ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

পুনর্গঠন করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

এক্সিম ব্যাংকের পর্ষদ থেকে বাদ পড়লেন মজুমদার

এক্সিম ব্যাংকের পর্ষদ থেকে বাদ পড়লেন মজুমদার

ফাইল ছবি

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২৪ | ১৭:৪৬ | আপডেট: ২৯ আগস্ট ২০২৪ | ২১:২৮

নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারকে সরিয়ে এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০০১ সাল থেকে টানা ২৩ বছর ধরে ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। তার স্ত্রী নাছরিন ইসলামকেও এক্সিম ব্যাংকের পরিচালক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব ব্যবস্থা নিয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে ১৬ বছর ধরে ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবির চেয়ারম্যানের পদে রয়েছেন নজরুল ইসলাম মজুমদার। 

এক্সমিক ব্যাংকের পুনর্গঠিত পাঁচ সদস্যের পর্ষদে আছেন উদ্যোক্তা পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম স্বপন, মো. নূরুল আমিন ও অঞ্জন কুমার সাহা। মজুমদারের নেতৃত্বাধীন পরিচালনা পর্ষদেও তারা পরিচালক ছিলেন। স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এস এম রেজাউল করিম এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট খন্দকার মামুনকে। আগের পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক ছিলেন স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের সাবেক এমডি মো. নাজমুস সালেহীন ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মিয়া মোহাম্মদ কাউছার আলম। আগের আট সদস্যের পরিচালনা পর্ষদে থাকা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বাদ পড়েছেন।

এক্সিম ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৯ সালে। ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন প্রয়াত শাহজাহান কবির। নজরুল ইসলাম মজুমদার ২০০১ সালে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর টানা প্রায় ২৩ বছর তিনি প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। নজরুল ইসলাম কয়েক দফায় ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে আজীবন পরিচালক থাকার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন বা অন্য কোনে অনৈতিক সুবিধার দরকার হলেই বিএবির চেয়ারম্যান হিসেবে ব্যাংকগুলোর সিএসআর তহবিলে নিয়ে হাজির হতেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনা ভারতে চলে যাওয়ার পরা তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।

বিএবি সূত্রে জানা গেছে, নজরুল ইসলাম মজুমদার ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকেসর (বিএবি) চেয়ারম্যান হন। এর আগে এ পদে ছিলেন ব্যাংক এশিয়ার তৎকালীন চেয়ারম্যান এম সাইদুজ্জামান। প্রভাব খাটিয়ে ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে নজরুল ইসলাম মজুমদার প্রথমে বিএবির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন। এরপর আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর চেয়ারম্যান হন। টানা বিএবির চেয়ারম্যান থাকা নিয়ে ২০১৩ সালে প্রশ্ন উঠলেও তিনি পদ ছাড়েননি। এরপর সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন হওয়ার কারণে কারণে কেউ আর এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নি। 

জানা গেছে, নাসা গ্রুপ ও এক্সিম ব্যাংক গড়ে ওঠে কয়েকজন বন্ধুর সম্মিলিত উদ্যোগে। তবে জাল চুক্তিনামার ভিত্তিতে নজরুল ইসলাম মজুমদার ২০১১ সালে জোর করে বন্ধু ও ব্যবসায়িক সহযোগী আলতাফ হোসেনসহ কয়েকজনের শেয়ার লিখে নেন। নজরুল ইসলাম মজুমদার অভিনব কায়দায় আলতাফ হোসেন ও তার স্ত্রীর স্বাক্ষর জাল করে ১০ কোটি ২০ লাখ টাকা ও দুটি গাড়ির বিনিময়ে এক্সিম ব্যাংকের যাবতীয় শেয়ার লিখে নেন। এছাড়া আলতাফের নামে থাকা ঢাকা ও আশুলিয়ার জমি কিনে নেন। 

নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট–বিএফআইইউ এরই মধ্যে নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রীর অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে। এছাড়া কোথায়  তার টাকা পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এক্সিম ব্যাংক ছাড়াও এরই মধ্যে ৬টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙ্গে পুনর্গঠন করে দিয়েছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোস্যাল ইসলামী, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইমলামী ও ন্যাশনাল ব্যাংক এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ পরিবারমুক্ত হয়েছে ইউসিবি।

আরও পড়ুন

×