অর্থনীতির সক্ষমতা নির্ধারণে হোমওয়ার্ক অতি জরুরি

শুধু মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিই উন্নয়নের একমাত্র পরিমাপক নয়। এ কারণে দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। বৈশ্বিক ও স্থানীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের অর্থনীতি কতটা সক্ষম তা নির্ধারণে নিজেদের হোমওয়ার্ক অতি জরুরি। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এবং গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক এমন মত দেন।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার মিলনায়তনে 'বেসরকারি খাতের দৃষ্টিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথমার্ধে বাংলাদেশের অর্থনীতির সামগ্রিক পর্যালোচনা' শিরোনামের এ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহসিনা ইয়াসমিন বিশেষ অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি অংশ নেন। ডিসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

নির্ধারিত আলোচক হিসেবে ড. সেলিম রায়হান বলেন, মূল্যস্ম্ফীতি, রিজার্ভ সংকট, আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে স্থবিরতা ইত্যাদি সামষ্টিক অর্থনীতির বিষয়গুলো সামাজিক খাত বিশেষ করে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ওপর প্রভাব ফেলেছে, যা মোকবিলায় আরও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল আমাদের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। সব সেবার অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে যথাসময়ে এসব অঞ্চলের কার্যক্রম শুরু করতে সরকারকে আরও মনোযোগী হতে হবে।

তপন কান্তি ঘোষ বলেন, এলডিসি উত্তরণ নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। এলডিসি-পরবর্তী রপ্তানি পণ্যের শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা পেতে হলে ভ্যালু অ্যাডিশনের ওপর আরও জোর দিতে হবে। এ জন্য ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ খাতে দক্ষতা বাড়াতে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন। এলডিসি-পরবর্তী রপ্তানির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সম্ভাবনাময় রপ্তানিমুখী পণ্যের বহুমুখীকরণ একান্ত অপরিহার্য। তিনি বলেন, মানবসম্পদের দক্ষতা বাড়াতে শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং সার্বিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা এখন অতি জরুরি। বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে রূপান্তরে সরকারের একক উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। এর জন্য প্রয়োজন সরকার ও বেসরকারি খাতের কার্যকর সমন্বয়।

মোহসিনা ইয়াসমিন বলেন, বিডার ওয়ানস্টপ পোর্টালের মাধ্যমে বর্তমানে ১৮টি সেবা অনলাইনে দেওয়া হচ্ছে এবং আগামীতে ৪০টি সংস্থার প্রায় ১৫০টি সেবা এর আওতায় আসবে। তিনি উল্লেখ করেন, উদ্যোক্তাদের এ ধরনের সেবা গ্রহণের হার খুবই কম, ফলে সেবাপ্রাপ্তিতে কোনো সমস্যা থাকলে তা নিরসনে বিডা কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারছে না। বিডার পোর্টাল ব্যবহার করে অনলাইন ভিত্তিক সেবা গ্রহণ বাড়ানোর জন্য উদ্যোক্তাদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

মূল প্রবন্ধে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি স্থানীয় অর্থনীতিতে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রভাব, এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ, জাতীয় বাজেট ও মুদ্রানীতির বাস্তবায়ন অবস্থা, মুদ্রাস্টম্ফীতি, বেসরকারি বিনিয়োগ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান, কৃষি, উৎপাদন ও সেবা খাত নিয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেন। এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী রপ্তানি সম্প্র্রসারণে পণ্যের বহুমুখীকরণ ও উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বাড়ানো এবং সম্ভাবনাময় দেশ ও আঞ্চলিক বাণিজ্যিক ব্লকগুলোর সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি এবং মুক্তবাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর ত্বরান্বিত করা, ব্যবসা-বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা, মুদ্রানীতির যথাযথ বাস্তবায়ন, বিনিয়োগ বাড়াতে নীতিমালায় সংস্কারসহ প্রয়োজনে নতুন নীতিমালা প্রণয়নের ওপর জোর দেন ডিসিসিআই সভাপতি।

নির্ধারিত আলোচক হিসেবে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, সব ক্ষেত্রে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ বাড়লে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা আসবে, যা বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, মূল্যস্টম্ফীতিসহ সর্বোপরি জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। খেলাপি ঋণ কমাতে তিনি রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের আহ্বান জানান।

পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক মোহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা অত্যন্ত উদ্যমী। তবে প্রয়োজন সরকারের যথাযথ নীতি সহায়তা। ঘন ঘন শুল্ক্ক বিধিমালা পরিবর্তন না করার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি এস এম গোলাম ফারুক আলমগীর (আরমান) ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। ডিসিসিআই সহসভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলীসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।