ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

২০২৫-২৬ বাজেট

প্রাথমিক শিক্ষায় বরাদ্দ কম, বাড়তি গুরুত্ব কারিগরি ও মাদ্রাসায়

প্রাথমিক শিক্ষায় বরাদ্দ কম, বাড়তি গুরুত্ব কারিগরি ও মাদ্রাসায়

প্রতীকী ছবি

সাব্বির নেওয়াজ

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫ | ১৫:৫১ | আপডেট: ০২ জুন ২০২৫ | ২০:৪২

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দেশের শিক্ষা খাতে একটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা খাতে বড় অঙ্কের বরাদ্দ কমিয়ে বরং গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষায়।

আজ সোমবার জাতীয় সংসদে ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। আগের বছরের মূল বাজেটের তুলনায় এটি প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম হলেও সংশোধিত বাজেটের চেয়ে প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা বেশি।

প্রাথমিক শিক্ষায় বরাদ্দ হ্রাস, উদ্বেগের কারণ: অর্থ উপদেষ্টার বাজটে বক্তব্যে  ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। যা আগের বছরের মূল বাজেটের তুলনায় ৩ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা কম।
এটি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। তবে সংশোধিত বাজেটের তুলনায় প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা বেশি।

যদিও সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ কমিয়ে ৩৫,১২৩ কোটি টাকা করা হয়েছিল, তবুও অর্থনৈতিক সংকট এবং মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে এই বরাদ্দ অনেকেই পর্যাপ্ত মনে করছেন না। বিশেষ করে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা, অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ এবং পাঠ্যবই সরবরাহে এই ঘাটতি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

মাধ্যমিক, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষায় বরাদ্দ বৃদ্ধি: অন্যদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে বরাদ্দ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় ৩ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষায় ৮৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে।

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে বরাদ্দ বাড়িয়ে ৪৭ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৪৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৩ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা বেশি। যদিও গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ খাতের বরাদ্দ দাঁড়িয়েছিল ৩৯ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা।

কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ পেয়েছে ১২ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা, যা আগের বছরের মূল বাজেটে ছিল ১১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। যদিও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা খাতের জন্য বরাদ্দ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা।

সরকারি সূত্র জানায়, বিগত কয়েক বছর ধরেই মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী ভর্তি বাড়ছে। ২০২৩ সালের জরিপ অনুযায়ী দেশে মোট ৯,২৫৬টি মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী সংখ্যা ৪১ লাখ ২৬ হাজার ৬২৬ জন, যা গত দুই দশকে সর্বোচ্চ। এই প্রবণতা এবং দীর্ঘদিনের অবহেলার প্রেক্ষিতে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

ব্যানবেইসের ২০২৩ সালের জরিপ অনুযায়ী—বর্তমানে দেশে মোট মাদ্রাসার সংখ্যা ৯ হাজার ২৫৬টি। মাদ্রাসায় ভর্তি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪১ লাখ ২৬ হাজার ৬২৬ জন, যা দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। ফলে মাদ্রাসা শিক্ষাখাতে এবার বরাদ্দও বাড়লো।

এই পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থী সংখ্যা মাদ্রাসার প্রায় পাঁচ গুণ বেশি হলেও বরাদ্দ কমানো হয়েছে এই খাতে। ফলে প্রশ্ন উঠছে—বরাদ্দ নির্ধারণে কী বিবেচনায় অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে?

শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাথমিক শিক্ষায় বিনিয়োগ হ্রাসের অর্থ ভবিষ্যৎ মানবসম্পদ গঠনের ভিত্তি দুর্বল করা। একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনের ভিত্তিপ্রস্তর নির্মাণ হয় এই স্তরেই। ফলে এই খাতে ব্যয় সংকোচনের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি এবং বহুমাত্রিক হতে পারে।

অন্যদিকে, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানো অবশ্যই প্রয়োজনীয় ও সময়োপযোগী, তবে সেটি প্রাথমিক শিক্ষাকে সংকটে ফেলে নয়—এই ভারসাম্য রক্ষা করাই এখন মূল চ্যালেঞ্জ।

২০২৫-২৬ বাজেট শিক্ষা খাতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি তুলে ধরলেও বরাদ্দের বৈষম্য এবং অগ্রাধিকারের পুনর্বিন্যাস নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিশ্লেষকরা।

প্রাথমিক শিক্ষা অবহেলিত হলে শিক্ষাক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি বৈষম্য ও সক্ষমতা ঘাটতি তৈরি হতে পারে, যা ভবিষ্যৎ উন্নয়ন লক্ষ্যের পথকে কঠিন করে তুলবে।

আরও পড়ুন

×