অভিভাবকের করণীয়
ছোটদের ডেঙ্গু জ্বর হলে কী করবেন

কোলাজ
ডা. আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার
প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৫ | ০০:৩৬
ডেঙ্গু জ্বর একটি মশাবাহিত রোগ; যা এডিস মশা দ্বারা ছড়ায়। ছোটদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গু জ্বর অনেক সময় জটিল আকার ধারণ করতে পারে। এ কারণে অভিভাবকদের সতর্ক থাকা ও সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
যেসব লক্ষণ দেখা দিয়ে থাকে
lসাধারণভাবে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত শিশুদের লক্ষণ বড়দের মতোই হয়ে থাকে। ডেঙ্গু শক সিনড্রোম এবং ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের মতো জটিলতাগুলো শিশুদের ক্ষেত্রে দ্রুত এবং ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। সে কারণে শিশু ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হয়।
lশিশুর শরীরে মাঝারি বা তীব্র মাত্রার জ্বর এক থেকে পাঁচ দিন থাকে। জ্বরের সঙ্গে দেখা দেয় ক্ষুধামান্দ্য ও বমি বমি ভাব। অনেক সময় শরীরে র্যাশ দেখা দিয়ে থাকে। মাথা বা শরীরের ব্যথায় শিশু অযথা কান্নাকাটি বা বিরক্ত করতে থাকে। কখনও কখনও বমি, পাতলা পায়খানা, পেটে ব্যথা, এমনকি খিঁচুনিও হতে পারে।
lঅনেক সময় সিভিয়ার ডেঙ্গু হলে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় যেমন মাড়ি, নাক, চোখের কনজাংটিভায় রক্তক্ষরণের চিহ্ন দেখা যায়।
lপানি আসার কারণে অনেক সময় পেট ফুলে যেতে পারে, ফুসফুসে পানি জমে শিশুর কাশি বা শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
lকিশোরী মেয়েদের মাসিকের সময় বেশি রক্তপাত হতে পারে।
lজ্বর কমে যাওয়ার দু-তিন দিন পর রোগটি প্রশমিত না হয়ে উল্টো শরীরে শক বা চেতনাহীন অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। শুরুতে শিশুর নাড়ির স্পন্দন দ্রুত বাড়তে থাকে। একসময় রক্তচাপ কমে যায়, নাড়ির স্পন্দন তখন অনুভূত হয় না। শিশু শকে চলে যায়। এই শক প্রতিহত করতে না পারলে তা থেকে প্রাণহানির কারণ হতে পারে। এজন্য শিশু বা বড় যে কোনো রোগীর জ্বর কমে গেলেও নাড়ির স্পন্দন এবং রক্তচাপ ঠিক আছে কিনা সেদিকে নজর রাখতে হবে।
মা-বাবা বা অভিভাবকের করণীয়
lডেঙ্গু রোগাক্রান্ত শিশুর শরীরে তীব্র জ্বর দেখা দেয়। এজন্য নির্দিষ্ট মাত্রায় প্যারাসিটামল সেবন, স্পঞ্জিং বা হালকা গরম পানিতে শরীর মুছে দেওয়া এবং বেশি বেশি তরল খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে।
lতরল খাবার, খাওয়ার স্যালাইন, ডাবের পানি, শরবত, স্যুপ, ডালের পানি ইত্যাদি বেশি করে পান করাতে হবে।
lপ্রস্রাব যথেষ্ট ও ঠিকমতো করছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ছয় ঘণ্টার মধ্যে প্রস্রাব না হলে শিশুকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা উচিত।
lনিয়মিত নাড়ির স্পন্দন, রক্তচাপ মাপা জরুরি। শিশুর রক্তচাপ মাপার জন্য নির্দিষ্ট মাপের ব্লাডপ্রেশার কাফ ব্যবহার করতে হবে। এজন্য নিকটস্থ চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ নিন
lশিশুর জ্বরের সঙ্গে রোগসংক্রান্ত জটিলতা দেখা দেওয়ার আগেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন এবং তাঁর নির্দেশে রক্তের কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট, এনএস ওয়ান অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করাবেন। কোনো শিশুর জ্বর ৫-৬ দিন পার হয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শে ডেঙ্গুর উপস্থিতি নির্ণয়ের জন্য অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করাবেন। ডেঙ্গুর অ্যান্টিবডি ৫-৬ দিন আগে ধরা পড়ে না। এজন্য আগেভাগে অ্যান্টিবডি টেস্ট করার দরকার নেই। এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করাতে হবে।
lজ্বর কমে গেলেও, অর্থাৎ ষষ্ঠ দিন থেকে নিশ্চিন্ত না হয়ে বরং আরও নিবিড়ভাবে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
lশিশু অসুস্থ হলে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হতে পারে। তাকে পর্যাপ্ত মানসিক সমর্থন দিন এবং আশ্বস্ত করুন। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ
করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার সন্তানের মধ্যে ডেঙ্গুর কোনো লক্ষণ দেখা দিলে আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।।
যেসব শিশু আগে থেকেই অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত– যেমন কিডনি রোগ, রক্তজনিত রোগ, লিভারসংক্রান্ত জটিলতা বা বিশেষায়িত ওষুধ সেবন করছে, তাদের জ্বর আসার সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।
ডেঙ্গু হলে অভিভাবকেরা প্রথমেই রক্তের প্লাটিলেটের সংখ্যা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। এ রোগে প্লাটিলেটসংক্রান্ত জটিলতা স্বল্পসংখ্যক রোগীর ক্ষেত্রে দেখা দেয়। অধিকাংশ রোগী পানিশূন্যতা, বুক ও পেটে পানি, শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে আসে। তাদের চিকিৎসা শুধু বিশেষায়িত হাসপাতালে সম্ভব।
[অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান (পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি বিভাগ) জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা।]
- বিষয় :
- ডেঙ্গু