ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

চুরির মামলা তদন্তে মিলল অস্ত্র কারবারের তথ্য

চুরির মামলা তদন্তে মিলল অস্ত্র কারবারের তথ্য

প্রতীকী ছবি

আব্দুল হামিদ

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৪ | ২১:০৭

কেরানীগঞ্জে গত বছর একটি বাসায় চুরির ঘটনার মামলার তদন্ত করতে গিয়ে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে এসেছে। চোরেরা সেই বাসা থেকে অজান্তেই নিয়ে এসেছিল সাতটি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। পরে এসব অস্ত্র চোরেরা ভাগবাটোয়ারা করে নেয়। এই অস্ত্রের একটি ব্যবহার করে ঘটেছে খুনের ঘটনাও। পুলিশ এসব অস্ত্রের মধ্যে তিনটি উদ্ধার করলেও, বাকি চারটির এখনও হদিস নেই। বর্তমানে পুলিশ জোর দিয়ে এই চার অস্ত্রের সন্ধানে নেমেছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবৈধ অস্ত্রগুলো ছিল মো. শাহীনের বাসায়। সীমান্ত এলাকা থেকে এসব অস্ত্র সংগ্রহ করে ঢাকা ও আশপাশে বিক্রি এবং ভাড়া দিত শাহীন। গত বছর তার একটি অস্ত্রে কামরাঙ্গীরচর এলাকায় হয় মো. রমজান নামে এক মাদক ব্যবসায়ী। খুন হয় তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, চুরি হওয়া চার অবৈধ অস্ত্র বহনকারীর খোঁজ মিলেছে। তাদের মধ্যে বর্তমানে একজন কারাগারে রয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তার নাম বলা যাচ্ছে না। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আদালতে আবেদন করা হবে। ওই ব্যক্তির কাছে দুটি অবৈধ অস্ত্র আছে বলে খবর রয়েছে। বাকি অস্ত্র দুটির বহনকারী দু'জন দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। এর মধ্যে একজন সৌদি আরব ও অন্যজন রয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশে। তারা অস্ত্রগুলো ভাড়ায় চালাচ্ছে বলেও তথ্য রয়েছে। তাই বড় দুর্ঘটনার আগেই অস্ত্রগুলো জব্দের চেষ্টা চলছে।

জানা গেছে, পুরান ঢাকা এলাকায় মামুন গ্রুপ নামে একটি চোর চক্র সক্রিয়। এই গ্রুপের হোতা মো. মামুন চুরির একটি মামলায় বর্তমানে কারাগারে আছে। কিন্তু মামুন কারাগারে থেকেই তার চক্র পরিচালনা করছে। এই চক্র গত কয়েক বছরে ১৫০ থেকে ২০০ চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে অর্ধশতবার। মামুনের নামে রয়েছে ২২টি মামলা। তবে এই চক্রে এবারই নতুন যুক্ত হয়েছে মামুনের মা হাসিনা বেগম ও স্বর্ণ ব্যবসায়ী বরুণ।

তারা চোরাই মালের ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত। মামুন গ্রুপের রাজীব হোসেন রানা ও তার দুই সহযোগী গত বছর কেরানীগঞ্জে অস্ত্র ব্যবসায়ী শাহীনের বাসায় চুরির ঘটনা ঘটায়। অজান্তে সেই বাসা থেকে নিয়ে আসা একটি ব্যাগের মধ্যে শাহীনের সাতটি অস্ত্র পায় তারা। পরে চুরির অস্ত্র রাজীব একটি ও তার দুই সহযোগী তিনটি করে নেয়। তাদের মধ্যে এক সহযোগী মাদকের বিনিময়ে তিনটি অস্ত্র বিক্রি করে দেয়। এর মধ্যে একটি অস্ত্র কেনে সন্ত্রাসী পিচ্চি মনির। সেই অস্ত্র দিয়েই কামরাঙ্গীরচরে খুন হয় মাদক ব্যবসায়ী রমজান। পুলিশ এরই মধ্যে সেই অস্ত্রসহ পিচ্চি মনিরকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ছাড়া রাজীবের বাসায় অভিযান চালিয়ে একটি ও সৌদি আরবে পালানো তার সহযোগীর বাড়ির ছাদ থেকে বাকি দুটি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে।

ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মাহবুব-উজ-জামান জানান, রাজধানীর চকবাজারের পূর্ব ইসলামবাগ এলাকার একটি বাসায় গত ১১ এপ্রিল চুরির ঘটনায় মামলা হয়েছিল। সেই মামলার তদন্তে নেমে মূলত এ চোর ও অবৈধ অস্ত্র কারবারিদের সন্ধান পাওয়া যায়। প্রথমে চুরির ঘটনার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে চকবাজারের একটি বাসা থেকে গত ২২ এপ্রিল রাজীবকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় সাতটি অস্ত্র চুরির ঘটনা সামনে আসে। তদন্ত শুরু হয় রাজীব কেরানীগঞ্জে যে বাসায় চুরি করেছিল, সে বাসাকে ঘিরে। এত বড় চুরি হওয়ার পরও শাহীন থানায় অভিযোগ না করায় সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়।

আরও পড়ুন

×