বাঁচি সম্প্রীতিতে জাগি ভালোবাসায়

--
প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২৩ | ০৭:৫৪
মূলত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে, এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভশক্তির বিজয়ে মা দুর্গার মর্ত্যে আবির্ভাব। ইতিহাসের সাক্ষ্য অনুযায়ী, বছরে দুবার দুর্গাপূজা হয়ে থাকে। শরতে শারদীয় দুর্গাপূজা আর বসন্তে হয় বাসন্তী পূজা। মেধামুনির আশ্রমে রাজা সুরথ ও সমাধি বৈশ্য কর্তৃক প্রথম প্রতিমার পূজাই বাসন্তী পূজা নামে অভিহিত। আর শ্রী রামচন্দ্র রাবণ বধ করে সীতা উদ্ধারের জন্য দক্ষিণায়নে শরৎকালে ১০৮টি নীল পদ্মে পূজিত হন দেবী। রামচন্দ্র দেবতাদের শয়নকালে দেবীকে নিদ্রা থেকে জাগ্রত করে পূজা করেছিলেন বলে এটি অকালবোধন নামে পরিচিত। শরৎকালে রামচন্দ্রের এই পূজাই আমাদের শারদ উৎসবের স্বীকৃতি পায়।
বাঙালি হিন্দুদের মাঝে কবে এই পূজার প্রচলন, তার তথ্যানুসন্ধানে জানা যায় যে, মোগল সম্রাট আকবরের সুবেদার রাজা কংস নারায়ণ রায় বাংলার দেওয়ান ছিলেন। তিনি পণ্ডিত রমেশ শাস্ত্রীর পরামর্শে মহাযজ্ঞ না করে দুর্গাপূজা করেছিলেন। ব্যক্তিগত পূজায় যখন সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার সীমিত হয়ে পড়ে, তখনই প্রয়োজন হয়ে পড়ে সার্বজনীন পূজা আয়োজনের। ১৭৯০ সালে হুগলী জেলায় ১২ জন বন্ধুর প্রচেষ্টায় প্রথম বারোয়ারি পূজার আয়োজন। তারপর থেকেই এই পূজা পরিণত হয় সার্বজনীন উৎসবে। কালের পরিক্রমায় আবহমান বাংলায় সব ধর্মের মানুষ সমঅধিকার নিয়ে এই বাংলায় বাস করায় শারদীয় দুর্গোৎসব শুধু হিন্দুদের একার উৎসব নয়, পরিণত হয় সার্বজনীন উৎসবে। সব ধর্মের এমন নিরাপদ আবাস ভূমি পৃথিবীর আর কোথায় অছে? প্রতিটি পূজামণ্ডপে দর্শনার্থীদের যে ভিড়, কে যে কোন ধর্মের আর কেইবা কোন বর্ণের তা বোঝাই কষ্টকর। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই যেন মিলেমিশে একাকার এই শারদীয় উৎসবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথার্থই বলেন, ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার।’ বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রভাব ছিল ২০২০ ও ২১ সালের দুই বছর আমাদের সব উৎসবে। বাঙালির জীবনে এই দু’বছর ছিল না বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখের বর্ণাঢ্য আয়োজন। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় ছিল না কোনো প্রাণের ছোঁয়া। শারদীয় দুর্গাপূজায় এই সময়ে ছিল শুধুই পূজার আনুষ্ঠানিকতা। উৎসবের ঘাটতি ছিল মনে ও প্রাণে।
নিজের জীবন, পরিবারের সদস্যদের জীবন, সর্বোপরি দেশের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কথা ভেবে করোনায় প্রথমবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রেখে শেষ হয় শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। ২০২১ সালে করোনা সংক্রমণ কম থাকায় উৎসব তার স্বাভাবিকতা ফিরে না পেলেও দীর্ঘ ১ বছর বন্দি জীবন থেকে বেরিয়ে এসে পূজার আনন্দ ভালোই কেটেছে শিশু-কিশোরদের। আসলে যে যাই বলুক না কেন, কোনো উৎসবেই আগের মতো বড়দের মন টানে না। নানাবিধ টেনশন ও ভাবনা ঘিরে রাখে তাদের। মহান স্রষ্টার অশেষ কৃপায় ও রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপে করোনা সংক্রমণকে জয় করেছে বাঙালি। এখন ২০২৩ সালে পুরোটাই আগের অবস্থায় ফিরেছে উৎসবের আমেজ। বর্ণিল অলোকসজ্জার ঝলকানি পূজামণ্ডপের চারদিকে। করোনা সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালে কমেছিল পূজামণ্ডপের সংখ্যা। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে সারাদেশে মণ্ডপের সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ৩৯৮টি। ২০২০ সালে করোনায় তা কমে দাঁড়িয়েছিল ৩০ হাজার ২২৩টিতে। ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩২ হাজার ১১৮টি। গত বছর পূজামণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে আরও ৫৯টি। সারাদেশে ২০২২ সালে ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এবছর পুজামণ্ডপের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৪০৮টি। ঢাকা মহানগরে এ বছর পূজামণ্ডপের সংখ্যা ২৪৫টি।
করোনা সংক্রমণকে জয় করে, করোনায় অর্থনৈতিক মন্দাভাব কাটিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাঙালি। মণ্ডপে মণ্ডপে দর্শনার্থী ও পূজারির উপস্থিতি এবার চোখে পড়ার মতো। সংকট উত্তরণ, উৎসবে অংশগ্রহণ, আন্দোলন-সংগ্রামে বাঙালিকে কি বিধিনিষেধের বেড়াজালে আটকে রাখা যায়? আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় নানাবিধ শঙ্কা উপেক্ষা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন। সব ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণে পূজার উৎসবে কোনো ঘাটতি ছিল না সহযোগিতা, সহানুভূতি, সৌহার্দ্য ও সৌজন্যবোধ প্রকাশে। এরই নাম বাংলাদেশ। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই বন্ধন অটুট থাক অনন্তকাল। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভশক্তির সব বিবেকবান মানুষ ঐক্যবদ্ধ থাক যুগ থেকে যুগান্তরে– শারদীয় দুর্গোৎসবে এমন প্রত্যাশা দেশবাসীর মানিক লাল ঘোষ , তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ
- বিষয় :
- দুর্গাপূজা