খেলাপি ঋণের হারে শীর্ষে জাহাজ নির্মাণ শিল্প

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২২ আগস্ট ২০২৩ | ০৬:৩৪
খেলাপি ঋণের হারে এখন শীর্ষে রয়েছে জাহাজ নির্মাণ শিল্প খাত। ব্যাংকগুলোর এ খাতে দেওয়া ঋণের ২২ দশমিক ৪৩ শতাংশই খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এককভাবে কোনো খাতে এত বেশি হারে খেলাপি ঋণ নেই। পুরো ব্যাংকখাতে খেলাপি ঋণের গড় হার এখন ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। জাহাজ নির্মাণ শিল্প খাতেআর্থিক প্রতিষ্ঠানের দেওয়া ঋণেরও বড় একটি অংশ খেলাপি। এ অবস্থায় ব্যাংকের পর এবার আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য জাহাজ নির্মাণ শিল্পের ঋণ পুনঃতপশিলে বিশেষ সুবিধা দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এ খাতের ঋণ দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছরের জন্য পুনঃতপশিল করা যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত জাহাজ নির্মাণ ও জাহাজ ভাঙা শিল্প খাতে ব্যাংকগুলো মোট ঋণ দিয়েছে ২১ হাজার ২১৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ৪ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা।গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট ঋণ স্থিতি ছিল ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা। খাতভিত্তিক দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ রয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত খাতে। এ খাতের ১৩ হাজার ৩৮ কোটি টাকা ঋণের ১১ দশমিক ৭৫ শতাংশ খেলাপি।
এর পরের অবস্থানে থাকা কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের ৬৩ হাজার ১৩১ কোটি টাকা ঋণের ১১ দশমিক ৭৪ শতাংশ খেলাপি। খেলাপির হারে চতুর্থ অবস্থানে থাকা টেক্সটাইল খাতের ১ লাখ ২৭ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। আর তৈরি পোশাক খাতের ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা ঋণের ১১ দশমিক ১২ শতাংশ খেলাপি।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছরের জন্য জাহাজ নির্মাণ শিল্পের ঋণ বা লিজ পুনঃতপশিল করা যাবে। গ্রেস পিরিয়ড শেষে প্রথমে আসল আদায় করতে হবে। এর পর ব্লক হিসাবে রাখা সুদ আদায় করতে হবে। তবে কোনো গ্রাহক ইচ্ছা করলে গ্রেস পিরিয়ডের মধ্যেও আসল এবং সুদ বাবদ পাওনা অর্থ পরিশোধ করতে পারবে। এ সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে ন্যূনতম আড়াই শতাংশ ডাউনপেমেন্ট নিতে হবে। এ ধরনের ঋণ পুনঃতপশিল করতে হবে গত ৩০ জুন ভিত্তিক স্থিতির ভিত্তিতে। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান আসল এবং সুদ আলাদা করে দুটি হিসাবে রাখতে হবে। সুদ বাবদ স্থিতি সুদবিহীন ব্লক হিসাবে স্থানান্তর করতে হবে। আর আসলের ওপর প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সুদ আরোপ করা যাবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনার আলোকে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে ডাউনপেমেন্ট বাবদ প্রয়োজনীয় অর্থ জমা দিয়ে গ্রাহক আবেদন করতে পারবেন। ঋণ গ্রহীতার আবেদন পাওয়ার তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিয়ে গ্রাহকের আবেদন নিষ্পত্তি করবে। তবে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্ট ঋণ বা লিজের ক্ষেত্রে এ সার্কুলারে দেওয়া সুবিধা কার্যকর হবে না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আসল ও সুদ বাবদ পাওনা অর্থ আদায়ে ব্যর্থ হলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেবে।
বিশেষ এই সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে সার্কুলারে বলা হয়েছে, নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত বিভিন্ন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজ নির্মাণকারী খাত নগদ প্রবাহের অভাবে যথাসময়ে কিস্তি পরিশোধ করতে পারছে না। এ পরিস্থিতিতে অনাদায়ী ঋণ আদায় ও খেলাপি ঋণ কমাতে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের ঋণ পরিশোধ প্রক্রিয়া সহজ করার আবশ্যকতা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত রপ্তানিমুখী ও স্থানীয় জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের আবেদন পর্যালোচনা করে প্রতিটি কেসের গুণাগুণ বিবেচনায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও গ্রাহকের সম্পর্কের ভিত্তিতে এসব সুবিধা দেওয়া যাবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এক সময় জাহাজ নির্মাণ ও জাহাজ ভাঙা খাত ছিল রমরমা। তখন অনেক ব্যাংক এ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে ওঠে। ঋণ দরকার নেই, এর পরও একই কার্যাদেশের বিপরীতে একাধিক ব্যাংক ঋণ দেয়। সেই ঋণের অপব্যবহার করেন অনেকে। অনেকে জাহাজ নির্মাণ ও জাহাজ ভাঙা শিল্পের নামে ঋণ নিয়ে বিলাসবহুল বাড়ি কিংবা দেশের বাইরে সম্পদ গড়েছেন। এসব কারণে এ খাতের অবস্থা দিন দিন খারাপ হয়েছে।