জন্মদিন
পথিকৃৎ গোলাম সারওয়ার

মোজাম্মেল হোসেন
প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২২ | ১২:০০
গোলাম সারওয়ার ছিলেন দৈনিক সমকালের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। দৈনিকটি বের হয় ২০০৫ সালে। তিনিই ছিলেন দৈনিক যুগান্তরের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। সেটি বের হয় ১৯৯৯ সালে। দুটি পত্রিকাই দাপটের সঙ্গে টিকে আছে। মাত্র ছয় বছরের ব্যবধানে দুটি বাজারসফল জাতীয় বাংলা দৈনিক সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তিনি দেশে নতুন যুগের সংবাদপত্র শিল্পে বিনিয়োগকারী ও পাঠকসমাজের আস্থা অর্জন করে এক্ষেত্রে একজন নায়ক হয়ে ওঠেন।
আজ, ১ এপ্রিল, সাংবাদিক, লেখক, সাংবাদিকতা-সংশ্নিষ্ট একাধিক প্রতিষ্ঠানের সংগঠক ও সর্বোপরি সম্পাদক এবং অনন্য সম্পাদক গোলাম সারওয়ারের জন্মদিন, ৭৯তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৪৩ সালে বরিশাল জেলার বানারীপাড়া গ্রামে তার জন্ম। ২০১৮ সালের ১৩ আগস্ট তার জীবনাবসান ঘটে। তখন তিনি সমকালের সম্পাদক। এই লেখা তার জন্মবার্ষিকীতে স্মরণ ও শ্রদ্ধাঞ্জলি।
নতুন যুগের সংবাদপত্র শিল্প বলা হলো এ জন্য যে, গোলাম সারওয়ার ও সমসাময়িক আরও কয়েকজন তুখোড় উদ্যমী সম্পাদকের হাত ধরে দেশে সংবাদপত্র আদিকালের অনেকটা আধা-শৌখিন বা রাজনৈতিক মতাদর্শের আবেগতাড়িত কুটিরশিল্পের মতো প্রয়াস থেকে পূর্ণাঙ্গ শিল্প খাত হিসেবে গড়ে উঠতে থাকে। এ শিল্পে বাণিজ্যিক ঝুঁকি নিয়ে পুঁজি বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসেন। এক সময়ের প্রচারধর্মিতা থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের কাজেও পেশাদারিত্ব গুরুত্ব পেতে থাকে। সময়টাকে ১৯৯০ ও অব্যবহিত পরবর্তী দশক বলা যায়। এ সময়ে সংবাদপত্রের মুদ্রণে কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহারের সূচনা হয় এবং তাদের কার্যকালেই ইন্টারনেট প্রযুক্তির কারণে অনলাইন বা ডিজিটাল সংবাদমাধ্যম এক যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটায়। এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাদের তাল মেলাতে হয়েছে এবং এখন এই প্রযুক্তির আরও রকেটগতির দৌড় আমরা দেখছি।
১৯৭০-এর দশকের শেষভাগে গোলাম সারওয়ারকে আমি প্রথম দেখি দৈনিক ইত্তেফাক অফিসে বার্তা সম্পাদকের আসনে। আমি কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্ররূপে প্রকাশিত সাপ্তাহিক একতায় কাজ করতাম। মতাদর্শিক সংবাদপত্রের চূড়ান্ত রূপ ছিল এই দলীয় মুখপত্র ঘোষণা দিয়েই প্রকাশ করা। তবে তখনকার রাজনৈতিক আবহ, সাংগঠনিক শক্তি এবং আমাদের বৈপ্লবিক উদ্যমের চেষ্টায় সাপ্তাহিকটির প্রসার ভালো ছিল এবং সমাজের প্রগতিশীল শিক্ষিত মানুষের কাছে সমাদর ছিল। আমি বড় পত্রিকার কাজ দেখতে ও