ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

অন্যদৃষ্টি

লাইনচ্যুত 'বগিলীগ'

লাইনচ্যুত 'বগিলীগ'

এস এম সাব্বির খান

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ২২:৩৮

দৈনিক সমকালের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) প্রতিনিধি মারজান আক্তারকে হুমকি দেওয়া ও উত্ত্যক্ত করা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর আচরণ এবং তাঁদের ঘের থেকে মারজানের প্রতিক্রিয়া-প্রতিবাদ ছাড়া নীরব প্রস্থান- বিষয়টি বিভিন্ন ওয়াইল্ড লাইফ ডকুমেন্টারিতে চোখে পড়া একটি দৃশ্যের সঙ্গে বেশ মিলে যায়। যেখানে দেখা যায়, ক্যা ক্যা করতে থাকা কুৎসিত হায়েনাদের উপেক্ষা করে কোনো এক সিংহী নীরব চাহনিতে অজ্ঞাত বার্তা দিয়ে গম্ভীরভাবে সরে যাচ্ছে। সিংহীর প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার মতো যোগ্যতা অন্যান্য প্রাণীর উচ্ছিষ্ট খেয়ে বেঁচে থাকা হায়েনার নেই। এমন সুমতি এবং একই সঙ্গে তাঁর কর্মনিষ্ঠা ও সাহসিকতার জন্য মারজানকে ধন্যবাদ।

পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে গত বৃহস্পতিবার চবি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুটি শাখার নেতাকর্মী মারজানকে প্রকাশ্যে হুমকি দেন- 'তোর নিরাপত্তা কে দেয় দেখব।' তাঁরা মারজানকে উত্ত্যক্তও করেন। এ সময় আরটিভির ফটো সাংবাদিক এমরাউল কায়েস মিঠুও হেনস্তার শিকার হন।

চারুকলা বিভাগকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের দাবিতে আন্দোলনরত চবি চারুকলা বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার সকালে ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারে অবস্থান নেন। সেখানে তাঁদের ওপর চড়াও হন চবি ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক উপগ্রুপ বাংলার মুখ ও ভার্সিটি এক্সপ্রেসের (ভিএক্স) নেতাকর্মী। তাঁদের ভাষ্য, শিক্ষার্থীদের অযৌক্তিক আন্দোলন বন্ধ করতে তাঁরা বাধা দিয়েছেন। তবে এই দায়িত্ব ছাত্রলীগকে কবে কে দিল, তা আমাদের জানা নেই। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাধারণ শিক্ষার্থী ও একাধিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধির বক্তব্যে জানা যায়, পেশাগত দায়িত্বপালনকালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগের ধাওয়া, বাধা প্রদান, ব্যানার-ফেস্টুন কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলার ভিডিও ধারণ করেছিলেন সমকালের চবি প্রতিনিধি মারজান। পরে সেগুলো মুছে ফেলতে তাঁকে চাপ দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে অস্বীকৃতি জানালে হুমকি দেন ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মী এবং প্রকাশ্যে হেনস্তাও করা হয়।

এ ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী মারজান আক্তারের মোবাইল ফোন ও তাঁর সঙ্গে থাকা ব্যাগ কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। হেনস্তাকারীরা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক উপশাখা ভার্সিটি এক্সপ্রেস ও বাংলার মুখের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে। যাঁদের মধ্যে ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক সংগঠন ভিএক্স গ্রুপের অনুসারী ও ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মারুফ ইসলাম, সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী মারুফ হাসান, বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী তৌহিদুল হক ফাহাদ, একই সেশনের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শহীদুর রহমান স্বপনসহ ১০-১৫ জন ছাত্রলীগ কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

চবি ছাত্রলীগের গ্রুপিং, আধিপত্য বিস্তারের আগ্রাসী কর্মকা, হল দখল নিয়ে বগিভিত্তিক উপগ্রুপগুলোর সংঘর্ষ ও ককটেলবাজি, সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ওপর হামলার মতো ঘটনায় ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল এবং স্বাভাবিক শিক্ষাক্রম বাধাগ্রস্ত করার আরও নজির রয়েছে।

গত ২ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের এএফ রহমান হল দখলে শাখা ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক উপগ্রুপ বিজয় ও ভার্সিটি এক্সপ্রেসের সংঘর্ষ ও শিক্ষার্থী আহতের ঘটনা ঘটে। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী প্রক্টর এবং ঘটনার ছবি ও ভিডিও ধারণ করায় কর্মরত সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন ছাত্রলীগের এক পক্ষের নেতাকর্মী। প্রকাশ্যে দেওয়া হয় হত্যার হুমকি।

রাজধানীতে (২ ডিসেম্বর) ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের কর্মী সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, 'কথা শুনবে না... অপকর্ম করবে, এই ছাত্রলীগ দরকার নেই... এই ছাত্রলীগ আমরা চাই না। শেখ হাসিনার ছাত্রলীগ, বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগ এই ছাত্রলীগ নয়।' মূল দলের গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতার এমন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার পর ছাত্রলীগের রাজনীতি সাধারণের ওপর কেমন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে তা বলে বোঝানোর দরকার আছে বলে মনে করি না। চবি ছাত্রলীগ এর আগেও বিভিন্ন সময়ে সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে এসেছে। এই ছাত্রলীগের লাইনচ্যুত বগির লাগাম টানতে কষে চেন টানতে হবে।

এস এম সাব্বির খান: সাংবাদিক

আরও পড়ুন

×