ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

স্মরণ

অকালে ঝরে যাওয়া নেতা

অকালে ঝরে যাওয়া নেতা

শামসুল হক

হাবিবুর রহমান হাবিব

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১৩:২৬

আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও ভাষা আন্দোলনের শীর্ষ নেতা ছিলেন শামসুল হক। ১১ সেপ্টেম্বর জননেতা শামসুল হকের ৫৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। তাঁর জন্ম টাঙ্গাইলে। তাই টাঙ্গাইলের শামসুল হক নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি জাহ্নবী হাইস্কুল থেকে ১৯৩৮ সালে ম্যাট্রিক এবং করটিয়া সাদ'ত কলেজ থেকে ১৯৪০ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সেখান থেকে ১৯৪৩ সালে ইতিহাসে বিএ (অনার্স) ডিগ্রি লাভ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলবিতে ভর্তি হয়েছিলেন কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তা সমাপ্ত করা সম্ভব হয়নি। তিনি ফজলুল হক মুসলিম হলের ছাত্র ছিলেন। ৪০-এর দশকে তিনি নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগ ও বঙ্গীয় মুসলিম লীগের ১৫০ মোগলটুলী পার্টি হাউসকেন্দ্রিক (ঢাকা) তরুণ কর্মীদের নেতা ছিলেন। তিনি সেখানেই থাকতেন। সে সময় ঢাকার আহসান মঞ্জিল বা খাজা নেতৃত্বের বিপরীতে তাঁরা সোহরাওয়ার্দী-আবুল হাশিম গ্রুপের সমর্থক ছিলেন। দেশ বিভাগের আগে তাঁর নেতৃত্বে ঢাকা জেলা মুসলিম লীগ খাজাদের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়। ঢাকায় পাকিস্তান আন্দোলনের তিনি প্রধান সংগঠক ছিলেন। রাজনীতিতে তিনি ছিলেন খুবই নিবেদিত ও আদর্শবান। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তিনি ১৯৪৯ সালের এপ্রিল মাসে টাঙ্গাইলে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে মুসলিম লীগ প্রার্থী ও করটিয়ার জমিদার পরিবারভুক্ত খুররম খান পন্নীকে পরাজিত করে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। 'মূল দাবি' নামে আওয়ামী লীগের প্রথম ম্যানিফেস্টো তাঁর রচিত। '৪৮ ও ৫২'-এর ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন এবং এ কারণে তাঁকে কারাবরণ করতে হয়। ১৯৪৯ ও ১৯৫২ সালে দু'দফায় তিনি অনেকদিন কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকাকালে তাঁর মস্তিস্ক বিকৃতি ঘটে। এরপর বেশ কয়েক বছর বেঁচে থাকলেও তিনি আর স্বাভাবিক হননি। ইডেন কলেজের ইংরেজি বিষয়ের অধ্যাপিকা আফিয়া খাতুন ছিলেন তাঁর স্ত্রী। শামসুল হক যখন '৫২-এর ভাষা আন্দোলনে জেলে যান, তখন তিনি তাঁকে ছেড়ে চলে যান। সংসার জীবনে শামসুল হকের দুই সন্তান রয়েছে। সন্তানদ্বয়- উম্মেবতুল তাজমা তাহেরা (ড. শাহিন) ও উম্মেবতুল ফাতেমা জাহুরা (শায়কা)। তাঁরা বর্তমানে মার্কিন নাগরিক। জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেবে বর্তমানে নাসাতে কর্মরত।

শামসুল হক ১৯৬৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। জিগাতলার শামস উদ্দিন মাওলানা কর্তৃক জানাজা শেষে তাঁকে কদিমহামজানি কবরস্থানে দাফন করা হয়। ১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ, দেশ টালমাটাল থাকায় উপর্যুপরি আওয়ামী লীগের নেতার মৃত্যু কংগ্রেস নেতা মাহির উদ্দিন আনছারীর বাড়িতে হওয়ায় বিষয়টি গোপন রাখা হয়।

১৯৬২ সালে 'দৈনিক ইত্তেফাক' পত্রিকায় শামসুল হকের মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশিত হয়। সাদ'ত কলেজ করটিয়া, শামসুল হকের নিজ বাড়ি, ঢাকায় আবুল হাশিমের নিজ বাড়িতে শোক সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে নেতার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়। তিন দিন পর শামসুল হককে টাঙ্গাইলের মাদ্রাসা রোডে হাঁটতে দেখা যায়। ইত্তেফাক কাগজটি পড়ে শামসুল হক ইত্তেফাক অফিসে গিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানান। পরের দিন ইত্তেফাক দুঃখ প্রকাশ করে শামসুল হকের সুস্থতা এবং দীর্ঘায়ু কামনা করে বিবৃতি দেয়।

এসব কারণেই ১৯৬৫ সালে সঠিক মৃত্যুর সংবাদ শুনেও নেতার পরিবার সংবাদটি বিশ্বাস করতে পারেনি। ফলে মৃত্যুর সংবাদটি ৪২ বছর পর্যন্ত অগোচরেই রয়ে যায়। তাঁর বিখ্যাত বই আজও রাজনীতিকদের মনে দাগ কেটে আছে। সেটি হলো 'বৈপ্লবিক দৃষ্টিতে ইসলাম' দার্শনিক আবুল হাশিম, হযরত আল্লামা আজাদ সোবহানী ও টাঙ্গাইলের অ্যাডভোকেট আব্দুল করিম খান (কবি বুলবুল খান মাহবুবের বাবা) বইটি লিখতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন। বইটির মাধ্যমে শামসুল হকের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অ্যারিস্টটল-প্লেটোর মতো সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। ১৯৪০ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত এই দু'জন ছিলেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। শামসুল হকের মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।

হাবিবুর রহমান হাবিব: শামসুল হকের ভাইয়ের দৌহিত্র

আরও পড়ুন

×