গভর্নর বললেন
পাচার অর্থ ফেরাতে আপসের পথ ভাবছে সরকার

আহসান এইচ মনসুর
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৫ | ০২:০৯ | আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৫ | ০৭:৪৫
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, পাচার হওয়া অর্থ আপসের মাধ্যমে ফেরত আনার বিষয়টি বিবেচনা করছে সরকার। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি। ‘অর্থ পাচার প্রতিরোধ ও সমসাময়িক ব্যাংকিং ইস্যু’ নিয়ে এ আয়োজন করা হয়।
গভর্নর বলেন, ‘দীর্ঘসূত্রতার কারণে আইনি পথে অর্থ ফেরত আনা সময়সাপেক্ষ হয়ে পড়ে। অনেক দেশই আইনি কাঠামোর বাইরে বিকল্প উপায়ে ব্যবস্থা নেয়। আপসের মাধ্যমে টাকা ফেরত আনা গেলে তা অনেক দ্রুত হয়।,
তিনি বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়া হোক বা আপসের মাধ্যমে, যেভাবেই হোক, তার আগে কোন দেশে কত সম্পদ পাচার হয়েছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। যত বিস্তারিত তথ্য থাকবে, তত ভালোভাবে দরকষাকষি করা যাবে।’
এ উদ্দেশ্যে কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান গভর্নর। তিনি বলেন, ‘এসব প্রতিষ্ঠান পাচার হওয়া সম্পদ শনাক্ত করতে আমাদের সহায়তা করছে। তথ্য সংগ্রহের পর সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারি সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করব। সে দেশের আইনি কাঠামো মেনেই আমাদের কাজ করতে হবে। ইতোমধ্যে যোগাযোগ শুরু হয়েছে এবং তাদের পক্ষ থেকেও ইতিবাচক সাড়া মিলছে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, ‘চট্টগ্রামের একটি বৃহৎ ব্যবসায়িক গ্রুপ এস আলম প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি থেকে দেড় লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। বেক্সিমকোসহ আরও কয়েকটি বড় গ্রুপকে যুক্ত করলে এই অঙ্ক দাঁড়াতে পারে আড়াই থেকে ৩ লাখ কোটি টাকায়। দেশের প্রায় ৫ লাখ কোটি টাকার অপ্রদত্ত ঋণের একটি বড় অংশ পাচার হয়েছে। অবশিষ্ট অর্থ পাচার না হলেও এখনও আদায় করা যায়নি। এই অর্থ আদায়ের জন্য অর্থঋণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
অর্থ পাচারে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অনুমান বা অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। যদি দুদক বা রাষ্ট্রের কোনো সংস্থা প্রমাণসহ অভিযোগ দেয়, তখন তা বিবেচনা করা হয়।’
দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে জানিয়ে গভর্নর বলেন, ‘বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো। রিজার্ভ, মুদ্রাস্ফীতি, রপ্তানি আয়– সবকিছু ইতিবাচক প্রবণতায় রয়েছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রামের উপপরিচালক মো. জোবাইর হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. জামাল উদ্দিন, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম, পরিচালক মো. আনিসুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রামের পরিচালক মো. সালাহ উদ্দীন প্রমুখ।