ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

দুই কিস্তি অনুমোদন, বাড়তি ঋণও দিচ্ছে আইএমএফ

দুই কিস্তি অনুমোদন, বাড়তি  ঋণও দিচ্ছে আইএমএফ

কোলাজ

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৫ | ০০:৪৯ | আপডেট: ২৫ জুন ২০২৫ | ০৮:০৭

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল- আইএমএফ শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য চলমান ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের অনুমোদন দিয়েছে। গত ৬ মাস ধরে শর্ত বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে আটকে ছিল। গত সোমবার ওয়াশিংটনে আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকে দুই কিস্তির ১৩৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার ছাড়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের অনুরোধে চলমান কর্মসূচির অধীনে ৮০ কোটি ডলার বাড়তি ঋণ অনুমোদন করেছে আইএমএফ। কিস্তি দেরি হওয়ায় এবং বাড়তি সহায়তার কারণে ঋণের মেয়াদ ৬ মাস বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশ সব মিলিয়ে ঋণ নেবে ৫৫০ কোটি ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী যার পরিমাণ ৬৭ হাজার কোটি টাকা। কর্মসূচি শেষ হবে আগামী বছরের ডিসেম্বর মাসে।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে এবং সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনার উদ্দেশ্যে আইএমএফ ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের  জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করে। কর্মসূচির মেয়াদ ছিল ৪২ মাস। ঋণের প্রথম তিন কিস্তি স্বাভাবিকভাবে দেওয়ার পর চতুর্থ কিস্তি আটকে যায়। এর পেছনে ছিল রাজস্ব আয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না করা এবং বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করতে দেরি হওয়া। দুই শর্তের মধ্যে রাজস্ব সংগ্রহ নিয়ে আইএমএফ ছাড় দিতে রাজি ছিল। মূলত টাকা-ডলার বিনিময় হার ইস্যুতে সমঝোতা না হওয়ায় কিস্তি আটকে যায়। দীর্ঘ আলোচনার পর এ বিষয়ে সমঝোতা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক গত মাসে বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করে। এর ফলে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড়ের অনুমোদন দেওয়া হলো।

চলমান ঋণ কর্মসূচির দুই কিস্তির ১৩৪ কোটি ডলার ছাড় করার অনুমোদনের সঙ্গে বাড়তি ৮০ কোটি ডলার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল- আইএমএফ। এতে করে বাংলাদেশের অনুকূলে সংস্থাটির মোট ঋণ দাঁড়াবে ৫৫০ কোটি ডলার। চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ছাড় দু-এক দিনের মধ্যে হবে। ফলে পাঁচটি কিস্তিতে বাংলাদেশ পেল ৩৬৮ কোটি ডলার। আইএমএফ বলেছে, বাড়তি ঋণ অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষিত রাখার লক্ষ্যে দেওয়া হয়েছে। পর্ষদের বৈঠকে কিছু ক্ষেত্রে শর্ত বাস্তবায়ন না হওয়ার বিষয়টি মেনে নেওয়া হয়েছে এবং কিছু ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করা হয়েছে, যা পরে জানা যাবে। 
দুই কিস্তি অনুমোদনের পর আইএমএফ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ২০২৪ সালের আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের পর দ্রুত অন্তর্বর্তী সরকার গঠন রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক হয়। ফলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে পর্যায়ক্রমে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। চলমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি, বাণিজ্যে ক্রমবর্ধমান বাধা এবং ব্যাংকিং খাতে চাপ বাড়ার কারণে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা আগের চেয়ে কমেছে।

আইএমএফের ডিএমডি এবং পর্ষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ার নাইজেল ক্লার্ক বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় নীতি কার্যক্রম ও সংস্কার বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মুদ্রা বিনিময় হার নিয়ে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ এবং বাজেটে রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগকে স্বাগত জানায় আইএমএফ। কঠিন রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত এবং বর্ধিত নিম্নমুখী ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে আইএমএফের ঋণ কর্মসূচিসংক্রান্ত অগ্রগতি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সন্তোষজনক। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার, ঝুঁকিগ্রস্ত মানুষকে রক্ষা করা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং পরিবেশবান্ধব টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য সংস্কার এজেন্ডা এগিয়ে নেওয়া গুরুত্বপর্ণ।

জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস
আইএমএফের বিজ্ঞপ্তিতে অর্থনীতির বেশকিছু সূচক নিয়ে তাদের হালনাগাদ পূর্বাভাস উল্লেখ করেছে। আইএমএফ মনে করছে, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছর বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৪ শতাংশ হতে পারে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য আইএমএফ প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশ প্রাক্কলন করেছে।  সংস্থাটি বলেছে, আগামী অর্থবছর শেষে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়াবে ৬ দশমিক ২ শতাংশ।

কিস্তি যে কারণে আটকে ছিল
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির মধ্যে বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ) ও বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) রয়েছে। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ও ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পায়। তিন কিস্তিতে আইএমএফ ছাড় করে ২৩১ কোটি ডলার।

আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ গত বছরের ডিসেম্বরে পাওয়ার কথা থাকলেও শর্ত পরিপালন নিয়ে বিশেষত টাকা-ডলার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। গত এপ্রিলে আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল শর্ত পালনের অগ্রগতি পর্যালোচনায়  ঢাকায় আসে। তবে সমঝোতা না হওয়ায় চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় আটকে যায়। এর পর ওয়াশিংটনে গত ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হয়।

গত মাসে এ নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে কয়েকটি ভার্চুয়াল বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১২ মে দুই পক্ষের চূড়ান্ত সমঝোতা হয় এবং বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করে বাংলাদেশ। 

আরও পড়ুন

×