বড় সাংবাদিকদের সঙ্গে পরিচিত হতে তাদের অফিসে ও অনুষ্ঠানাদিতে যেতাম। সারওয়ার ভাই সহজেই সস্নেহে আমাকে গ্রহণ করেন। তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু তখন কি জানতাম যে ঢাকায় সবচেয়ে দক্ষ বার্তা সম্পাদক হিসেবে সংবাদপত্র মহলে নাম ছড়িয়ে পড়া ইত্তেফাকের বার্তা সম্পাদকের সঙ্গে আমি কখনও এক প্রতিষ্ঠানে কাজ করব? সে সুযোগ এলো সমকালে। সমকাল প্রকাশের গল্পে আমার কিছু ব্যক্তিস্মৃতি আসবে। আমার সঙ্গে পরিচয়ের আগের গোলাম সারওয়ারের জীবনচিত্র একটু স্মরণ করা যাক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক পড়ার সময় তিনি চট্টগ্রামের আজাদী পত্রিকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধির কাজ করেছেন। তারপর দৈনিক সংবাদে সহসম্পাদক পদে যোগ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আগ পর্যন্ত কাজ করেন। মুক্তিযুদ্ধে নিজ গ্রাম এলাকায় সংগঠক ছিলেন। স্বাধীনতার পর বানারীপাড়ায় স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তার রক্তে ছিল সাংবাদিকতার ডাক। ১৯৭৩ সালে দৈনিক ইত্তেফাকে সিনিয়র সহসম্পাদক পদে যোগ দেন। সেখানেই বার্তা সম্পাদক হয়ে প্রায় দুই যুগ ছিলেন। ১৯৯৯ সালে ইত্তেফাক ছেড়ে তিনি যুগান্তর বের করেন। তার হাতে অতি দ্রুত দৈনিকটি বাজারে প্রতিযোগিতামূলক হয়ে ওঠে।
আমি দুই দশক সাপ্তাহিক একতায় কাজ করার পর বৈশ্বিক রাজনীতিতে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙন ও কমিউনিজমের অস্তাচলগামী সময়ে দৈনিক পত্রিকা হিসেবে প্রথমে ভোরের কাগজ ও পরে শুরু থেকে ছয় বছর ছিলাম প্রথম আলোর বার্তা সম্পাদক, ২০০৪ পর্যন্ত। এর পর কিছুদিন সংবাদে সম্পাদকীয় বিভাগে। সেই সময় ২০০৫ সালে একদিন বিশিষ্ট শিল্পপতি, হা-মীম গ্রুপের কর্ণধার এ. কে. আজাদ ফোন করে আমন্ত্রণ জানিয়ে গাড়ি পাঠিয়ে আমাকে তার একটি অফিসে নিয়ে যান। বললেন, তিনি একটি দৈনিক কাগজ বের করবেন। গোলাম সারওয়ারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। আমাকে চান তারা দু'জনই।
কয়েক মাস হলো যোগ দিয়েছিলাম বলে একটু লজ্জিত হলেও সংবাদের ভারপ্রাপ্ত তথা কার্যত সম্পাদক বজলুর রহমানকে বলে সংবাদ ছাড়তে বেগ পেতে হলো না। তিনি নতুন প্রকল্পকে উৎসাহিতই করলেন। এর পর নতুন যুদ্ধে গোলাম সারওয়ারের সেনাপতিত্বের গল্প। অল্প সময়ের প্রস্তুতি। তার মধ্যেও পান্থপথে ভালো অফিস ভাড়া নিয়েও বিদ্যুতের জন্য অতিরিক্ত জেনারেটরের ঝামেলায় তা ছেড়ে দিতে হলো। প্রকাশক এ. কে. আজাদ ও সম্পাদক গোলাম সারওয়ারের সংকল্প- কোনো বাধা মানা যাবে না। পত্রিকা বাজারে আনতেই হবে। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে প্রকাশকের শিল্পের গুদাম হিসেবে ব্যবহূত একটি শেড পরিস্কার করে দিনরাত কাজ করে অফিস সাজিয়ে, ছাপাখানা বসিয়ে ওই বছরই ৩১ মে হই হই করে সমকাল বাজারে বেরিয়ে গেল।
