ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা ও পর্ষদে পরিবর্তন আসছে

গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা ও পর্ষদে পরিবর্তন আসছে

লোগো

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ | ০২:৩৯

নোবেলজয়ী ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা কাঠামো ও পর্ষদে বড় পরিবর্তন আসছে। প্রতিষ্ঠানটিতে সরকারের অংশীদারিত্ব ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। একই সঙ্গে পরিচালনা পর্ষদে চেয়ারম্যানসহ তিনজন পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার সরকারি ক্ষমতা কমিয়ে একজন পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ রাখা হচ্ছে। এ জন্য গ্রামীণ ব্যাংক আইন, ২০১৩ সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি হচ্ছে। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওয়েবসাইটে নতুন অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে। খসড়া অধ্যাদেশ অনুযায়ী ব্যাংকে সরকারের অংশীদারিত্ব এবং বোর্ডের প্রতিনিধিত্ব ২০১১ সালের আগের কাঠামোতে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। অধ্যাদেশ চূড়ান্ত করতে ইতোমধ্যে অংশীজনের মতামত নেওয়া হয়েছে। মতামত পর্যালোচনার আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে সম্প্রতি একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকও হয়েছে। শিগগির অধ্যাদেশটির চূড়ান্ত খসড়া উপদেষ্টা কাউন্সিলের বৈঠকে নীতিগত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। এরপর আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং ও উপদেষ্টা কাউন্সিলের চূড়ান্ত অনুমোদন সাপেক্ষে অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে।  

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ২০১১ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। তাঁর অবসরের বয়স পেরিয়ে গেছে কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল আওয়ামী সরকার।

বর্তমান আইনে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সর্বোচ্চ ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে পারেন। প্রস্তাবিত খসড়ায় এ বিধান বহাল রাখা হয়েছে। তবে এতে নতুন একটি শর্ত যুক্ত করে বলা হয়েছে, বোর্ডের অনুমোদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মেয়াদ সর্বোচ্চ ৬৫ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে, যদি ব্যাংকের কার্যক্রমে তা প্রয়োজনীয় মনে হয়।

বর্তমান আইনে গ্রামীণ ব্যাংকের ২৫ শতাংশ মালিকানা সরকারের এবং বাকি ৭৫ শতাংশ ঋণগ্রহীতাদের। তবে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে ঋণগ্রহীতাদের কাছে ব্যাংকের ৯৫ শতাংশ শেয়ার হস্তান্তরের পরিকল্পনার কথা রয়েছে। খসড়ায় বলা হয়েছে, ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ৩০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হবে। ঋণগ্রহীতারা ধীরে ধীরে মূলধনে নিজেদের অবদান বাড়িয়ে ৯৫ শতাংশ মালিকানা অর্জন করবেন। বোর্ড ঘোষিত যে কোনো লভ্যাংশ মূলধনের ভিত্তিতে আনুপাতিকভাবে বিতরণ করা হবে।

সূচনালগ্ন থেকেই গ্রামীণ ব্যাংকের ১২ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদে চেয়ারম্যানসহ সরকারের মনোনীত তিনজন পরিচালক এবং ঋণগ্রহীতাদের মধ্য থেকে নির্বাচিত ৯ জন পরিচালক রয়েছেন। খসড়া অধ্যাদেশে বোর্ডে ঋণগ্রহীতাদের ১১ জন পরিচালক নির্বাচনের সুযোগ রয়েছে। বর্তমান আইনে বোর্ডের চেয়ারম্যান নিয়োগের ক্ষমতা সরকারের হাতে রয়েছে। অধ্যাদেশের খসড়ায় চেয়ারম্যান নির্বাচনের ক্ষেত্রে বোর্ডের সদস্যদের মধ্য থেকেই নির্ধারণের বিধান রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বর্তমান আইনে পরিচালকদের মেয়াদ তিন বছর নির্ধারিত রয়েছে। খসড়া অধ্যাদেশে তা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। তবে নতুন একটি বিষয় সংযোজন করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, নবনির্বাচিত পরিচালকরা তাদের দায়িত্ব গ্রহণ করার আগ পর্যন্ত নির্বাচিত পরিচালকরা তাদের পদে থাকবেন। গ্রামীণ ব্যাংকের নতুন আঞ্চলিক অফিস খোলার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। খসড়া অধ্যাদেশে শর্তটি তুলে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বর্তমান আইনে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জোবরা গ্রামে ড. ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের কোনো উল্লেখ নেই। তবে খসড়া অধ্যাদেশে আইনের ধারা ৪-এ একটি ব্যাখ্যা যুক্ত করে এটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নতুন ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্প বলতে ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধীনে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার জোবরা গ্রামে পরিচালিত ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমকে বোঝায়। এ প্রকল্প পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পায় এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক এতে অংশগ্রহণ করে। 

আরও পড়ুন

×