ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

শেয়ারবাজার

উৎপাদনে ফিরছে বন্ধ কোম্পানি

উৎপাদনে ফিরছে বন্ধ কোম্পানি

প্রতীকী ছবি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২২ | ২১:৪৫ | আপডেট: ১৫ আগস্ট ২০২২ | ২১:৪৫

অধুনালুপ্ত ওটিসি বাজারভুক্ত এবং মূল শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে দীর্ঘদিন বন্ধ বা রুগ্‌ণ কোম্পানিগুলোকে ফের বাণিজ্যিক কার্যক্রমে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। উদ্দেশ্য বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে মালিকানায় ও পর্ষদে রদবদল করে কয়েকটি কোম্পানিকে ফের উৎপাদনে ফেরানো হয়েছে। প্রক্রিয়ায় আছে আরও কিছু। এ ক্ষেত্রে সর্বশেষ সংযোজন বস্ত্র খাতের কোম্পানি সিএনএ টেক্সটাইল।

বন্ধের পাঁচ বছরেরও বেশি সময় পর গত শনিবার চট্টগ্রামের কালুরঘাটে বিসিক শিল্প এলাকার সিএনএটেক্স পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরুর মধ্য দিয়ে ফের বাণিজ্যিক কার্যক্রমে ফিরছে। বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম গত শনিবার কারখানাটির পরীক্ষামূলক উৎপাদন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। ২০১৩ মালে তালিকাভুক্তির মাত্র চার বছরের মধ্যে নিজেদের প্রায় পুরো শেয়ার বিক্রি করে মূল উদ্যোক্তারা পালিয়ে যান। নিয়ন্ত্রক সংস্থার উদ্যোগের অংশ হিসেবে আলিফ গ্রুপ কোম্পানিটির দায়দেনাসহ সব দায়িত্ব নিয়েছে। আলিফ গ্রুপ নতুন করে ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে কোম্পানিটিকে ফের বাণিজ্যিক কার্যক্রমে ফেরাতে অনেক দূর এগিয়েছে।

এর আগে মূল শেয়ারবাজারে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের তালিকাভুক্ত এমারেল্ড অয়েল পুরোপুরি উৎপাদনে ফিরেছে। ওটিসিভুক্ত আল-আমীন কেমিক্যাল, এপেক্স ওয়েভিং, পারফিউম কেমিক্যাল এবং রাঙ্গামাটি ফুড প্রডাক্টস উৎপাদনে বা পরীক্ষামূলক উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছে। বিএসইসির একটি সূত্র জানিয়েছে, একইভাবে উৎপাদনে ফেরার কার্যক্রম শুরুর প্রক্রিয়ায় আছে ঢাকা ফিশারিজ এবং গচিহাটা অ্যাকুয়াকালচার ফার্ম। উৎপাদনে আছে কিন্তু আর্থিক অনিয়ম করে লোকসান দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করছে, এমন কোম্পানিগুলোকেও বাজারে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এরই মধ্যে ওয়াল্ডারল্যান্ড টয়েজ এবং উত্তরবঙ্গের কোল্ড স্টোরেজ চেইন হিমাদ্রি লিমিটেডকেও স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ারবাজার এসএমই বোর্ডে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

ফের উৎপাদনে সিএনএটেক্স: চট্টগ্রামের কালুরঘাট শিল্প এলাকায় বস্ত্র খাতের কোম্পানি সিএনএটেক্সের কারখানা প্রাঙ্গণে এর পরীক্ষামূলক উৎপাদন কার্যক্রম উদ্ভোধন অনুষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজিমুল ইসলাম জানান, গত বছরের শেষে দায়িত্ব নিয়ে কারখানাটির বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বকেয়া টাকা পরিশোধ করে ফের সংযোগ নেওয়া হয়েছে। কিছুটা সুদ মওকুফ করে ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের ২০০ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতপশিল করা হয়েছে। ডাইং শাখার পুরোনো যন্ত্রপাতি সংস্কারসহ নতুন কিছু যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে। জলোচ্ছ্বাসে কারখানা প্রাঙ্গণ ডুবে যায় বলে উঁচু করা হয়েছে। এখনও নিটিং ও গার্মেন্ট শাখার সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়নি। সংস্কার করে শিগগিরই পুরোদমে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হবে। পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু হলে আড়াই থেকে তিন হাজার কর্মীর কর্মসংস্থান হবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও জানান, আপাতত ৫০ কোটি টাকার নতুন বিনিয়োগ করা হয়েছে। আরও বিনিয়োগ লাগবে। কোম্পানির কিছু পুরোনো মালপত্র বিক্রি করে সেই টাকায় সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের কিছু লভ্যাংশ দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। এ ছাড়া আগামী তিন বছর পরিচালকরা লভ্যাংশ নেবেন না- এমন চিন্তাও আছে। কোম্পানির বিগত বছরের হিসাব নিরীক্ষা কাজও শেষ করে উচ্চ আদালতের অনুমতি নিয়ে এজিএমের ব্যবস্থা করা হবে।

বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত বলেন, ২০০৯ সালে এক দিনে ৬৫টি কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করে ওটিসিতে পাঠানো হয়। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর দেখেন সেগুলোর সম্পদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একটি একটি করে এসব কোম্পানি ব্যবসায় ফেরানোর চেষ্টা করছেন। ভালো ফলও পাচ্ছেন। এগুলো ফের চালু করতে নতুন করে জমি কেনা বা কারখানা স্থাপনের দরকার নেই। কোথাও কিছু সংস্কার, কোথাও নতুন মেশিন স্থাপন ও নতুন বিনিয়োগ করে চালু করা সম্ভব। এরই মধ্যে এমারেল্ড অয়েলসহ ২-৪টি কোম্পানি উৎপাদনে এসেছে। এভাবে ৫০ থেকে ৬০টি কোম্পানি ফের চালু করতে পারলে ২০ থেকে ৩০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে।

দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে: সিএনএটেক্সসহ বন্ধ হয়ে যাওয়া বিভিন্ন কোম্পানিতে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিএসইসি ব্যবস্থা নেবে কিনা, এমন প্রশ্নে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আগে অনেক তালিকাভুক্ত কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেলেও তার দায়িত্ব গ্রহণের দুই বছরে কোনো কোম্পানি বন্ধ হয়নি। যেসব কোম্পানি বন্ধ হয়েছে, সেগুলোর বন্ধ হওয়ার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আগে বিএসইসিতে তদন্ত বিভাগ ছিল না। দুই সপ্তাহ আগে গঠন করা হয়েছে। শেয়ারবাজার স্পেশাল ট্রাইব্যুনালকে সক্রিয় করা হচ্ছে এবং প্রথম ফৌজদারি মামলা করা হয়েছে। বন্ধ কোম্পানিগুলো চালুর পর তথ্য নিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে ফৌজদারি মামলা করা হবে।

আরও পড়ুন

×