ওই সময় নিকটে একটি চমৎকার নতুন ভবন উঠেছিল একটি নতুন পত্রিকা বের হবে বলে। ছাপাখানাও তৈরি। দু'বছর ধরে দেখছিলাম তার ধীর গতি। আমার এক পুরোনো সহকর্মী বন্ধু সেখানে নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্বে। একদিন ফোন করে বললাম, 'তোমাদের অফিস আছে, পত্রিকা বের করতে পারোনি। আমাদের অফিস নেই, পত্রিকা বেরিয়েছে।'
বলতে পেরেছিলাম, কারণ আমাদের সম্পাদক গোলাম সারওয়ার। সারওয়ার ভাই এক সময় ছড়া লিখতেন। সিনে-সাংবাদিকতায় হাত পাকিয়েছেন। ক্রীড়াঙ্গন নিয়ে লেখায় উৎসাহ ছিল। চমৎকার বাংলা গদ্য লিখতেন। তার প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে 'সম্পাদকের জবানবন্দী', 'অমিয় গরল', 'আমার যতো কথা' ও 'স্বপ্ন বেঁচে থাক' মনে পড়ছে। তিনি রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক পেয়েছিলেন। তিনি প্রেস কাউন্সিল, প্রেস ইনস্টিটিউট, সম্পাদক পরিষদে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রেস ক্লাবে ও সাংবাদিকদের ইউনিয়ন কার্যক্রমে প্রবীণ বয়সে দীর্ঘদিন ছিলেন অভিভাবক।
সারওয়ার ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করে দেখেছি তার দ্রুত সংবাদের মূল্য বিচার ও দ্রুততম সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিস্ময়কর ক্ষমতা। তিনি চিরবিদায় নিয়ে যাওয়ার পর সংবাদপত্র শিল্প ও আমাদের পেশা যখন নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে, তখন তার ওই গুণগুলো ও তার শিক্ষা, তার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমাদের পাথেয়।
মোজাম্মেল হোসেন: ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, দৈনিক সমকাল
আজ, ১ এপ্রিল, সাংবাদিক, লেখক, সাংবাদিকতা-সংশ্নিষ্ট একাধিক প্রতিষ্ঠানের সংগঠক ও সর্বোপরি সম্পাদক এবং অনন্য সম্পাদক গোলাম সারওয়ারের জন্মদিন, ৭৯তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৪৩ সালে বরিশাল জেলার বানারীপাড়া গ্রামে তার জন্ম। ২০১৮ সালের ১৩ আগস্ট তার জীবনাবসান ঘটে। তখন তিনি সমকালের সম্পাদক। এই লেখা তার জন্মবার্ষিকীতে স্মরণ ও শ্রদ্ধাঞ্জলি।
নতুন যুগের সংবাদপত্র শিল্প বলা হলো এ জন্য যে, গোলাম সারওয়ার ও সমসাময়িক আরও কয়েকজন তুখোড় উদ্যমী সম্পাদকের হাত ধরে দেশে সংবাদপত্র আদিকালের অনেকটা আধা-শৌখিন বা রাজনৈতিক মতাদর্শের আবেগতাড়িত কুটিরশিল্পের মতো প্রয়াস থেকে পূর্ণাঙ্গ শিল্প খাত হিসেবে গড়ে উঠতে থাকে। এ শিল্পে বাণিজ্যিক ঝুঁকি নিয়ে পুঁজি বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসেন। এক সময়ের প্রচারধর্মিতা থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের কাজেও পেশাদারিত্ব গুরুত্ব পেতে থাকে। সময়টাকে ১৯৯০ ও অব্যবহিত পরবর্তী দশক বলা যায়। এ সময়ে