ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

অবহেলা ও অদূরদর্শিতা

অবহেলা ও অদূরদর্শিতা

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ২১:৪০

নিত্যপণ্যের সীমাহীন মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিশেষ করে সীমিত আয়ের মানুষ খুব কষ্টে আছে- এ কথা সবার জানা। এ পরিস্থিতিতে সীমিত আয়ের পরিবার থেকে আসা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও ভালো থাকার কথা নয়। সোমবার সমকালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্রব্যমূল্যের সাম্প্রতিক ঊর্ধ্বগতিতে বিপাকে পড়েছেন ওই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অনেক ক্ষেত্রেই ধারদেনা করে চলতে হচ্ছে তাঁদের। যাঁদের বাড়ি থেকে টাকা আসে, তাঁদের পরিবারের বাড়তি কিছু দেওয়ার সামর্থ্য নেই। যাঁরা টিউশনি করে চলেন, তাঁদের আয়ও বাড়েনি।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি আবাসিক হলে মাত্র ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী থাকতে পারেন; তাও গাদাগাদি করে। বাকিদের থাকতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে গড়ে ওঠা মেসে; যেখানে আবার থাকা-খাওয়ার খরচ আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। প্রতিবেদনে যেমনটা বলা হয়েছে, আগে এলাকা ও বাসাভেদে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে মেস ভাড়া গুনতে হতো ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। এখন গুনতে হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। বলা বাহুল্য, এ করুণ অবস্থা শুধু কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়; দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তা থেকে মুক্ত- এমনটাও বলা যায় না। কারণ এখানকার শিক্ষার্থীদের একটা অংশ সচ্ছল পরিবার থেকে এলেও, বেশিরভাগই সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারভুক্ত। তাঁদেরকে অনেক কষ্টে পড়ার খরচটুকু জোগাড় করতে হয়।

একদিকে থাকা-খাওয়ার অপ্রতুল ও মানহীন ব্যবস্থা, আরেকদিকে ক্রমবর্ধমান আর্থিক টানাপোড়েন শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের ওপর কী নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তা কারও অজানা নয়। অভিজ্ঞতা বলে, এমন পরিস্থিতিতে উচ্চশিক্ষা পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশি হারে ড্রপআউটের শঙ্কা বেড়ে যায়, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা মূলত নিজেদেরকে ভবিষ্যৎ পেশাগত বা কর্মজীবনের জন্য তৈরি করার চেষ্টা চালান। গোটা জাতির জন্যও তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দক্ষতা ও মানের দিক থেকে উঁচু স্তরের কর্মী না পেলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের অর্থনীতি, প্রশাসন ও সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা। এর জের টানতে হয় বছরের পর বছর, এমনকি কয়েক প্রজন্ম পর্যন্ত।

এ কারণেই একটা পরিবার যেমন তার সমৃদ্ধি ও সম্মানের স্বার্থে সন্তানদের সর্বোচ্চ শিক্ষা নিশ্চিত করতে গিয়ে প্রযোজনে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকে; তেমনি একটা জাতিকেও তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যথোপযুক্তভাবে গড়ে তোলার স্বার্থে অন্য অনেক কিছুর চেয়ে শিক্ষাকে প্রাধান্য দিতে হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলো, প্রধানত রাষ্ট্রীয় সম্পদ বণ্টনে ভুল নীতির কারণে আমাদের দেশে বরাবরই, বিশেষ করে বাজেট বরাদ্দের বেলায় শিক্ষা খাত অবহেলিত থেকে গেছে। বর্তমান সরকার এ ধারা থেকে বেরিয়ে আসার অঙ্গীকার করলেও বাস্তবতা অনেকাংশেই তার উল্টো কথা বলছে।

এটা সত্য, এ সরকারের আমলে সব পর্যায়েই শিক্ষার প্রসার ঘটেছে। শুধু সরকারি খাতে নয়; বেসরকারি খাতেও অন্তত অবকাঠামো নির্মাণে প্রচুর বিনিয়োগ হয়েছে। কিন্তু তা যে প্রয়োজনের তুলনায় কতটা অপ্রতুল, আলোচ্য প্রতিবেদনই তার সাক্ষ্য দেয়। তা ছাড়া কথা ছিল, শিক্ষার্থীরা যাতে একাডেমিক চর্চায় নির্বিঘ্ন মনোযোগ দিতে পারে তার অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে; কিন্তু তা এখনও দূর অস্ত। শিক্ষার্থীদের আবাসিক সংকট শুধু কুমিল্লা নয়, দেশের সব ক'টি নতুন-পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই বিরাজমান। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাবার আগে যেমন বিরল ছিল, এখনও তেমনই রয়ে গেছে। অথচ ইতোমধ্যে শুধু দেশের জিডিপিই কযেক গুণ বাড়েনি, দেশও স্বল্প আয় থেকে মধ্যম আয়ের কাতারভুক্ত হয়েছে।

আমরা আশা করি, রাষ্ট্রের ব্যবস্থাপক হিসেবে সরকার সাধারণভাবে শিক্ষা খাত এবং বিশেষভাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিরাজমান সমস্যাগুলোর দিকে অচিরেই নজর দেবে এবং সেগুলো সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। বাংলাদেশকে অর্থনীতিসহ নানা ক্ষেত্রে বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে হলে বিশ্বমানের শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। আর তার জন্য শিক্ষার্থীদেরও সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। তবে সরকারের আশু করণীয় হলো, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী বর্তমান সংকটজনক পরিস্থিতির কারণে তাঁদের শিক্ষাজীবন টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়ানো। করোনা মহামারির আঘাত থেকে শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে আমরা সরকারের পাশাপাশি সংশ্নিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দেখেছি বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে। এ ক্ষেত্রেও তেমন কিছু উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

আরও পড়ুন

×