রেপো রেট বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
ব্যাংক ঋণের সুদহার আরও বাড়বে

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৩ | ২১:২৭ | আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৩ | ২১:২৭
নীতি সুদহার হিসেবে পরিচিত ‘রেপো রেট’ ফের বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর স্বল্প মেয়াদে ধারের এ মাধ্যমের সুদহার এক লাফে ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর আগে এ হার ছিল সাড়ে ৬ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ঋণের চাহিদা কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে এর প্রভাবে ব্যাংকের গ্রাহক পর্যায়েও সুদহার বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তের পেছনে আইএমএফের পরামর্শ অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। সফররত আইএমএফ প্রতিনিধ দল প্রথম দিনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে। তারা সুদহার আরও বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক রেপোর সুদহার বৃদ্ধির বিষয়ে সার্কুলার জারি করেছে। চলতি বছর এর আগে এর সুদহার দু’দফা বাড়ানো হয়।
রেপোর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে স্বল্পমেয়াদি ধার নেয়। রেপোর সুদ বাড়লে স্বাভাবিকভাবে কলমানিসহ আন্তঃব্যাংক সব ধরনের ধারের সুদহার বেড়ে যায়। এতে ব্যাংকের তহবিল গ্রহণের ব্যয় বাড়ে, যার প্রভাবে ঋণের সুদহার বাড়তে পারে। আমানতের সুদহারও বাড়ার ক্ষেত্র তৈরি হয়।
বেশির ভাগ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়ানোর মাধ্যমে সামগ্রিক সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে। তবে বাংলাদেশে এমনিতেই বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি অনেক কমেছে। ফলে বর্তমান বাস্তবতায় সুদহার কমানোর মাধ্যমে চাহিদা নিয়ন্ত্রণ কতটুকু কার্যকর হবে, তা নিয়ে ব্যবসায়ীরা প্রশ্ন তুলছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন সমকালকে বলেন, সুদহার আরও বাড়লে তা হবে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’র মতো। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে। রপ্তানি বাজার প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়বে। এমনিতেই এখন সেভাবে নতুন শিল্প হচ্ছে না। ডলারের অভাবে মূলধনি যন্ত্রপাতি এবং শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানি কমে যাচ্ছে। আবার বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমছে। এখন ঋণ প্রবৃদ্ধি আরও কমলে কর্মসংস্থানের ওপর আঘাত আসবে। ফলে এ সময়ে সুদহার বাড়িয়ে কীভাবে চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করে মূল্যস্ফীতি কমানো হবে, তা বোধগম্য নয়। তিনি বলেন, এখন দরকার ডলার। এ জন্য ডলারের রেট বেঁধে না দিয়ে বাজারভিত্তিক করা উচিত। তাতে হয়তো প্রথমদিকে কিছুটা কষ্ট হবে, তবে রেমিট্যান্স বাড়বে। আবার আন্ডার ইনভয়েসিং কমবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত জুলাইতে রেপোর সুদহার বেসিস পয়েন্ট ৫০ বাড়িয়ে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করে। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাড়ানো হয় বেসিস পয়েন্ট ২৫ শতাংশ। অবশ্য ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে রেপোর সুদ পরে কমানো হয়। ২০২০ সালের জুলাইতে রেপোর সুদ ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর পর থেকে একটু করে বাড়িয়ে এ পর্যায়ে আনা হয়েছে। এতদিন রেপোর সুদ বাড়লেও বাজারে ৯ শতাংশ সুদহারের সীমাই অপরিবর্তিত ছিল। তবে গত জুলাই থেকে সুদহারের নতুন পদ্ধতি কার্যকর হয়েছে।
২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ব্যাংক ঋণের সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা ৯ শতাংশ ঠিক করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে এতদিন এ নীতি চলছিল। তবে বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে শেষ পর্যন্ত তা আর ধরে রাখতে পারেনি। এর মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মেটাতে আইএমএফ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের চুক্তি করেছে সরকার। এই ঋণের অন্যতম শর্ত দেওয়া হয় মুক্তবাজার অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় এভাবে সুদহারের সীমা বেঁধে দেওয়া যাবে না। এর পর গত জুলাই থেকে আগের সীমা তুলে দিয়ে সুদহারের নতুন পদ্ধতি কার্যকর করা হয়েছে। নতুন ব্যবস্থাকে বলা হয় ‘স্মার্ট’ তথা সিক্স মান্থ মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল। এই উপায়ে ১৮২ দিন মেয়াদি সরকারি ট্রেজারি বিলের ৬ মাসের গড় সুদের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ যোগ করে ব্যাংকগুলো। আর সিএমএসএমই এবং ভোক্তা ঋণের ক্ষেত্রে ৪ শতাংশ সুদ যোগ করা যায়। সেপ্টেম্বরের ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদহার ৭ দশমিক ২০ শতাংশ।
- বিষয় :
- কেন্দ্রীয় ব্যাংক
- নীতি সুদহার