সংবাদপত্রের মুদ্রণে কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহারের সূচনা হয় এবং তাদের কার্যকালেই ইন্টারনেট প্রযুক্তির কারণে অনলাইন বা ডিজিটাল সংবাদমাধ্যম এক যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটায়। এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাদের তাল মেলাতে হয়েছে এবং এখন এই প্রযুক্তির আরও রকেটগতির দৌড় আমরা দেখছি।
১৯৭০-এর দশকের শেষভাগে গোলাম সারওয়ারকে আমি প্রথম দেখি দৈনিক ইত্তেফাক অফিসে বার্তা সম্পাদকের আসনে। আমি কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্ররূপে প্রকাশিত সাপ্তাহিক একতায় কাজ করতাম। মতাদর্শিক সংবাদপত্রের চূড়ান্ত রূপ ছিল এই দলীয় মুখপত্র ঘোষণা দিয়েই প্রকাশ করা। তবে তখনকার রাজনৈতিক আবহ, সাংগঠনিক শক্তি এবং আমাদের বৈপ্লবিক উদ্যমের চেষ্টায় সাপ্তাহিকটির প্রসার ভালো ছিল এবং সমাজের প্রগতিশীল শিক্ষিত মানুষের কাছে সমাদর ছিল। আমি বড় পত্রিকার কাজ দেখতে ও বড় সাংবাদিকদের সঙ্গে পরিচিত হতে তাদের অফিসে ও অনুষ্ঠানাদিতে যেতাম। সারওয়ার ভাই সহজেই সস্নেহে আমাকে গ্রহণ করেন। তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু তখন কি জানতাম যে ঢাকায় সবচেয়ে দক্ষ বার্তা সম্পাদক হিসেবে সংবাদপত্র মহলে নাম ছড়িয়ে পড়া ইত্তেফাকের বার্তা সম্পাদকের সঙ্গে আমি কখনও এক প্রতিষ্ঠানে কাজ করব? সে সুযোগ এলো সমকালে। সমকাল প্রকাশের গল্পে আমার কিছু ব্যক্তিস্মৃতি আসবে। আমার সঙ্গে পরিচয়ের আগের গোলাম সারওয়ারের জীবনচিত্র একটু স্মরণ করা যাক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক পড়ার সময় তিনি চট্টগ্রামের আজাদী পত্রিকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধির কাজ করেছেন। তারপর দৈনিক সংবাদে সহসম্পাদক পদে যোগ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আগ পর্যন্ত কাজ করেন। মুক্তিযুদ্ধে নিজ গ্রাম এলাকায় সংগঠক ছিলেন। স্বাধীনতার পর বানারীপাড়ায় স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তার রক্তে ছিল সাংবাদিকতার ডাক। ১৯৭৩ সালে দৈনিক ইত্তেফাকে সিনিয়র সহসম্পাদক পদে যোগ দেন। সেখানেই বার্তা সম্পাদক হয়ে প্রায় দুই যুগ ছিলেন। ১৯৯৯ সালে ইত্তেফাক ছেড়ে তিনি যুগান্তর বের করেন। তার হাতে অতি দ্রুত দৈনিকটি বাজারে প্রতিযোগিতামূলক হয়ে ওঠে।
আমি দুই দশক সাপ্তাহিক একতায় কাজ করার পর বৈশ্বিক রাজনীতিতে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙন ও কমিউনিজমের অস্তাচলগামী সময়ে দৈনিক পত্রিকা হিসেবে প্রথমে ভোরের কাগজ ও পরে শুরু থেকে ছয় বছর ছিলাম প্রথম আলোর বার্তা সম্পাদক, ২০০৪ পর্যন্ত। এর পর কিছুদিন সংবাদে সম্পাদকীয় বিভাগে। সেই সময় ২০০৫ সালে একদিন বিশিষ্ট শিল্পপতি, হা-মীম গ্রুপের কর্ণধার এ. কে. আজাদ ফোন করে আমন্ত্রণ জানিয়ে গাড়ি পাঠিয়ে আমাকে তার একটি অফিসে নিয়ে যান। বললেন, তিনি একটি দৈনিক কাগজ বের করবেন। গোলাম সারওয়ারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। আমাকে চান তারা দু'জনই।
