ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

মার্চে রপ্তানি আয়ে পতন

মার্চে রপ্তানি আয়ে পতন

প্রতীকী ছবি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০২৩ | ০৩:৪৬ | আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৩ | ০৪:৩২

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের মার্চে রপ্তানি আয় কমে গেছে। এ মাসে মোট ৪৬৪ কোটি ৩৯ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় যা দুই দশমিক ৪৯ শতাংশ কম। ওই সময় রপ্তানি আয় হয়েছিল ৪৭৬ কোটি ২২ লাখ ডলার। গতকাল রোববার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।

তবে একক মাসের হিসাবে মার্চে রপ্তানি আয় কমলেও সার্বিকভাবে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে অর্থাৎ প্রথম ৯ মাসে রপ্তানি আয় বেড়েছে। ৯ মাসে মোট রপ্তানি হয়েছে ৪ হাজার ১৭২ কোটি ১৬ লাখ ডলারের। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এটি ৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৩ হাজার ৮৬০ কোটি ৫৭ লাখ ডলার।

এর আগে চলতি অর্থবছরে সর্বশেষ অক্টোবরে রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক ধারা দেখা গেছে। ওই মাসে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৪৩৬ কোটি ডলার,  যা তার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৭ কোটি ডলার কম। এর পর থেকে ইতিবাচক ধারায় ছিল রপ্তানি আয়। বেড়েছিল টানা চার মাস। তবে মার্চে এসে তা আবারও কিছুটা হোঁচট খেল।

মূলত তৈরি পোশাকের ওপর ভর করেই দেশের রপ্তানি আয় বাড়ে। কিন্তু বেশ কিছু দিন ধরেই পোশাক রপ্তানিকারকরা বলে আসছিলেন, তাঁদের ক্রয়াদেশ কমে গেছে। গত মার্চ মাসের রপ্তানি আয়ের চিত্রে তা কিছুটা প্রতিফলিত হয়েছে। পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তৈরি পোশাক রপ্তানির তথ্য পাওয়া যায়। সে অনুসারে, গত কয়েক মাস চার বিলিয়ন করে পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। কিন্তু মার্চে এসে তা চার বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে। শুধু মার্চে মোট পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩৮৯ কোটি ডলারের, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১ শতাংশ কম।

যোগাযোগ করা হলে বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল সমকালকে বলেন, রপ্তানিকারকরা বলে আসছিলেন যে, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দাভাব এবং আমদানিকারক দেশগুলোর মূল্যস্ফীতির চাপের প্রভাব পড়বে রপ্তানিতে। কারণ মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেলে ক্রেতাদের আমদানি কমে যাবে। অর্থাৎ বাংলাদেশের পোশাক খাতের রপ্তানি কমবে। তার কিছুটা চিত্র দেখা গেছে মার্চের রপ্তানি আয়ের হিসাবে। তবে মার্চে রপ্তানি কমলেও প্রতিযোগীদের তুলনায় বাংলাদেশ তেমন একটা পিছিয়ে নেই। আগামীতে রপ্তানি ঘুরে দাঁড়াবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি। 

এদিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসের হিসাবে এ খাতে রপ্তানি আয় আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ শতাংশ বেড়েছে। ইপিবির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত ৯ মাসে পোশাক খাতে মোট রপ্তানি আয় হয়েছে ৩ হাজার ৫২৫ কোটি ২৪ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এটি ছিল ৩ হাজার ১৪২ কোটি ৮৪ লাখ ডলার।

জুলাই-মার্চ সময়ে পোশাকের বাইরে অল্প কয়েকটি খাতে রপ্তানি আয় আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। এর মধ্যে প্লাস্টিক খাতে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৩৪ শতাংশ। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে বেড়েছে ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এ ছাড়া বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ পণ্যে রপ্তানি আয় আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কমে গেছে। এর মধ্যে কৃষিপণ্যে ২৮ শতাংশ এবং পাট ও পাটপণ্যে ২১ শতাংশ কমেছে। এ ছাড়া হিমায়িত খাদ্যে ২০ শতাংশ, বিশেষায়িত টেক্সটাইলে ১৯ শতাংশ কমেছে রপ্তানি আয়।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম সমকালকে বলেন, মার্চে কিছুটা কমলেও সার্বিকভাবে রপ্তানি আয় এখনও ভালো আছে। সামনের মাসগুলোতে তা আরও বাড়তে পারে। ইউরোপের দেশগুলোতে শীত কমছে। ফলে সেসব দেশে কাজের চাহিদা বাড়বে। এতে পোশাকের চাহিদাও বেড়ে যাবে। এ ছাড়া ডলারের দাম যদি আরও বেড়ে যায়, সেটিও রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

তিনি আরও বলেন, রপ্তানি আয় কমলে সেটা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়াবে। তাই সরকারের উচিত হবে ইপিবির তথ্যের সঙ্গে কাস্টমসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যে, রপ্তানিকারকরা সঠিক সময়ে তাঁদের রপ্তানি আয় পাচ্ছেন কিনা।

উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ২২৬ কোটি ৪০ লাখ ডলারের। ওই সময়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ দশমিক ২৮ শতাংশ কম হয়েছে রপ্তানি। চলতি অর্থবছরে মোট ৫ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট রপ্তানি আয় হয় ৫ হাজার ২০৮ কোটি ডলার।

আরও পড়ুন

×