ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

তামাক আইন সংশোধন প্রস্তাব নিয়ে অংশীজনদের উদ্বেগ

তামাক আইন সংশোধন প্রস্তাব নিয়ে অংশীজনদের উদ্বেগ

প্রতীকী ছবি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২৪ | ১৮:৪২ | আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২৪ | ২১:৫৪

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (২০১৩ সনে সংশোধিত) এর অধিকতর সংশোধনী আনতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আগের তৈরি খসড়া অনুমোদনের জন্য সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে। এ খসড়ার বিষয়ে ২০২৩ সালে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয় এবং খাত সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামত নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। জানা গেছে, খাত সংশ্লিষ্টদের মতামত না নিয়ে খসড়াটি উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের জন্য আবার পাঠানো হয়েছে।  

খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বর্তমানে তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য যে আইন রয়েছে, তা অত্যন্ত কার্যকরী। এই আইনের মাধ্যমে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমেছে। অন্যদিকে তামাক খাত থেকে রাজস্ব আয় উল্লেখযোগ্য বেড়েছে। বর্তমানে দেশের সার্বিক রাজস্ব আয় কমে গেছে। এ অবস্থায় খাত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া আইন সংশোধনের উদ্যোগ রাজস্ব আয়ের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এ খাতের ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। 

তারা জানান, তামাক ব্যবসা বাংলাদেশে একটি বৈধ ব্যবসা এবং এই খাত সরকার সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আয় করে। এই খাত থেকে ২০০৮ সালের সরকার ৪,৩০০ কোটি টাকা রাজস্ব পায়,  যা বতমানে বেড়ে প্রায় ১০ গুন হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শুধুমাত্র সিগারেট খাত হতে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব সরকার পেয়েছে যা এনবিআরের মোট আয়ের প্রায় ১২ শতাংশ এবং ভ্যাট থেকে আয়ের ৫৫ শতাংশ। আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী সুনির্দিষ্টভাবে শুধুমাত্র বৈধ সিগারেট শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার কমাতে কার্যকরী ভুমিকা পালন করবে না।

সংশোধিত আইনের খসড়ায় ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের সিগারেট বা তামাকজাতীয় পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব রয়েছে। আলাদা শলাকা বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে, অর্থাৎ খুচরা দোকানিকে পুরো প্যাকেট বিক্রি করতে হবে। সিগারেট বিক্রেতাদের স্থানীয় সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিক্রয়কেন্দ্রে সিগারেটের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া চায়ের দোকানকে উন্মুক্ত স্থান হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে সেখানে ধুমপান নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এসব প্রস্তাব কার্যকর হলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিম্ন আয়ের প্রায় ১৫ লাখ খুচরা বিক্রেতাসহ তাদের পরিবারের আরও প্রায় ৫০ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এর ফলে মূল উদ্দেশ্য অর্জিত না হয়ে বরং দেশের অর্থনীতির সংকটকে বাড়িয়ে তুলবে। কারণ এই মুহূর্তে রাজস্ব আয় কমে গেলে অর্থনীতিতে তার প্রভাব হবে মারাত্বক।

এ খাতের বিভিন্ন কোম্পানি এবং বিপণনের সঙ্গে সম্পৃক্তরা জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত সংশোধনীর বিভিন্ন ধারা কার্যকর হলে দেশে অবৈধ সিগারেটের ব্যবসা বিশাল আকার ধারণ করবে, যেখান থেকে সরকার কোনো ধরনের রাজস্ব পাবে না। স্বাভাবিকভাবে একটি বৈধ পণ্যের সহজলভ্যতার প্রক্রিয়া জটিল করে তুললে ক্রেতারা হয়রানি এড়াতে চোরাচালানের অবৈধ সিগারেটের দিকে ঝুঁকবে। তাদের দাবি, বর্তমান প্রেক্ষাপটে আইনের সংশোধনীর প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।  তা না হলে সরকারের সবচেয়ে সুরক্ষিত রাজস্ব আয় ঝুঁকির মুখে পড়বে এবং এ খাতে দেশি–বিদেশি বিনিয়োগ এবং লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে।

গত বছর জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতির (নাসিব) এক বৈঠকে তামাকজাত পণ্যের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স গ্রহণের প্রস্তাবে তীব্র আপত্তি জানানো হয়। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত কিছু সংশোধনী কার্যকর হলে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত লাখ লাখ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ব্যবসায়ী মারাত্বক সংকটে পড়বে বলে বৈঠকে জানানো হয়।

এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, তামাক খাতকেন্দ্রিক কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাজস্ব আয়ের বিবেচনা থাকা উচিত। কর আদায়ে হঠাৎ ধ্বস নামতে পারে এবং কর্মসংস্থানে আঘাত হানতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ এই মুহূর্তে নেওয়া উচিত হবে না। তামাকের ব্যবহার কমাতে সচেতনতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন। 

আরও পড়ুন

×