ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

১১ মাসের পতন শেষে বাড়ছে শেয়ারদর

১১ মাসের পতন শেষে বাড়ছে শেয়ারদর

কোলাজ

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৫ | ০০:৪৪

মন্দ দিন কি ফোরালো, ঘুরে দাঁড়াচ্ছে কি শেয়ারবাজার– গত এক মাসে শেয়ারদরে ঊর্ধ্বমুখী ধারা দেখে এমন সব প্রশ্ন ঘুরছে বিনিয়োগকারীর মধ্যে। গত ২৯ মে থেকে ৩ জুলাই সময়ে তালিকাভুক্ত ৩৬০ কোম্পানির মধ্যে ২৯৩টির দর বেড়েছে। এর মধ্যে অন্তত ১০ শতাংশ দর বেড়েছে ৮৮টির। এসব কোম্পানির শেয়ারই এর আগের ১১ মাসে কমপক্ষে ৮ থেকে ৬০ শতাংশ দর হারিয়েছিল।
সর্বশেষ ১৯ কর্মদিবসের মধ্যে ১৪ দিনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৪৪৮ পয়েন্ট বেড়েছে। বাকি ৫ দিনে সূচক কমেছে ১৬৯ পয়েন্ট। সাকল্যে সূচক বেড়েছে ২৭৮ পয়েন্ট বা ৬ শতাংশ। আবার টাকার অঙ্কের শেয়ার কেনাবেচাও বেড়ে দ্বিগুণে উন্নীত হয়েছে। গত ২৯ মে ২৪৭ কোটি টাকা মূল্যের শেয়ার কেনাবেচা হয়েছিল। গত ৩ জুলাই তা বেড়ে ৫০৬ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রথম চার দিন শেয়ারবাজারে বেশ তেজি ভাব ছিল, সূচক বেড়েছিল ৭৮৬ পয়েন্ট। ওই সময় যেসব কারসাজি চক্রের হাতে বাজারের নিয়ন্ত্রণ ছিল, পরে তারা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।

তাদের অনুসারীরাও বিনিয়োগ প্রত্যাহার করতে থাকেন। এর নেতিবাচক প্রভাবে মন্দায় পড়ে শেয়ারবাজার। এর মধ্যে একের পর এক যুদ্ধ এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাড়তি শুল্ক আরোপ পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছিল। অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও সামষ্টিক অর্থনীতি চিন্তার ভাঁজ ফেলেছিল বিনিয়োগকারীদের কপালে। মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে সুদের হার বাড়ালে কৌশলী বড় বিনিয়োগকারীরা ট্রেজারি ও সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকে পড়েন। ফলে তারল্য সংকট এবং একই সঙ্গে আস্থার সংকট তৈরি হয়।
ফলে গত বছরের ১২ আগস্ট থেকে গত ২৮ মে ১১৬ কর্মদিবসের দর পতনে সূচক হারিয়েছিল ৩৭০১ পয়েন্ট। বাকি দিনগুলোতে কিছুটা বাড়ার ফলে সাকল্যে পতন হয় ১৪০০ পয়েন্ট। ওই সময়ে ভালো-মন্দ সব কোম্পানির শেয়ার দর হারায়। গত ১১ আগস্ট এবং ২৮ মের সমাপনী মূল্য তুলনা করে দেখা যায়, ৩৬০ কোম্পানির মধ্যে ৩৪১টিই দর হারিয়েছিল। কমপক্ষে ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৮৬ শতাংশ পর্যন্ত দর হারিয়েছিল ৩০৫টি।

বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানান, ওই ধারা কেটে গত এক মাসে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত মিলছে। রেকর্ড রেমিট্যান্স আসার পাশাপাশি রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি, রিজার্ভ বৃদ্ধি ও স্থিতিশীল বিনিময় হার এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা রুগ্‌ণ ধারা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো বিনিয়োগকারীদের আশাবাদী করছে। ডিএসইর ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম সমকালকে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের একটি সময় ঘোষণা পুরো চিত্রপট পাল্টে দিয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, যখনই হোক একটি নির্বাচন হবে, স্থিতিশীল সরকার আসবে। এটি বিনিয়োগকারীদের আশাবাদী করেছে।
ঊর্ধ্বমুখী ধারা বজায় থাকবে কিনা, তা এখনই বলা সম্ভব নয়– এমন মন্তব্য তাঁর। ডিবিএ সভাপতি বলেন, যদি এ ধারা টিকেও যায়, তবে বিনিয়োগযোগ্য
শেয়ার কম থাকার কারণে ‘বাবল’ তৈরি হতে পারে। এর মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫টি রুগ্‌ণ ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বীমা কোম্পানি একীভূত হলে বিনিয়োগযোগ্য শেয়ার আরও কমবে। এখন নতুন করে আইপিও নেই। শিগগিরই আসার সম্ভাবনাও কম। এখন সরকারই পারে নতুন শেয়ার ছেড়ে পরিস্থিতি ধরে রাখতে। তাহলে আগামীতে উত্থান হলেও তা যৌক্তিক ভিত্তি পাবে এবং টেকসই হবে।

সাম্প্রতিক ঊর্ধ্বমুখী ধারা
গত ২৮ মের পর এক মাসের লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, খাতওয়ারি হিসেবে তুলনামূলক বেশি বেড়েছে বস্ত্র, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, ব্যাংক খাতের শেয়ারদর। খাদ্য খাতের ২৩ কোম্পানির গড়ে পৌনে ১২ শতাংশ বেড়েছে। বস্ত্র খাতের ৫৮ কোম্পানির মধ্যে ৪২টির দর বেড়েছে, কমেছে ১১টির এবং গড় শেয়ারদর বেড়েছে ১১ শতাংশ। টেলিযোগাযোগ খাতের ৩ কোম্পানির সোয়া ৯ শতাংশ, ব্যাংক খাতের ৩৬ কোম্পানির মধ্যে ৯টির দর কমার পরও গড়ে প্রায় ৮ শতাংশ হারে দর বেড়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা, প্রকৌশল, সিরামিক এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতের দর বেড়েছে ৬ থেকে ৭ শতাংশ পর্যন্ত।
একক কোম্পানি হিসেবে দেশ গার্মেন্টসের শেয়ার দর গত এক মাসে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। যদিও গত বছর শেয়ারহোল্ডারদের মাত্র ৩ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছিল। এ কোম্পানির বাইরে গত এক মাসে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত যেসব কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে, সেগুলো হলো– ইন্দোবাংলা ফার্মা, ইয়াকিন পলিমার, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী ব্যাংক, স্টাইল ক্রাফট, রহিমা ফুড, মেঘনা পেট, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার এবং ন্যাশনাল টিউবস। এগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি দুর্বল কোম্পানি। 

আরও পড়ুন

×