ে। সেই শূন্যতা ছিল পেসার তাসকিন আহমেদের না থাকা। গোড়ালির চোটের কারণে ৩০ বছর বয়সী এ পেসারের অনুপস্থিতি নির্বাচক, টিম ম্যানেজমেন্টের ভুল ধারণা ভাঙতে সহায়তা করে। এ কারণে নির্বাচক প্যানেল খুব করে চাচ্ছিল শ্রীলঙ্কা সফরে সাদা বলের ক্রিকেট খেলেন তাসকিন। লম্বা সময় গোড়ালির চোট পরিচর্যা করে চট্টগ্রামে প্র্যাকটিস ম্যাচে লম্বা স্পেলে বোলিং করে ফেরার মঞ্চ প্রস্তুত করেন ডান হাতি এ পেসার। ফেরার ম্যাচে মঞ্চায়ন করলেন রোমাঞ্চকর বোলিং। ১০ ওভার, দুটি মেইডেন, ৩৭টি ডট, ৪ উইকেট ও ৪.৭০ ইকোমি রাজকীয় না হলেও দুর্দান্ত বলার মতো একটি বোলিং পারফরম্যান্স। 

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচের বোলিং ইউনিটের শুরু ও শেষ ভালো হওয়ার কারণ পেস বোলিং। এই দুই সময়েই ছিলেন তাসকিন আর তানজিম হাসান সাকিব। বোলিংয়ের ওপেনিং জুটি তারা। পাওয়ার প্লে ও স্লগ বোলিংয়ের বিশ্বস্ত জুটি। যেখানে তাসকিনের ভূমিকা ছিল উজ্জীবিত করা। প্রতিপক্ষ শিবিরে প্রথম আঘাত সাকিবের হলেও টানা দুই ওভারে নিশান মাদুশঙ্কা ও কামিন্দু মেন্ডিসকে সাজঘরে ফেরত পাঠিয়ে দলকে উজ্জীতি করেন তাসকিন। তাসকিন-সাকিবের কল্যাণে ৬.১ ওভারে ২৯ রানে তিন উইকেট হারানো শ্রীলঙ্কা কিছুটা চাপে পড়ে। এই চাপ তৈরির কারিগর তাসকিন নিজের নবম ওভারে জোড়া উইকেট শিকার করে জানান দেন তিনিই পেস ইউনিটের সেরা। 
এই সেরার স্বীকৃতি বিশ্বের অনেক তারকা বোলারের কাছ থেকে পেলেও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজনের প্রশংসায় আনন্দস্রোতে ভেসেছেন তিনি। আরব আমিরাত ও পাকিস্তানের কাছে টি২০ সিরিজে বাজে হারের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সুজন বলেছিলেন, ‘বলা হচ্ছিল পেস ইউনিটে অনেক বিকল্প আছে। রিজার্ভ বেঞ্চও শক্তিশালী হয়ে গেছে। বাস্তবতা হলো তাসকিনের থাকা না থাকা ব্যাপক প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তাসকিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বোলার। ও না খেললে পেস বোলিং ইউনিট হিসেবে ভালো করতে পারে না।’ সুজনের কথার প্রমাণ গতকালই পাওয়া গেছে কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে। 

গোড়ালির হাড় বেড়ে যাওয়া অনেক দিন ধরে ভোগাচ্ছে তাসকিনকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের পর সেভাবে ম্যাচ খেলতে পারেননি। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ খেলতে রাজি হননি গোড়ালির ব্যথা বেড়ে যাওয়ায়। ব্যথায় ভুগতে থাকা টাইগার এ পেসারকে শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। ইংল্যান্ডের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দেওয়া পুনর্বাসন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে একটু একটু করে নিজেকে খেলার জন্য প্রস্তুত করেছেন তিনি। এই কলম্বোতেও ফিজিও, ট্রেনার, নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্টের সামনে পুরো লেন্থে জোরে বোলিং করে একাদশে থাকা নিশ্চিত করেন মঙ্গলবার। 

গতকাল ম্যাচে পুরো ছন্দে বোলিং করতে না পারলেও মুস্তাফিজুর রহমান বা বাঁ হাতি স্পিনার তানভীর ইসলামের মতো হাল ছাড়েননি তিনি। লাইন-লেন্থ ঠিক রেখে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করা দলের সফল ও সবচেয়ে কার্যকর ছিলেন। ফিল্ডিংয়ে কিছুটা ছাড় দিয়ে, বোলিং রানআপে কিছুটা গতি কমিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে বোলিং করতে পারাও বুদ্ধিমত্তা। ছয়-সাত বছর যাকে স্যালাইন বোলার হিসেবে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হতো, কালের পরিক্রমায় চেষ্টা ও পরিশ্রম দিয়ে তিনি নিজেকে গড়ে তোলেন দেশসেরা পেসার হিসেবে। প্রচণ্ড নিবেদন, গভীর একাগ্রতা ও লক্ষ্যে অবিচল না থাকলে গোড়ালির জড়তা নিয়ে এভাবে প্রত্যাবর্তন করা সম্ভব হতো না তাসকিনের। 

আরও পড়ুন

×