কয়েক মাস হলো যোগ দিয়েছিলাম বলে একটু লজ্জিত হলেও সংবাদের ভারপ্রাপ্ত তথা কার্যত সম্পাদক বজলুর রহমানকে বলে সংবাদ ছাড়তে বেগ পেতে হলো না। তিনি নতুন প্রকল্পকে উৎসাহিতই করলেন। এর পর নতুন যুদ্ধে গোলাম সারওয়ারের সেনাপতিত্বের গল্প। অল্প সময়ের প্রস্তুতি। তার মধ্যেও পান্থপথে ভালো অফিস ভাড়া নিয়েও বিদ্যুতের জন্য অতিরিক্ত জেনারেটরের ঝামেলায় তা ছেড়ে দিতে হলো। প্রকাশক এ. কে. আজাদ ও সম্পাদক গোলাম সারওয়ারের সংকল্প- কোনো বাধা মানা যাবে না। পত্রিকা বাজারে আনতেই হবে। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে প্রকাশকের শিল্পের গুদাম হিসেবে ব্যবহূত একটি শেড পরিস্কার করে দিনরাত কাজ করে অফিস সাজিয়ে, ছাপাখানা বসিয়ে ওই বছরই ৩১ মে হই হই করে সমকাল বাজারে বেরিয়ে গেল।
ওই সময় নিকটে একটি চমৎকার নতুন ভবন উঠেছিল একটি নতুন পত্রিকা বের হবে বলে। ছাপাখানাও তৈরি। দু'বছর ধরে দেখছিলাম তার ধীর গতি। আমার এক পুরোনো সহকর্মী বন্ধু সেখানে নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্বে। একদিন ফোন করে বললাম, 'তোমাদের অফিস আছে, পত্রিকা বের করতে পারোনি। আমাদের অফিস নেই, পত্রিকা বেরিয়েছে।'
বলতে পেরেছিলাম, কারণ আমাদের সম্পাদক গোলাম সারওয়ার। সারওয়ার ভাই এক সময় ছড়া লিখতেন। সিনে-সাংবাদিকতায় হাত পাকিয়েছেন। ক্রীড়াঙ্গন নিয়ে লেখায় উৎসাহ ছিল। চমৎকার বাংলা গদ্য লিখতেন। তার প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে 'সম্পাদকের জবানবন্দী', 'অমিয় গরল', 'আমার যতো কথা' ও 'স্বপ্ন বেঁচে থাক' মনে পড়ছে। তিনি রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক পেয়েছিলেন। তিনি প্রেস কাউন্সিল, প্রেস ইনস্টিটিউট, সম্পাদক পরিষদে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রেস ক্লাবে ও সাংবাদিকদের ইউনিয়ন কার্যক্রমে প্রবীণ বয়সে দীর্ঘদিন ছিলেন অভিভাবক।
সারওয়ার ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করে দেখেছি তার দ্রুত সংবাদের মূল্য বিচার ও দ্রুততম সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিস্ময়কর ক্ষমতা। তিনি চিরবিদায় নিয়ে যাওয়ার পর সংবাদপত্র শিল্প ও আমাদের পেশা যখন নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে, তখন তার ওই গুণগুলো ও তার শিক্ষা, তার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমাদের পাথেয়।
মোজাম্মেল হোসেন: ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, দৈনিক সমকাল
- বিষয় :
- জন্মদিন
- মোজাম্মেল হোসেন
- গোলাম সারওয়ার