ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

বিয়ের পর প্রথম পূজায়

বিয়ের পর প্রথম পূজায়

বিদ্যা সিনহা মিম

প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২৩ | ১১:১৯

রাজশাহীর পদ্মাপাড়ের কোলঘেঁষা গ্রাম আমার বাঘা। জন্ম থেকে শুরু করে বেড়ে ওঠা এখানেই। আমাদের গ্রামের বেশ কয়েকটি মন্দিরে দুর্গাপূজা হতো। পূজা শুরুর অনেক আগে থেকেই পালেরা [প্রতিমাশিল্পী] খড়-মাটি দিয়ে মূর্তি গড়ার কাজ শুরু করতেন। প্রতিমা দেখার আকুল আগ্রহে তখন আর তর সইত না– স্কুল কখন ছুটি হয়। দলবেঁধে বন্ধুদের নিয়ে কতবার যে প্রতিমা দেখতে যেতাম, তার হিসাব কে রেখেছে। কখনওবা বাড়িতে এসে খড়-মাটি নিয়ে চেষ্টা করতাম প্রতিমা গড়ার। পালদের সুনিপুণ তুলির আঁচড়ে এক সময় মনে হতো মাটির মূর্তি জীবন্ত হয়ে উঠছে। প্রতিমা গড়ার সময় থেকেই শুরু হয়ে যেত পূজার আনন্দ।

মহালয়ার দিন ভোরে সুমিষ্ট কণ্ঠে চণ্ডীপাঠের আওয়াজ কানে আসতেই ঘুম ভেঙে যেত। পূজার সময় প্রতিটি বাড়িতে আত্মীয়স্বজনের আগমনে গ্রাম হতো মুখর। ষষ্ঠী থেকে নবমী– প্রতিটি মন্দিরে মাইকে পুরোহিতের চণ্ডীপাঠ, সন্ধ্যা আরতি, ঢাকের তালে ধূপারতি প্রতিযোগিতা, ধর্মীয় গান, নৃত্যানুষ্ঠান আরও কত কী! এই অনুষ্ঠান দেখার জন্য প্রতিটি মন্দিরে বহু মানুষের ভিড় জমত। নতুন জামাকাপড় পরে পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে আমরাও প্রতিটি মন্দিরে কাঁচা রাস্তা দিয়ে হেঁটেই যেতাম প্রতিমা দেখতে। কতটি প্রতিমা দেখেছি, কোন প্রতিমা কেমন হয়েছে, তা নিয়ে হতো আলোচনা। অষ্টমী-নবমীর দিন মন্দিরে প্রসাদ বিতরণ করা হতো। ঘরে ঘরে নারকেলের নাড়ু, চিড়া-মুড়ি, নকুল-বাতাসা দিয়ে আপ্যায়ন করা হতো অতিথিদের। দশমীতে কান্নাকাটির মধ্য দিয়ে হতো দেবীর বিসর্জন। সবাই মেতে উঠত বিজয়ার উৎসবে। সম্মিলন ঘটত ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের।

বিজয়া দশমীর বিকেলবেলা বাজারে বসত দশহরার মেলা। অসংখ্য মানুষের ভিড় জমত এই মেলায়। ভিড়ের মধ্যে কখনওবা হারিয়েও যেতাম। মেলা উপলক্ষে নৌকাবাইচের আয়োজন হতো। মেলা থেকে মিষ্টি আর মাছ নিয়ে যাওয়া হতো বাড়িতে। সন্ধ্যায় বড়দের প্রণাম করে আশীর্বাদ নিতাম। ছেলেবেলার পূজার সেই দিনগুলো আজও ভোলার নয়। পূজা এলেই সেই স্মৃতি মনে পড়ে যায়। শৈশব-কৈশোরের পূজায় অনেক আনন্দ হতো। নতুন পোশাক নিয়ে বাড়তি উত্তেজনা কাজ করত। বান্ধবীরা যাতে না দেখতে পায়, এ জন্য পোশাক লুকিয়ে রাখতাম। শুধু ঘুরে বেড়ানোই নয়, মনের শুদ্ধতা ও ভক্তি নিয়ে আসে পূজা। সেই সঙ্গে মায়ের হাতের রান্না তো আছেই। অনেক আগে একবার পূজার সময় নৌকায় উঠেছিলাম বেড়ানোর জন্য। অতিরিক্ত মানুষের কারণে নৌকা প্রায় ডুবুডুবু। পাড়ে ভেড়ানোর আগ পর্যন্ত আতঙ্কে ছিলাম। বেড়ানোর চেয়ে ভয়টাই বেশি কাজ করেছিল সেদিন। প্রতি বছর পূজা এলে ওই ঘটনার কথা খুব মনে পড়ে। পূজায় নতুন পোশাকের ব্যাপারটি এখনও আছে। জন্মের পর থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে পূজার দিনগুলো কেটেছে, কিন্তু এবার তারা কাছে নেই। তারা কানাডায়। ফলে ভীষণ মিস করছি তাদের। যেহেতু মা এবার কাছে নেই, তাই ইচ্ছা আছে মায়ের মতো মজার কিছু রান্না করব। যদিও এখনও তা করতে পারিনি।

বিয়ের পর এটি আমার প্রথম পূজা। এবারের পূজা আমার জন্য এক অন্য রকম অনুভূতি। শাঁখা, সিঁদুর, জামদানি শাড়ি, আলতা পরা হাতে প্রথমবার বরণ করলাম দেবী দুর্গাকে! শরতের কাশফুল আর নিজের নতুন সাজ– সবকিছুতেই কেমন যেন একটা স্নিগ্ধতা! প্রথম দুই দিন ঢাকায় কাটানোর পর কুমিল্লায় শ্বশুরবাড়িতে এসেছি। সবাইকে নিয়ে আনন্দময় সময় কাটছে। সময় সুযোগ পেলে স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন মণ্ডপে যাচ্ছি। এখন চাইলেও আগের মতো নানা জায়গায় যেতে পারি না, ভিড় জমে যায়। মানুষজন সেলফি তোলার জন্য ভিড় করে, কথা বলতে চায়। সে জন্য পূজার সময়টা একটু অন্যভাবে কাটে। সবশেষে রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে চাই, জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ ধন্য হল ধন্য হল মানবজীবন… বিদ্যা সিনহা মিমn অভিনেত্রী

আরও পড়ুন

×