ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

বেশি দরে ডলার ক্রয়

১৩ ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা তলব

১৩ ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা তলব

ছবি-সংগৃহীত

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০৪:৫৪

বেশ কিছুদিন ১২০ থেকে ১২২ টাকায় স্থিতিশীল ছিল ডলার। গত দুই সপ্তাহে বেড়ে এখন ১২৬ টাকা ছাড়িয়েছে। বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে হঠাৎ বেশি দরে ডলার কিনছে এমন ১৩টি ব্যাংক চিহ্নিত করে সম্প্রতি তাদের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাখ্যা চাওয়ার তালিকায় রাষ্ট্রীয় মালিকানার দুটি এবং বেসরকারি খাতের ১১টি ব্যাংক রয়েছে। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত রেমিট্যান্সে ২৮ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি রয়েছে। রপ্তানি আয় বেড়েছে ১২ শতাংশের বেশি। আবার বিদেশি বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকে কম সুদের ঋণ মিলছে। এ অবস্থায় হঠাৎ ডলারের দর বৃদ্ধির বিষয়টি উদ্বেগের। হাতে যথেষ্ট ডলার রয়েছে এমন ব্যাংকও বেশি দরে ডলার কিনছে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে দর বাড়ানো হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ব্যাখ্যা তলব করা ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে– জনতা, রূপালী, ব্র্যাক, দ্য সিটি, ইস্টার্ন, শাহ্জালাল ইসলামী, ট্রাস্ট, মার্কেন্টাইল, যমুনা, ইউসিবি, এনসিসি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক। দেশের মোট রেমিট্যান্সের বড় অংশ আসে এসব ব্যাংকের মাধ্যমে। এর মধ্যে কোনো কোনো ব্যাংকে রেমিট্যান্স হঠাৎ করে ব্যাপক বেড়েছে। 

বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সমকালকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইএমএফের শর্ত পূরণ করতে রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য গত কয়েক দিনে বাজার থেকে প্রচুর ডলার কিনছে। আগের বকেয়া পরিশোধ করে দিতে বলা হচ্ছে। আবার রমজান সামনে রেখে এখন ডলারের চাহিদা বেড়েছে। আবার আইএমএফও চায় ডলার দরে উঠানামা করুক। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দর নিয়ে শিথিলতা দেখাচ্ছিল। এ সুযোগে কোনো ব্যাংক বাড়তি দরে ডলার কেনা শুরু করে। এর ফলে দর বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো সামান্য সংকট দেখলেই তারা দর বাড়িয়ে দেয়। ডলারের দর বৃদ্ধির এটিও একটি কারণ হতে পারে।

আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত মেনে গত ৮ মে ডলার বেচাকেনায় ‘ক্রলিং পেগ’ চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই দিন একবারে ৭ টাকা বাড়িয়ে ডলারের মধ্যবর্তী দর ১১৭ টাকা করা হয়। তখন মৌখিকভাবে বলা হয়, ১১৭ টাকার সঙ্গে ১ টাকা যোগ বা বিয়োগ করে ডলার বেচাকেনা করা যাবে। এর পর সরকার পরিবর্তনের পর ১১৭ টাকার সঙ্গে আড়াই শতাংশ তথা ১২০ টাকা দরে ডলার বিক্রির সুযোগ দেওয়া হয়। এমন দরেই ডলার বেচাকেনা হচ্ছিল। এর মধ্যে ৫ ডিসেম্বর আইএমএফের টিম ঢাকায় এসেছে। তারা ডলারের দর উঠানামা না দেখে প্রশ্ন তোলে। বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দেয়। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ডিসেম্বর মাসের ১৮ দিনে আরও ১৮৬ কোটি ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। আগের বছরের ডিসেম্বরের একই সময়ের তুলনায় যা ৪২ দশমিক ২২ শতাংশ বেশি। আর জুলাই থেকে ১৮ ডিসম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স ঠেকেছে ১ হাজার ২৯৯ কোটি ডলারে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে যা ২৮৮ কোটি ডলার বা ২৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেশি। যে কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। গত বুধবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার। 

গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে একবার বেশি দরে ডলার কেচাকেনা করায় ১৩ ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা তলব করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২১ সালে অতিরিক্ত মুনাফা করার অভিযোগে ১২টি ব্যাংকের মুনাফার ৫০০ কোটি টাকা সিএসআর খাতে ব্যয়ের নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই তালিকায় বিদেশি মালিকানার দুটি এবং বেসরকারি খাতের ১০টি ব্যাংক ছিল।

বিগত সরকারের সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক দিন ধরে ডলারের দর কৃত্রিমভাবে ৮৪ থেকে ৮৬ টাকায় ধরে রেখেছিল। একই সঙ্গে রিজার্ভ বাড়াতে তখন প্রচুর বিদেশি ঋণের অনুমোদন দেওয়া হয়। এভাবে রিজার্ভ বেড়ে ২০২১ সালের আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। তবে করোনা পরবর্তী অর্থনীতিতে বাড়তি চাহিদা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর তা আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। ২০২১ সালের আগস্ট থেকে ডলারের দর বেড়ে এ পর্যায়ে এসেছে।

আরও পড়ুন

×