ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

অর্থনীতির শ্বেতপত্র

বেশি দুর্নীতি ব্যাংক খাতে

বেশি দুর্নীতি ব্যাংক খাতে

ছবি-সংগৃহীত

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৬:৪৯ | আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৭:২১

আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে ব্যাংক খাতে। রাজনৈতিক প্রভাবে ব্যাংক ঋণ এ খাতের সংকট তীব্র করেছে। গত জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতের সমস্যাগ্রস্ত ঋণের পরিমাণ ৬ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। এই অর্থ দিয়ে ২৪টি পদ্মা সেতু এবং ১৪টি মেট্রোরেল নির্মাণ সম্ভব।

বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন খাতে দুর্নীতি ও লুটপাটের বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এ প্রতিবেদনে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে ব্যাংক খাতে। এর পরে রয়েছে যথাক্রমে– ভৌত অবকাঠামো, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ এবং তথ্যপ্রযুক্তি। রাজনৈতিক প্রভাবে ব্যাংক ঋণ এ খাতের সংকট তীব্র করেছে। গত জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতের সমস্যাগ্রস্ত ঋণের পরিমাণ ৬ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। এই অর্থ দিয়ে ২৪টি পদ্মা সেতু এবং ১৪টি মেট্রোরেল নির্মাণ সম্ভব। ব্যাংক ঋণে ‘হাই প্রোফাইল’ কেলেঙ্কারি আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা নষ্ট করেছে এবং উৎপাদনশীল খাত থেকে পুঁজি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। বড় কিছু শিল্প গ্রুপ ভুয়া কোম্পানির নামে ঋণ নিয়ে তা আত্মসাৎ করেছে।

এতে বলা হয়, ব্যাংক খাতের সমস্যাগ্রস্ত ঋণের মধ্যে স্বীকৃত খেলাপি ঋণ ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা। পুনঃতপশিল ও পুনর্গঠন করা ঋণ ২ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। ঋণ অবলোপন হয়েছে ৭৫ হাজার কোটি টাকার। স্পেশাল মেনশন অ্যাকাউন্টে (খেলাপি হওয়ার আগের পর্যায়) ৩৯ হাজার কোটি টাকা। 

ভৌত অবকাঠামোতে দুর্নীতি বিষয়ে বলা হয়েছে, বড় আকারের প্রকল্পগুলোতে ৭০ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে। গত ১৫ বছরে এ ধরনের প্রকল্পে ৬০ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৭ লাখ কোটি টাকা) ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৬১ হাজার থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা রাজনৈতিক চাঁদাবাজি, ঘুষ এবং অতি মূল্যায়নের কারণে ক্ষতি হয়েছে।

কমিটি সার্বিকভাবে যেসব ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে, তার একটি তালিকা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে– ব্যাংক ঋণে জালিয়াতি, রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায় জোরপূর্বক ব্যাংক দখল, বিদেশে অর্থ পাচার, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অলাভজনক প্রকল্প, কৃত্রিমভাবে সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি, প্রতিযোগিতাহীন দরপত্র প্রক্রিয়া, কাজ পেতে ঘুষ, নিয়োগে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি, উন্নয়নের জন্য সরকারি তহবিল থেকে রাজনৈতিক তহবিল এবং নেতাদের ব্যক্তিগত তহবিলে স্থানান্তর, প্রভাবশালীদের কর ছাড়, কাজ পাইয়ে দিতে সরকারি কর্মকর্তাদের কমিশন ইত্যাদি।

এর আগে রোববার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। কমিটির প্রধান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করেন। এ সময় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর উপস্থিত ছিলেন। 

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সমকালকে বলেন, সোমবার (আজ) সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদন বিষয়ে তারা বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেবেন। প্রতিবেদন জমার সময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে তিনি অর্থনীতি সংস্কারে সব পদক্ষেপ সমন্বিতভাবে পূর্ণাঙ্গ উপস্থাপনের সুপারিশ করেছেন। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় ড. দেবপ্রিয় প্রধান উপদেষ্টাকে বলেন, তারা উন্মুক্ত ও স্বাধীনভাবে প্রতিবেদন প্রণয়ন করেছেন, যাতে কেউ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য খুঁজতে না পারে। তারা দেখেছেন, উন্নয়নের বয়ানের বড় ভিলেন ছিল তথ্য-উপাত্ত। প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ, রপ্তানিসহ অর্থনীতির বিভিন্ন তথ্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সাজানো হয়েছিল। দৃশ্যমান কিছু অবকাঠামো হয়েছে। কিন্তু প্রচুর পরিমাণ টাকা তছরুপ হয়েছে। অর্থনীতিতে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে, তা অনেক গভীর। রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও আমলাদের ত্রিমুখী আঁতাত অর্থনীতিতে সংস্কার আটকে দেয়।

আরও পড়ুন

×