ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

যুগোপযোগী ইন্স্যুরেন্স চাই

যুগোপযোগী ইন্স্যুরেন্স চাই

অ্যাক্ট লায়াবিলিটি ইন্স্যুরেন্স বা তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বীমা বর্তমানে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর জন্য বন্ধ রয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে পরিবহন খাতের মালিকরা এতে লাভবান মনে করলেও প্রকৃতপক্ষে এর ক্ষতি সুদূর

আহমেদ সাইফুদ্দীন চৌধুরী

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৩ | ২৩:৪৯

অ্যাক্ট লায়াবিলিটি ইন্স্যুরেন্স বা তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বীমা বর্তমানে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর জন্য বন্ধ রয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে পরিবহন খাতের মালিকরা এতে লাভবান মনে করলেও প্রকৃতপক্ষে এর ক্ষতি সুদূরপ্রসারী। অ্যাক্ট লায়াবিলিটি ইন্স্যুরেন্স বাতিল হওয়ায় একদিকে যেমন ক্ষতি হচ্ছে বীমা সেক্টরের, অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। পাশাপাশি জনগণের যে নিরাপত্তা ও আর্থিক ক্ষতি হয়, তা পূরণের কোনো ব্যবস্থা থাকছে না। ইন্স্যুরেন্স না করার কারণে গাড়ির মালিকরাও আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না। আগে অ্যাক্ট লায়াবিলিটি ইন্স্যুরেন্সে কোনো দুর্ঘটনায় মারা গেলে ২০ হাজার টাকা ও সম্পদের ক্ষতি হলে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হতো, সেটা বর্তমান সময়ের তুলনায় খুবই নগণ্য। এই ইন্স্যুরেন্স বন্ধ না করে সময়োপযোগী করা দরকার ছিল।

অ্যাক্ট লায়াবিলিটি ইন্স্যুরেন্সের দাবি পাওয়ার জন্য সব কাগজপত্র নিয়ে এর ওপর ক্লেইম করলে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি দাবি পরিশোধ করত। দাবি পরিশোধ করা হচ্ছে না বলে যে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছিল, সেটা ভ্রান্ত ধারণা। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই অ্যাক্ট লায়াবিলিটি ইন্স্যুরেন্স প্রচলন আছে, এই ইন্স্যুরেন্স ছাড়া কোনো যানবাহন চলতে পারে না। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দুর্ঘটনায় যেভাবে যাত্রী-পথচারী মারা যান, এ জন্য সরকার অনেক সময় ভর্তুকি দেয়। অথচ এটা দেওয়ার কথা ছিল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর এবং ইন্স্যুরেন্সের আওতায় কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি তার ক্ষতিপূরণ পাবে, সেটা আরও সহজতর করা প্রয়োজন ছিল।

অ্যাক্ট লায়াবিলিটি ইন্স্যুরেন্সের পলিসিটি বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিকায়ন করে যদি পুনরায় বীমা খাতে নিয়ে আসা যায়, তাহলে বীমা খাতের পেনিট্রেশন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। বিশ্বেও আমাদের বীমা প্রডাক্ট নিয়ে ভালো ধারণার সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশে নৌযান বা ফেরি দুর্ঘটনায় যে ক্ষতি হয়, তা কিন্তু ইন্স্যুরেন্সের মাধ্যমে কাভারেজ করা সম্ভব। মানুষের জীবন হয়তো আসবে না, কিন্তু কারও পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মারা গেলে তার পরিবারের কী অবস্থা দাঁড়ায়- ভুক্তভোগী ছাড়া সেটা কেউ বুঝতে পারবে না। ফলে এসব যানবাহন বীমার আওতায় থাকলে ক্ষতিগ্রস্তরা উপকৃত হবে। যে যানবাহনের মালিক ব্যবসার পুঁজি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন, তারাও এর থেকে সুফল পেতে পারেন।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি তাঁর সম্পদের ক্ষতিপূরণ পেলে তিনি আবার নতুন উৎসাহে কাজে আগ্রহী হতে পারেন, তা না হলে সর্বস্বান্ত হয়ে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার ঘটনাও সমাজে প্রতিনিয়তই শোনা যায়। সরকার বীমা খাতে জিডিপিতে অবদানের বিষয়ে যা বলেছে, তা বাস্তবায়ন করতে হলে মোটর বীমার পাশাপাশি জনগণের কল্যাণে আরও কয়েকটি বীমা প্রডাক্ট বাধ্যতামূলক করা জরুরি।

মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিজিআইসি)

আরও পড়ুন

×