ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ওকাবের অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী

ইউয়ান রুবলে লেনদেনের সম্ভাবনা যাচাই হচ্ছে

ইউয়ান রুবলে লেনদেনের সম্ভাবনা যাচাই হচ্ছে

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১৩ মে ২০২৩ | ১০:৫৭

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, মার্কিন ডলারের পাশাপাশি চীনের মুদ্রা ইউয়ান, রাশিয়ার মুদ্রা রুবলসহ অন্য কয়েকটি মুদ্রায় আন্তর্জাতিক লেনদেন করা যায় কিনা, তার সম্ভাবনা যাচাই করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক এ নিয়ে কাজ করছে। গতকাল শনিবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংবাদমাধ্যমের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদের সংগঠন ওভারসিজ করেসপন্ডেন্ট অব বাংলাদেশ (ওকাব) আয়োজিত 'মিট দ্য ওকাব' অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ওকাবের আহ্বায়ক কাদির কল্লোল। এ সময় সংগঠনটির সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম মিঠু, সিনিয়র সদস্য ফরিদ আহমেদসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ডলারের দাম ভীষণভাবে ওঠানামা করছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে অনেক দেশ ডলারের পাশাপাশি অন্যান্য মুদ্রায় লেনদেনে যাচ্ছে। তাতে কেউ কেউ ভালো ফল পাচ্ছে। বাংলাদেশও বিষয়টি নিয়ে ভাবছে। আশা করা যায় ভালো ফল আসবে।

বাংলাদেশে ডলারের দর সর্বকালের রেকর্ড ছুঁয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাপক পরিমাণে ডলার বিক্রি করে এবং দর বেঁধে দিয়েও বাজার সামলাতে পারছে না। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত নেমে এসেছে ৩৭ বিলিয়ন ডলারে। এ অবস্থায় দেশের ব্যাংকগুলোকে ইউয়ানে করেসপন্ডিং অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে সহজে লেনদেন করার জন্য টাকা-ডলার সোয়াপ বা বিনিময় করার আলোচনাও চলছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বৈশ্বিক পরিস্থিতির শিকার। এ পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশ শুধু নিজে চেষ্টা করে বের হতে পারবে না। বড়জোর বৈশ্বিক পরিস্থিতির প্রভাব মোকাবিলার চেষ্টা করা যেতে পারে। বিশ্ববাজারে বেশ কিছু পণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশে কমছে না। এর অন্যতম কারণ ডলারের উচ্চমূল্য, বাড়তি জাহাজভাড়া ইত্যাদি। তিনি বলেন, গত মাসে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হলেও চলতি মাসে বা আগামী মাসে প্রবৃদ্ধি থাকবে কিনা, তাতে সংশয় আছে। বিশ্ববাজারে চাহিদা কমছে। সার্বিকভাবে অবস্থা স্বস্তিদায়ক নয়। এজন্য দেশে খাদ্য উৎপাদনে জোর দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বিদেশ থেকে কিছু টাকাপয়সা আনারও চেষ্টা চলছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সংকট কাটিয়ে ওঠা কঠিন। বিপদ হতেই পারে। তবে সরকার সতর্ক আছে।

ভারত ও চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি-বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এ দুটো দেশ থেকে শিল্পের কাঁচামাল, মেশিনারিজ ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি হয়। যতদিন না দেশে এ ধরনের শিল্প গড়ে উঠছে ততদিন এ ঘাটতি কমবে না। রাতারাতি শিল্প গড়ে উঠবে না। তবে রপ্তানি বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

মিয়ানমার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে টিপু মুনশি বলেন, মিয়ানমারকে নিয়ে সমস্যা আছে। আমাদের ভূখণ্ডে তাদের গোলা পড়ছে। রোহিঙ্গারা এসে জড়ো হয়েছে। এ সমস্যা শুধু বাংলাদেশের নয়, পুরো বিশ্বের। তবে সে দেশের ব্যবসা বন্ধ হয়নি। সরকারও মিয়ানমার থেকে আমদানি করছে। রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনই পিটিএ বা এফটিএর মতো চুক্তি কার্যকরের কথা ভাবা হচ্ছে না। কারণ ২০২৬ সাল পর্যন্ত এলডিসি হিসেবে সুবিধা পাওয়া যাবে। ফলে আমদানি থেকে যে রাজস্ব আসে, তা হারানোর চেয়ে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। তবে সরকারের মনোভাব হচ্ছে, রাজস্ব সংগ্রহ কমলেও দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় ব্যবসা বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে। রোববার ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হবে। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে সেপা নিয়ে আগামী ডিসেম্বরে আলোচনা শুরু হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার-বিষয়ক ইস্যুতে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এটি আপেক্ষিক বিষয়। ইইউতে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে। আগামীতে আরও বাড়বে। এ ক্ষেত্রে মানবাধিকার সমস্যা হবে না। বাংলাদেশ তৈরি পোশাকের বাইরে অন্যান্য পণ্য রপ্তানি বাড়াতে জোর দিচ্ছে। আশা করা যায়, ২০২৬ সালে রপ্তানি আয় ১০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।

পাট ও পাটপণ্যে ভারতের অ্যান্টি ডাম্পিং ডিউটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারত এ ধরনের শুল্ক্ক আরোপ করতে পারে না। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সফরে এর সমাধানে আলোচনা হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিবকে বিষয়টি দেখার নির্দেশনা দিয়েছেন। আশা করা যায়, শিগগিরই সমাধান হবে। বাংলাদেশ এখনই এ নিয়ে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে যাবে না। আলোচনা করেই সমাধান করতে চায়।

নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে দেবে না বাণিজ্য মন্ত্রণালয়: অস্বাভাবিকভাবে দাম বেড়ে যাওয়ায় গত ৩১ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১৫ দিনের মধ্যে চাল, আটা, ডাল, তেল, চিনি, ডিম, রড ও সিমেন্টের দাম বেঁধে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। নির্ধারিত সময় পার হওয়ার দু'দিন পরে গতকাল বাণিজ্যমন্ত্রী জানালেন, ভোজ্যতেল ও চিনি ছাড়া অন্য পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার এখতিয়ার তাঁর মন্ত্রণালয়ের নেই। কৃষি মন্ত্রণালয় চাল, ডাল, আটা ও ডিমের দাম বেঁধে দেওয়ার এখতিয়ার রাখে। ফলে এসব পণ্যের দাম নির্ধারণ নিয়ে এখন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে ২০১৮ সালের এক প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, চাল, আটা, ডাল ও ডিমের দাম নির্ধারণের এখতিয়ার তাদের। ফলে দাম নির্ধারণ করা হলে তা কৃষি মন্ত্রণালয় করবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভারত থেকে ডিম আমদানি করা হবে কিনা, তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। বাজার অস্বাভাবিক হলে আমদানির দিকে যেতে হতে পারে। তবে ভোক্তাদের কথা বিবেচনার পাশাপাশি উৎপাদকদের কথাও ভাবতে হবে। এতে কর্মসংস্থান ও ব্যাংক ঋণ জড়িত।

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর প্রসঙ্গ: বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভারতের সরকার ও ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে চায়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, পার্শ্ববর্তী সব দেশকে সঙ্গে নিয়ে ভারত এগোতে চায়। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রথম। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও ভারতের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। এরই মধ্যে ভারতের জন্য তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হচ্ছে। প্রয়োজনে আরও অর্থনৈতিক অঞ্চল দেওয়া হবে। সামগ্রিকভাবে আগামী তিন থেকে চার বছরের মধ্যে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি ৪০০ কোটি ডলারে পৌঁছাবে।

আরও পড়ুন

×