ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

আবাসন ব্যবসায়ীদের দাবি

ভবনের উচ্চতা কমলে ফ্ল্যাটের দাম বাড়বে

ভবনের উচ্চতা কমলে  ফ্ল্যাটের দাম বাড়বে

ফাইল ছবি

জসিম উদ্দিন বাদল 

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৪ | ০০:৪৯

রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকায় ভবন নির্মাণ-সংক্রান্ত ‘ঢাকা ইমারত নির্মাণ বিধিমালায়’ বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। খসড়া এ বিধিমালায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে এলাকাভিত্তিক ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার) পুনর্বিন্যাসে। এর ফলে ভবনের উচ্চতা একেক এলাকায় একেক রকম হবে। রাজউকের দাবি, ঢাকাকে সবুজ ও বাসযোগ্য করে তুলতে বিধিমালায় ফারের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হয়েছে।

তবে এতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, ফারের মারপ্যাঁচে ভবনের উচ্চতা কমবে। ফলে জমির সংকট দেখা দেবে। কৃষিজমির ওপর চাপ বাড়বে। এতে করে ফ্ল্যাটের দাম বেড়ে যাবে। দাম বাড়ার কারণে  ফ্ল্যাট বিক্রি কমবে। তাতে সরকারের রাজস্ব আয় কমবে। 

আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব নেতারা সম্প্রতি এ ইস্যুতে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এর আগে কয়েক দফা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে তারা খসড়া ‘ফার’ সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু রাজউক বলেছে, আবাসন ব্যবসায়ীসহ অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করেই খসড়া বিধিমালা করা হয়েছে। 

ফ্লোর এরিয়া রেশিও বা ফার অনুযায়ী, যে জমিতে ভবন তৈরি করা হবে, তার পাশের রাস্তা কতটুকু চওড়া, তা বিবেচনায় নিয়ে ভবন তৈরি করতে হবে। ভবনের উচ্চতা, ফ্ল্যাটের আয়তন, কতগুলো ফ্ল্যাট হবে– তা  নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে নতুন খসড়া বিধিমালায়।

বর্তমানে বিধিমালা অনুযায়ী পুরান ঢাকার একটি তিন কাঠার প্লটে যে উচ্চতার ভবন তৈরি করা যায়; গুলশান, বনানী কিংবা সাভারের একই পরিমাণ জমিতেও সে উচ্চতার ভবন করা যায়। কিন্তু নতুন খসড়া বিধিমালা অনুযায়ী, একই পরিমাণ জমিতে সমান উচ্চতার ভবন তৈরি করা যাবে না। এখানেই আপত্তি আবাসন ব্যবসায়ীদের। রাজউকের যুক্তি, জনঘনত্বের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ‘ফার’ নির্ধারণ করা হয়েছে। যেখানে জনসংখ্যার বসবাস বেশি, সেখানে ভবনের উচ্চতা কম হবে। 

আবাসন ব্যবসায়ীদের দাবি, এ বিধিমালা পাস হলে বর্তমানে যেসব ফ্ল্যাট প্রতি বর্গফুট ৬ থেকে ৭ হাজার টাকায় কেনা যাচ্ছে, দুই বছর পরে তা কিনতে হবে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায়। তাদের যুক্তি, নতুন বিধিমালা বাস্তবায়ন হলে কেউ চাইলেও পাঁচটির জায়গায় সাতটি ফ্ল্যাট করতে পারবেন না। যেমন– ২০ ফুট রাস্তার পাশে বাড়ি করা যাবে চার তলা পর্যন্ত। রাস্তা ২০ ফুটের কম হলে বাড়ি করা যাবে তিন থেকে সাড়ে তিন তলা পর্যন্ত। অর্থাৎ ফারের কারণে ভবনের উচ্চতা কমে যাচ্ছে। এতে করে জমির মালিকরা জমি দিতে আগ্রহী হবেন না। কারণ ডেভেলপাররা পুরোনো এক বা দুই তলাবিশিষ্ট ভবন ভেঙে সেখানে নতুন করে ভবন তোলেন। এ ক্ষেত্রে ভবনের উচ্চতা যদি তিন বা চার তলা হয় তাতে জমির মালিক খুব বেশি লাভবান হবেন না।

রিহ্যাব সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের বৈঠকেও ফারে সংশোধন আনার বিষয়ে রিহ্যাবের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়। এ বিষয়ে রিহ্যাব সভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান সমকালকে বলেন, আবাসন ব্যবসায়ীদের মতামত ছাড়াই বিধিমালার খসড়া প্রস্তুত করেছে রাজউক। রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে। এটি চূড়ান্ত না করার জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউককে অনুরোধ করেছেন। কারণ একেক এলাকায় একেক রকম ‘ফার’ নির্ধারণ করায় বৈষম্য তৈরি হয়েছে। 

রিহ্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ জমি নষ্ট না করে উল্লম্বভাবে ভবন তৈরির দিকে এগোচ্ছে।
কিন্তু বাংলাদেশ হাঁটছে উল্টোপথে। নতুন আইনে সাধারণ নাগরিক, ভূমি মালিক ও ভবন মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। 
রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ ও ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ঢাকাকে বাসযোগ্য করে তোলার জন্যই এ পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখানে জমি নষ্ট হওয়ার প্রশ্ন আসে না। তাছাড়া রিহ্যাবসহ এ খাতের পাঁচটি সংগঠনের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করে নীতিমালার খসড়া তৈরি করা হয়েছে। সব বৈঠকে সব পক্ষই উপস্থিত ছিলেন। হাজিরা খাতায় সবার স্বাক্ষর আছে। সবার সম্মতির ভিত্তিতে নীতিমালা করা হয়। এখন কেউ আপত্তি তুললে করার কিছু নেই।

আরও পড়ুন

×