ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

মধুপুরের জীববৈচিত্র্য

মধুপুরের জীববৈচিত্র্য

মিয়া জামশেদ উদ্দীন

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২২ | ১২:০০

টাঙ্গাইলের মধুপুর নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের অনেক গৌরবগাথা রয়েছে। এ সবুজ বনভূমিতে আদিবাসী সম্প্রদায়ের ২৫ হাজার মানুষের বাস। তাদের মধ্যে গারো ও কোচ সম্প্রদায় বিশেষ উল্লেখযোগ্য। সংখ্যাগরিষ্ঠতার দিক দিয়ে ৯৯ শতাংশ গারো সম্প্রদায়ভুক্ত। গারোদের প্রাচীন ধর্ম 'সাংসারেক'। ভারতের মেঘালয়, আসামের কামরূপ, গোয়ালপাড়া, কারবি আংলং জেলাসহ বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের মধুপুর, সিলেট, শেরপুর, গাজীপুর, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও ময়মসিংহ জেলায় তাদের অবস্থান। গারোদের সব পাড়াগাঁয়ে প্রার্থনালয়, ছোট ছোট গির্জা রয়েছে। মধুপুর বনাঞ্চলে মুসলমানদের বসবাসও লক্ষণীয়। মধুপুর উপজেলায় মুসলিমদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অবস্থান রয়েছে। বলা যায়, সব ধর্মের সহমর্মিতা-ভ্রাতৃত্ববোধ রয়েছে। সম্ভবত দূর থেকে আসা দর্শনার্থীরা এসব জাতপাতের ভেদাভেদ সৃষ্টি করে। এ ক্ষেত্রে আরও সচেতন ও উদার হওয়া উচিত দর্শনার্থীদের।
অর্থনৈতিকভাবে আদিবাসীদের জীবনযাত্রার ধরনে কিছুটা পরিবর্তন দৃষ্টিগোচর হয়। তাদের আবাসস্থল ছিল মাটির ঘর ও ছনের ছাউনি। এখন টিন, ইট-বালুর আধাপাকা ও ছোট দালান-কোঠাও দেখা যায়। বনের খাঁজে-খাঁজে তাদের আবাস। গারোদের পরিবার মাতৃতান্ত্রিক। বেশিরভাগ গারোর গায়ের রং তামাটে ফর্সা। চাপা চাপা চেহারা। ধনুকের মতো কিঞ্চিত বাঁকাও। নারীদের মাতৃত্ব লক্ষণীয়। নারীদের এ বৈশিষ্ট্য প্রমাণ করে- তারা যোদ্ধা জাতি। তীর-ধনুকের সঠিক নিশানা। প্রয়োজনে স্তন ছেদ করতে দ্বিধা করে না! তারা মনে করে, মাতৃত্বের ওই
স্বরূপ তীর-ধনুক চালানো কিংবা সঠিক নিশানাকে বিঘ্ন ঘটায়। সম্ভবত আদিবাসী নারীরা নিজস্ব নিয়মে তা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে।
মধুপুর বনাঞ্চলে খ্যাতি ছিল শালবনের। একেকটা আকাশছোঁয়া প্রকাণ্ড গাছ। সারা বনেও এখন শাল বা গজারি গাছের দেখা মেলা ভার। গাংরা হয়ে দোখলা যেতে দুই ধারের দৃশ্যপটে এমন আভাস মেলে। ১৯৯০ সালের দিকে সামাজিক বনায়নের নামে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। এতে আরও বিপত্তি দেখা দেয়। বনায়নে যেসব প্রজাতির চারা রোপণ করা হয় তা দ্রুত বর্ধনশীল হলেও বনজ গাছগাছালি, পশুপাখি ও পরিবেশের জন্য সহনশীল নয়। এসব সামাজিক বনায়নে দেশীয় ফলন হয় না বললেই চলে। গড়ের বাগানে হলুদ, আদা, আনারস, পাঁচমুখো কচু, পেঁপে, লেবু, আম, কাঁঠাল, লিচু, কলাবাগান এবং মধু আহরণ হয়ে আসছে। এটি আদিবাসীদের রুটি-রুজির একমাত্র পথ। তারা বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বদ্ধপরিকর।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক

আরও পড়ুন

×