ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

গরমকে পুঁজি করে নকল স্যালাইনের কারখানা, চলছিল এক যুগ ধরে

অষ্টম শ্রেণি পাস করে স্যালাইন তৈরির কেমিস্ট

ছবি-সংগৃহীত

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ মে ২০২৪ | ১২:২০

এপ্রিলের শুরু থেকে দেশে কখনও মৃদু এবং কখনও তীব্র তাপপ্রবাহ চলতে থাকে। গরমে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। রাস্তাঘাটে মানবসেবায় এগিয়ে আসেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি। তারা বিনামূল্যে রিকশাচালকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে খাবার স্যালাইনসহ শরবত বিতরণ করেন। চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সুযোগে নকল স্যালাইন তৈরির চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। লবণ ও চিনির মিশ্রণে নকল স্যালাইন তৈরি ও প্যাকেটজাত করে তারা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করতে থাকে। এ রকম একটি চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। জব্দ করা হয়েছে ২ হাজার ৮০০ প্যাকেট নকল ওরস্যালাইন ও ১ হাজার ৬৮০ প্যাকেট টেস্টি স্যালাইন।

ডিবি জানিয়েছে, গ্রেপ্তার সামসুল আলম, সজীব মিয়া ও মো. হৃদয়কে দু’দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাকরাইল থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। কেরানীগঞ্জে কারখানায় এসব নকল স্যালাইন তৈরি করে আসছিল তারা। এ কারখানাটির মালিক সাখাওয়াত হোসেন পলাতক। গ্রেপ্তার সজীব ও হৃদয় স্যালাইন তৈরির কেমিস্ট হিসেবে ওই কারখানায় চাকরি করে। অবশ্য কেমিস্ট হওয়ার জন্য তাদের কোনো পড়ালেখা নেই। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে তারা কেমিস্ট বনে গেছে। বেতন ১২ হাজার টাকা করে। দুই বছর ধরে তারা সেখানে চাকরি করছে। গ্রেপ্তার সামসুল আলম কারখানার ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিল। তার বেতন ১৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া সেখানে আরও সাত-আটজন শ্রমিক রয়েছে। 

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ শনিবার মিন্টো রোডে তাঁর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, তীব্র গরমে অসাধু চক্র নকল ওরস্যালাইনের কারখানা স্থাপন করে খাবার স্যালাইন তৈরি ও প্যাকেটজাত করছিল। কারখানাতেই তারা এসএমসি ওরস্যালাইনের আদলে নকল প্যাকেট তৈরি করে। এর পর বাজার থেকে লবণ ও চিনি কিনে নিয়ে নকল ওরস্যালাইন বানায়। প্যাকেট দেখে বোঝার উপায় নেই যে এগুলো নকল। তিনি বলেন, ১২ বছর ধরে হুবহু এসএমসি স্যালাইনের মতো দেখতে নকল স্যালাইন তৈরি করে আসছে চক্রটি। এতদিন ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও সম্প্রতি গ্রেপ্তার করা হয় তিনজনকে। চক্রের মূল হোতা পলাতক। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। 

ডিবিপ্রধান বলেন, তাপপ্রবাহ শুরু হওয়ায় অনেকে রাস্তায় পানি ও স্যালাইন বিতরণ করে মানুষের সেবা করেন। গরমকে পুঁজি করে চক্রটি নকল স্যালাইন বাজারজাত করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। অনেকেই তাদের কাছ থেকে লাখ লাখ স্যালাইন কিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করেছেন। নকল ওরস্যালাইন খাওয়ার ফলে মানুষের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিডনি ছাড়াও লিভারের ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে। নকল এ স্যালাইন চক্রটি কম দামে পাইকারি বিক্রি করে। এতে খুচরা বিক্রেতারা বেশি লাভবান হন। এ কারণে তারাও এ স্যালাইন ক্রয় করেন। 

বৃহস্পতিবার ডিবির মতিঝিল বিভাগ রমনা থানাধীন কাকরাইল সুপারমার্কেটের সামনে থেকে চক্রের ওই তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যে কেরানীগঞ্জের নকল স্যালাইন তৈরির কারখানায় অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে নকল স্যালাইন জব্দ করা হয়। ডিবির একজন কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তার তিনজনকে দু’দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আজ রিমান্ড শেষ হওয়ায় তাদের আদালতে হাজির করা হবে।
 

আরও পড়ুন

×