ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

সাক্ষাৎকার: আব্দুল হাই সরকার

উদ্দেশ্য ভালো বলেই ঢাকা ব্যাংক সুনামের সঙ্গে টিকে আছে

উদ্দেশ্য ভালো বলেই ঢাকা ব্যাংক সুনামের সঙ্গে টিকে আছে

আব্দুল হাই সরকার

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৫ | ০১:২৬

আগামী ৫ জুলাই প্রতিষ্ঠার তিন দশক পূর্ণ করছে ঢাকা ব্যাংক। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবিরও চেয়ারম্যান। তিনি পূর্বাণী গ্রুপের কর্ণধার ও বিটিএমএর সাবেক সভাপতি। ঢাকা ব্যাংক ও সমসাময়িক নানা বিষয়ে সমকালের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ওবায়দুল্লাহ রনি

সমকাল : ৩০ বছর পূর্ণ করছে ঢাকা ব্যাংক। এই মাইলফলক কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

আব্দুল হাই সরকার: ১৯৮৪ সালে এরশাদ সরকারের আমলে বেসরকারি খাতে ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার জন্য আবেদন চাওয়া হয়। ওই সময় ৪১টি আবেদন জমা পড়ে, যার একটি ঢাকা ব্যাংক। পরে বিএনপি সরকার এসে ঢাকা ব্যাংকসহ কয়েক ধাপে সাতটি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়। ভালো গ্রাহকসেবা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এ ব্যাংকের যাত্রা হয়। উদ্দেশ্য ভালো বলেই নানা ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্যে ঢাকা ব্যাংক সুনামের সঙ্গে টিকে আছে। কোনো সরকারের আমলেই ব্যাংকটি উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়নি। 

সমকাল: আপনারা কোন বিষয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন?

আব্দুল হাই সরকার: আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো– গ্রাহক ব্যাংকে এসে বসে থাকবে না। বরং ব্যাংকই গ্রাহকের দোরগোড়ায় যাবে। সেই উদ্দেশ্য থেকে আমরা এখনও বিচ্যুত হইনি। আমরা পরিপূর্ণভাবে ‘পেপারলেস ডিজিটাইজ’ ব্যাংকিং করার দিকে যাচ্ছি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত আংশিক করেছে। দুবাই, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে পুরোপুরি আছে। এসব দেশে গ্রাহকরা কোনো সেবা নিতে গেলে ব্যাংকার তার কাছে গিয়ে কী করতে হবে বলে দেয়। আমাদের এখানে বলা হয়, ওই কাজ করে আসো। অথচ ব্যাংকের দায়িত্ব গ্রাহক কীভাবে কী করবে, তার পরামর্শ দেওয়া। চলমান ধারা থেকে ঢাকা ব্যাংক বেরিয়ে ডিজিটাইজ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছে।

সমকাল: বাংলাদেশে গত বছরের আগস্টে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তনের বিষয়টি আপনাদের ব্যাংকে কোনো প্রভাব ফেলেছে? 

আব্দুল হাই সরকার: সরকার পতনের পর আর ভয় পাই না। আগে ভয় পেতাম। ভাবতাম কোন সময় কে ঢাকা ব্যাংক নিয়ে যায়। যেহেতু ব্যাংকটিকে বিএনপির ব্যাংক হিসেবে রাজনৈতিক একটা রং দেওয়া হয়েছিল, সংগত কারণে আমরা ভয় পেতাম। গত সরকারের আমলে একটি শিল্পগোষ্ঠী এই ব্যাংক দখল করে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। বাজারে এমন গুজবও ছড়িয়ে দেওয়া হয় যে, আমি নাকি ঢাকা ব্যাংকের শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছি।

সমকাল: প্রভিশন ঘাটতি রেখে এবার ঢাকা ব্যাংককে লভ্যাংশ দেওয়ার বিষয়টি কীভাবে দেখেন? 

আব্দুল হাই সরকার: সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক লভ্যাংশ দেওয়ার সুযোগ দিয়েছে। ঢাকা ব্যাংকের সামান্য যে প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে শিগগিরই তা মিটিয়ে ফেলা হবে। 

সমকাল: ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমাতে আপনার পরামর্শ জানতে চাই। 

আব্দুল হাই সরকার: ইচ্ছাকৃত খেলাপিরা ঋণ নিয়ে আত্মীয়স্বজনের নামে সম্পদ করেছে। এদের ধরতে হলে আত্মীয়স্বজনের অস্বাভাবিক সম্পদের উৎস খতিয়ে দেখা উচিত। সারাদেশে চার থেকে পাঁচটি অর্থঋণ আদালত রয়েছে। অর্থ ঋণ আদালতের বিচারক নানা কারণে অনুপস্থিত থাকেন। খেলাপি ঋণ আদায়ে শুধু ঢাকায় অন্তত ২০টি অর্থঋণ আদালত দরকার। সম্পদ বিক্রি করতে গেলে খেলাপিরা দেশের বাইরে বসে আইনজীবীর মাধ্যমে কিছুদিন পর পর উচ্চ আদালতে রিট করেন। যে ব্যাংকের টাকা মেরে বিদেশে পালিয়েছে, তার এ ধরনের অধিকার থাকা উচিত নয়। চট্টগ্রামভিত্তিক ১০ থেকে ১২টি প্রতিষ্ঠান ঢাকা ব্যাংকের ২ হাজার কোটি টাকার মতো নিয়ে পালিয়েছে। এরা ঢাকা ব্যাংককে বিপদে ফেলেছে। 

সমকাল: কয়েকটি ব্যাংক একীভূতকরণের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যােগ নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

আব্দুল হাই সরকার: একটি ব্যাংক বাঁচার পূর্বশর্ত হলো আমানতকারী। ব্যাংকের প্রতি আমানতকারীদের আস্থা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একবার আস্থা হারালে, তা ফেরানো অনেক কঠিন। একীভূতকরণের আইডিয়া ভালো। তবে কতটুকু সফল হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দেশে অনেক ভালো ব্যাংক রয়েছে। ফলে এসব ব্যাংক একীভূতকরণ করলেই আমানত পাবে, তার নিশ্চয়তা নেই। আবার সরকার এখন ট্রেজারি বিলে সাড়ে ১২ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। এ অবস্থায় ব্যাংকে আমানত আসবে কীভাবে।

আরও পড়ুন

×