১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার রেকর্ড খেলাপি ঋণ

সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮:০৬ | আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২৩ | ১৯:৪২
খেলাপি ঋণে নতুন রেকর্ড হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী গত জুন শেষে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ২৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা। বিশেষ সুবিধা আর ছাড় দেওয়ার পরও ব্যাংক খাতের এই ‘প্রধান সমস্যা’ দিনের পর দিন বাড়ছে।
ঋণ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুন শেষে ব্যাংক খাতে মোট বিতরণ করা ঋণ ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। এর তিন মাস আগে মার্চ প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। সে হিসাবে বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৪ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। প্রথম তিন (জানুয়ারি-মার্চ) মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছিল ১০ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। গত বছরের জুনের তুলনায় এ বছর জুনে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩০ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। ২০২২ সালের জুনে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা।
করোনার কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে ঋণ পরিশোধে পুরোপুরি ছাড় দেওয়া হয়েছিল। ঋণ শোধ না করলেও গ্রাহককে ‘খেলাপি’ স্ট্যাটাস থেকে মুক্ত রাখার সুযোগ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কম সুদে ঋণ নেওয়া ও ঋণ পরিশোধে কিছুটা ছাড় ছিল ২০২২ সালেও। চলতি বছরও ঋণের কিস্তির অর্ধেক পরিশোধে রয়েছে বিশেষ ছাড়।
এমন সব সুযোগের পরও ব্যাংকের টাকা ফেরত দিচ্ছেন না অনেক গ্রাহক। তবে বিশেষ ছাড় বন্ধ না হলে খেলাপি ঋণ কমবে না বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে ঢালাওভাবে সুবিধা প্রদানের কারণে ব্যাংকের পাশাপাশি অন্যান্য গ্রাহকও বিপদে পড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২২ সাল শেষে দেশে পুনঃতফসিল করা ঋণের স্থিতি ছিল ২ লাখ ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা, যা ব্যাংক খাতের মোট ঋণের ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। এখন খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১০ দশমিক ১১ শতাংশ দেখালেও প্রকৃত খেলাপির পরিমাণ অনেক বেশি। এর বাইরেও মামলার কারণে আটকা আছে আরও প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা। তাই সব মিলিয়ে প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ হবে ৪ লাখ কোটি টাকার বেশি।
অর্থনীতি বিশ্লেষক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, খাতা-কলমে দেখানো হচ্ছে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বাস্তবে এ অঙ্ক অনেক বেশি। কারণ এখানে পুনঃতপশিল ও পুনর্গঠন করা ঋণের হিসাব নেই, এগুলো যোগ করলে আড়াই লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। খেলাপি ঋণ ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকলে ব্যাংক খাতে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হবে। ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা কমে যাবে। এতে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমে যাবে। এর প্রভাব পড়বে কর্মসংস্থানে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, খেলাপি ঋণ কমাতে আমাদের তেমন সফলতা আসছে না। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও কঠোর হতে হবে। খেলাপি কমাতে না পারলে ব্যাংকগুলোর শাখা বন্ধের নির্দেশ দিতে হবে।
এদিকে ডলার সংকটে পড়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের দ্বারস্থ হয় বাংলাদেশ। ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার পেয়েছে। বাকি ছয় কিস্তির মধ্যে আগামী নভেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের কথা। কয়েক ধাপে ঋণ ছাড়ের ক্ষেত্রে সংস্থাটি ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ধাপে ধাপে কমিয়ে আনার শর্ত জুড়ে দিয়েছিল। ২০২৬ সালের মধ্যে বেসরকারি খাতে খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের নিচে এবং সরকারি ব্যাংকে ১০ শতাংশের নিচে নামানোর শর্ত দেওয়া হয়েছে।
- বিষয় :
- বাংলাদেশ ব্যাংক
- খেলাপি ঋণ
- ব্যাংক
- ঋণ