ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশ অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদদের মত

সংকট বেড়েছে কম আয়ের মানুষের

সংকট বেড়েছে কম আয়ের মানুষের

শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে 'ব্যাংকিং অ্যালামনাক' গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে অতিথিরা

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২৩ | ০৪:১৮ | আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২৩ | ০৪:১৮

মূল্যস্ফীতির চাপে কম আয়ের মানুষের সংকট বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদরা। সংকট লাঘবে অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর গবেষণা গ্রন্থ 'ব্যাংকিং অ্যালমানাক'-এর প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তাঁরা এমন মত দেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও ব্যাংকিং অ্যালমানাক গ্রন্থের সম্পাদকীয় পরিষদের চেয়ারম্যান ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও পিপিআরসির চেয়ারপারসন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন, বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আমানুল্লাহ, বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান মো. খলিলুর রহমান প্রমুখ।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বর্তমানে মূল্যস্ফীতি সারাবিশ্বকে ভোগাচ্ছে। বড় বড় অর্থনীতির দেশও সংকটের মধ্যে পড়েছে। তুলনামূলক ছোট অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বৈশ্বিক বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলা করে টিকে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সরকার আশা করে, বড় ধরনের ক্ষতি ছাড়াই বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে।

হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, অর্থনীতি নিয়ে দেওয়া বক্তব্যে সঠিক চিত্র উঠে আসছে না। এ জন্য সব আলোচনার আগে প্রকৃত শব্দটি যোগ করার প্রয়োজন। ব্যাংকিং, জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিংবা দারিদ্র্যের হার- প্রতিটি ক্ষেত্রে এখন প্রকৃত তথ্য জরুরি হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, তীব্র শীত উপেক্ষা করে ফুটপাতে রাত্রিযাপন করা মানুষের সংখ্যা বর্তমানে বেড়েছে। এটি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে যে চলমান মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি কম আয়ের মানুষকে আরও সংকটে ফেলেছে। দরিদ্র মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে। এসব চিত্রই বর্তমান অর্থনীতির বাস্তবতা।

হোসেন জিল্লুর আরও বলেন, সঠিক তথ্য অর্থনৈতিক সুশাসনে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু বর্তমানে দেশে তথ্য নিয়ে দ্বিধা ও বিভ্রম পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আধুনিক দেশ গড়তে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। ব্যাংকের আমানত ও ঋণে সুদের হার বেঁধে দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মূল্যস্ফীতি কম আয়ের মানুষকে বেশি ভোগাচ্ছে। তবে মূল্যস্ম্ফীতি শুধু বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। এ জন্য বাজার নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পুরোপুরি ব্যর্থ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

তিনি আরও বলেন, সুদহার সীমা নির্ধারণ থেকে বের না করলে অর্থনীতিতে বৈষম্য আরও বাড়বে। সুদহার বেঁধে দেওয়ায় বেশি লাভবান হন বড় ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে বিভিন্ন দর নির্ধারণ পরিহার করার পরামর্শ দেন তিনি।

আর্থিক খাত নিয়ে সব কর্মকাণ্ড প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সবকিছু প্রকাশ্যে আনলে কিছুটা আলোচনা হলেও বিপদ কাটাতে সহায়ক হবে। আর গোপন রাখলে সমস্যা বাড়বে। অর্থনীতি নিয়ে যত কাজ হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি কথা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ব্যাংক খাতে সুশাসনের জন্য যা কিছু করণীয়, তা দ্রুত, দৃশ্যমান ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে করতে হবে। রাজনৈতিক নেতাদের মতো দেখছি, দেখব- এ রকম চলবে না। বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে বলতে হবে- এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি, নেব।’

আরও পড়ুন

×