ভোজ্যতেলের বাজারে ফের অস্থিরতার আশঙ্কা

প্রতীকী ছবি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২২ | ২০:৩৫ | আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২২ | ২০:৩৫
ভোজ্যতেলের বিভিন্ন পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) কমানোর ফলে মাঝে কিছুদিন স্থিতিশীল ছিল পণ্যটির দাম। এরপর কয়েক সপ্তাহ ধরে পাম ও সয়াবিন তেলের সরবরাহে কিছুটা সংকট চলছে। গত শুক্রবার ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েল রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর নতুন করে অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে ভোজ্যতেলের আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাজারে।
সূর্যমুখী তেলের বড় রপ্তানিকারক রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ায় সেখান থেকে এই তেলের সরবরাহ থমকে গেছে। এতে বিশ্বজুড়ে বাড়ছিল পাম অয়েলের ওপর নির্ভরশীলতা। ঠিক তখনই পাম অয়েল রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে পণ্যটির শীর্ষ উৎপাদনকারী দেশ ইন্দোনেশিয়া। এর ফলে এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের ওপর চাপ বেড়েছে। ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আগামী ২৮ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু তার আগেই যুক্তরাষ্ট্রের ফিউচার মার্কেটে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে সয়াবিন তেলের দাম।
বাংলাদেশের বাজারেও এর প্রভাব আঁচ করা যাচ্ছে। খুচরা বিক্রেতাদের অনেকে বলছেন, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে আগে থেকেই বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ কমিয়েছে পাইকার ও কোম্পানিগুলো। কয়েক দিন ধরে এ সমস্যা আরও বেড়েছে।
বাংলাদেশে প্রতিবছর আমদানি হওয়া ১৩ থেকে ১৪ লাখ টন পাম অয়েলের প্রায় ৭০ শতাংশই আসে ইন্দোনেশিয়া থেকে। বাকিটা আসে মালয়েশিয়া থেকে। ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় দেশের ভোজ্যতেলের বাজারে সরবরাহের সমস্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
গতকাল রোববার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাম অয়েল মোটামুটি পাওয়া গেলেও বিক্রেতারা প্রতি কেজিতে দাম নিচ্ছেন ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। আর বোতলজাত সয়াবিন তেলের মধ্যে এক লিটার ও আধা লিটারের বোতল মিলছে খুবই কম। পাঁচ লিটারের বোতল পাওয়া গেলেও অন্য পণ্য না কিনলে বিক্রেতারা তেল বিক্রি করতে চান না।
কারওয়ান বাজারের রতন স্টোরের স্বত্বাধিকার ফজলুল করিম সমকালকে বলেন, গতকাল তীর ব্র্যান্ডের পাঁচ লিটারের প্রতিটি সয়াবিনের বোতল পাইকারি পর্যায়ে ৭৬০ টাকায় কিনতে হয়েছে। এর সঙ্গে শ্রমিক খরচ দুই টাকা ৫০ পয়সা যোগ করলে প্রতি বোতলের মূল্য দাঁড়ায় ৭৬২ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু বোতলের গায়ে লেখা আছে ৭৬০ টাকা। কোনো ক্রেতাই বোতলের গায়ে লেখা থাকা মূল্যের চেয়ে বেশি দামে তেল কিনবেন না।
তাহলে কীভাবে বিক্রি করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্য পণ্য বিক্রি করতে হলে দোকানে তেল রাখতে হবে। সেই চিন্তা থেকেই যেসব ক্রেতা বেশি পণ্য কেনেন এবং পরিচিতজন যারা, শুধু তাদের কাছে দু-একটা বোতল বিক্রি করছেন তিনি। এতে তার লোকসান সমন্বয় হয় বলে জানান এই ব্যবসায়ী।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি তেল বিক্রেতা সোনালি ট্রেডার্সের মালিক আবুল কাশেম বলেন, গতকাল শুধু বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের রূপচাঁদা ব্র্যান্ড ২০ কার্টন তেল দিয়েছে। প্রতি কার্টনে পাঁচ লিটারের চারটি বোতল থাকে। সেই হিসাবে মাত্র ২০০ লিটার তেল দিয়েছে কোম্পানি। অন্য কোম্পানিগুলো ১০ থেকে ১৫ দিন ধরেই খুব বেশি তেল দিচ্ছে না।
পাম অয়েলের বিষয়ে তিনি বলেন, বাজারে পাম অয়েল নেই বললেই চলে। তেল পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিদিন তেলের বিক্রয় দর ঘোষণা করে। কিন্তু গতকাল তারা কোনো দর ঘোষণা দেয়নি। ফলে তেল কেনা সম্ভব হয়নি।
এই বাজারের আরেক পাইকারি ব্যবসায়ী বেঙ্গল অয়েল স্টোরের মালিক মহিউদ্দিন বলেন, কোম্পানিগুলো চাহিদা অনুসারে তেল দিচ্ছে না। এ কারণে গত এক সপ্তাহে প্রতি লিটারে গড়ে দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা।
তবে ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি বন্ধ করায় দেশের বাজারে এখনই খুব বেশি প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন না আমদানিকারকরা। সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা সমকালকে বলেন, দাম বাড়তে বাড়তে এখন আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের টন দুই হাজার ৩০ ডলার এবং পাম অয়েলের দাম এক হাজার ৮৫০ ডলারে পৌঁছেছে। তবু তেল আমদানি হচ্ছে। কোম্পানিগুলোও দেশের বাজারে পর্যাপ্ত তেল সরবরাহ করছে। বাজারে সংকট হওয়ার কথা নয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েলের বড় উৎস। দেশটি রপ্তানি বন্ধ রাখলে অন্যান্য বাজারে চাপ সৃষ্টি হবে। বিকল্প বাজারগুলোর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি সয়াবিন, সূর্যমুখী ও ক্যানোলার মতো পরিশোধিত তেল আমদানি উৎসাহিত করতে শুল্ক্ক প্রত্যাহারের জন্য এনবিআরকে চিঠি দেওয়া হবে।
- বিষয় :
- ভোজ্যতেল
- মূল্য সংযোজন কর
- ভ্যাট
- পাম অয়েল
- অস্থিরতা