শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদন
শেয়ারবাজার মানেই অনিয়মের আখড়া
এক লাখ কোটি টাকা লুট

ফাইল ছবি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:৪৪
বাংলাদেশের শেয়ারবাজার মানেই অনিয়মের আখড়া, যেখানে কারসাজিকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা হয়েছে। অন্যান্য দেশে যেখানে কোম্পানির মৌলভিত্তির ওপর ভিত্তি করে শেয়ারদর বাড়ে-কমে, এখানে তা দেখা যায় না। দেশে প্রভাবশালীরা নিজেদের স্বার্থে বাজারটিকে ব্যবহার করেছে। পারস্পরিক যোগসাজশে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা লুট হয়েছে, যা এ বাজারের প্রতি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট করেছে। অথচ কারসাজির সঙ্গে জড়িতরা আইনগত পদক্ষেপের মুখোমুখি হয়নি।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিবিষয়ক শ্বেতপত্র কমিটির খসড়া প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিভিন্ন খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্যসহ সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গত রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খসড়া প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
প্রতিবেদনে ‘শেয়ারবাজার: চিরকালই অগভীর এবং ভঙ্গুর’ শিরোনাম অংশে বলা হয়েছে, শেয়ার কারসাজি, প্লেসমেন্ট শেয়ার এবং আইপিও প্রক্রিয়ার প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে ট্রিলিয়ন টাকার দুর্নীতি হয়েছে। প্রভাবশালী উদ্যোক্তা, ইস্যু ম্যানেজার, অডিটর এবং বিনিয়োগকারীদের একটি নির্দিষ্ট শ্রেণি জড়িত হয়ে বড় ধরনের কারসাজি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। এ নেটওয়ার্ক ভাঙতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কাজ করেনি। উল্টো তাদের সহযোগিতা করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের শেয়ারবাজারে কারসাজি একটি অতি সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী বিনিয়োগকারী ও প্রতিষ্ঠান ‘সার্কুলার ট্রেড’-এর মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে শেয়ারের মূল্য বাড়ায়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর শেয়ার কারসাজিতে বাজারে বড় ধস নেমেছিল। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পরও একই ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তা ঠেকাতে বাস্তবমুখী কোনো পদক্ষেপ বা সংস্কার কার্যক্রম চালানো হয়নি।
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির মতে, এ বাজারের বিতর্কিত ব্যবসায়ীরা বা দুর্বল কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। বাজারের নিয়ম এবং বিধিগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন হয়নি। প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, ইস্যু ম্যানেজার, অডিটর এবং কিছু বিশেষ শ্রেণির বিনিয়োগকারীর মধ্যে একটি প্রতারণামূলক নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে, যেখানে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের কেউ কেউ অসৎভাবে সহযোগিতা করেছে।
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি মনে করে, বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সার্বিক কাঠামোগত সংস্কার করা প্রয়োজন। বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন এবং শক্তিশালী আইনগত কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে। যাতে বাজারে স্বচ্ছতা, সুরক্ষা এবং স্থিতিশীলতা আনা যায়।
- বিষয় :
- টাকা লুট