ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

গ্রন্থ প্রকাশ অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা

কাঠামোগত সংস্কারের অভাবে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি

কাঠামোগত সংস্কারের অভাবে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি

শনিবার রাজধানীর বনানী শেরাটন হােটেলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট আয়ােজিত গ্রন্থ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা ফটাে রিলিজ

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ মে ২০২৫ | ০১:০২

দেশে কাঠামোগত সংস্কারের অভাবে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। এর ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কথা শোনা গেছে। কিন্তু বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সে তুলনায় হয়নি। অন্যদিকে  বৈষম্য প্রকট হয়েছে। ‘বাংলাদেশ ২০৩০: অংশীদারিত্বমূলক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা এমন মত দিয়েছেন। গতকাল শনিবার রাজধানীর হোটেল শেরাটন, ঢাকায় এর আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআই)। প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পিআরআই চেয়ারম্যান জায়েদী সাত্তার।

অনুষ্ঠানে লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, ‘যেদিকে তাকাই না কেন, কোনো সিন্ডিকেটকে সক্রিয় দেখি। আমরা এসব জায়গায় কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে পারছি না। কারণ, আমলারা তাদের সুবিধাজনক কাঠামো ভাঙতে চান না। আবার অনেক ব্যবসায়ী কাঠামোগত পরিবর্তনের কথা বলেন। অথচ তারা নিজেরাই সুবিধা নেওয়ার তদবির করে থাকেন, যা পুরো পরিবর্তনের প্রয়াসকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। অর্থনীতির অবস্থা জানার শ্বেতপত্র এবং অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ-সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সুপারিশের আলোকে অনেক প্রতিষ্ঠানে সংস্কার আনা হয়েছে। এ বিষয়ে কাজ অব্যাহত আছে। 
প্রকাশিত গ্রন্থের লেখক এবং পিআরআইর ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ বলেন, দেশের জাতীয় উন্নয়নযাত্রা কিছু সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক শাসনের অভাব, দুর্নীতি, পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাব, আয় বৈষম্য বৃদ্ধি প্রভৃতি বিষয় স্থিতিশীলতা ও টেকসই উন্নয়নের জন্য হুমকি। এই গ্রন্থে এসব চ্যালেঞ্জের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, গত শাসন আমলে দেশে রাজনীতিক, ব্যবসায়ী এবং সামরিক-বেসামরিক  আমলাতন্ত্র মিলে একটি শক্তিশালী স্বার্থবাদী চক্র তৈরি করেছে। তাদের সুবিধা, নিরাপত্তা ও ক্ষমতা ভোগের জন্য সরকারি নীতি নেওয়া হয়েছে, যা অর্থনীতিকে সঠিকভাবে কার্যকর হতে দেয়নি। মূলত এ কারণেই কোনো ক্ষেত্রে কাঠামোগত সংস্কার  হয়নি। যদিও সংস্কারের কথাও বহুদিন ধরেই বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক, দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড প্রভৃতি জায়গায় সেখানে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন দেখা যায়নি। পাশাপাশি সংসদ, বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। আবার  অর্থনীতির যতটুকু উন্নতি হয়েছে, তার চেয়ে বেশি উন্নয়ন হতে পারত। যতটুকুই উন্নতি হয়েছে, তার মধ্যে অসমতা ছিল দৃষ্টিকটু পর্যায়ের। 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, সংস্কারের ক্ষেত্রে মূল সমস্যা হলো রাজনৈতিক দলগুলোর অনাগ্রহ। দেখা যায়, রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষুদ্র পরিসরের কিছু সংস্কারে আগ্রহী হলেও বৃহৎ বা কাঠামোগত সংস্কারে রাজি থাকে না। এ প্রবণতা গত দুই দশক বা তারও বেশি সময় ধরে চলমান। এটি কোনো একক রাজনৈতিক দলের সমস্যা নয়, বরং প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলেরই বৈশিষ্ট্য। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নাগরিক সমাজ  কিংবা সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকেও জোরালো দাবি  তোলা  হয়নি। তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময় গঠিত শ্বেতপত্র ও টাস্কফোর্সের সুপারিশগুলোও  বাস্তবায়ন হচ্ছে না, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। 

এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, দেশে করব্যবস্থার সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার হয়েছিল ২০১১ সালের দিকে। উচ্চ শুল্ক ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে অন্যতম বড় বাধা। আমরা এখন মুক্তবাণিজ্য চুক্তির কথা বলছি। কিন্তু এর জন্য অন্যতম বড় বাধা উচ্চ করহার। 
আইএফসির কান্ট্রি ম্যানেজার মার্টিন হল্টম্যান বলেন, মানবসম্পদ উন্নয়নে গুণগত শিক্ষা এবং কর্মমুখী শিক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে বাংলাদেশকে। 

আরও পড়ুন

×