ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

অন্যদৃষ্টি

ভারতীয় ভিসাবিষয়ক যন্ত্রণা

ভারতীয় ভিসাবিষয়ক যন্ত্রণা

আকম সাইফুল ইসলাম চৌধুরী

প্রকাশ: ১২ মে ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১২ মে ২০২৩ | ১৯:৪৩

ভারতে বাংলাদেশের মানুষের যাওয়া যে কত জরুরি, তা ইন্ডিয়ান ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারগুলোয় উপচে পড়া ভিড় দেখেই অনুমান করা যায়। শুধু যমুনা ফিউচার পার্কের সেন্টারেই প্রতিদিন ৪ হাজার মানুষ ট্যুরিস্ট ভিসার আবেদন করেন। মেডিকেল ভিসা, বিজনেস ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসা, ট্রানজিট ভিসাসহ প্রতিদিন আবেদনকারীর সংখ্যা প্রায় ৫০০০। সারাদেশের ১৬টি কেন্দ্রে মোট আবেদনকারীর সংখ্যা ১০ হাজারের কম নয়।

এক সময় ভারতীয় ভিসা পাওয়া যেত দিনে দিনে। সাতসকালে ধানমন্ডির ২ নম্বর সড়কে ভারতীয় দূতাবাসে আবেদন জমা দিলে বিকেলেই পাওয়া যেত ভিসা। পাকিস্তান আমল তো বটেই, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও বেশ কয়েক বছর শুধু ভারত ভ্রমণের জন্য এক পাসপোর্ট ছিল; আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য আরেক পাসপোর্ট।

ক্রমান্বয়ে ভারত গমনের পৃথক পাসপোর্ট বিলুপ্ত হয়ে একক আন্তর্জাতিক পাসপোর্ট হয়েছে। তবে সমস্যা হলো, ভারতীয় ভিসা পেতে এখন এক দিনের পরিবর্তে এক মাস নয়, তার চেয়েও অধিক  সময়  লাগছে। কখনও তা ৪০ দিন বা তারও বেশি সময়।

ভারত ভ্রমণের জন্য ভিসার আবেদন করার পর ৪০ দিন পাসপোর্ট আটকে থাকা শুধু ভোগান্তিকর নয়, আপত্তিকরও। এ দীর্ঘ সময় একজন মানুষের ধ্যানজ্ঞান শুধু ভারত ভ্রমণ হতে পারে না। জরুরি প্রয়োজনে ভারত ছাড়া অন্যত্র যাওয়ার আবশ্যকতা থাকতেই পারে। সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ ভারতীয় দূতাবাসে পাসপোর্ট জমা থাকলে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে, কিন্তু এক মাস বা তারও বেশি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

বাংলাদেশে অনেক দেশেরই দূতাবাস নেই। তার মধ্যে অনেক দেশের দিল্লিস্থ দূতাবাস বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসা বিষয়াদি দেখভাল করে থাকে। ওইসব দেশের ভিসা পাওয়ার জন্যও বাংলাদেশিদের দিল্লি যাওয়ার দরকার পড়ে। ভারতের ভিসা পাওয়ার দীর্ঘসূত্রতার ফলে বাংলাদেশের অনেকেরই দিল্লি থেকে অন্য দেশের ভিসা সংগ্রহ দুরূহ হয়ে পড়ছে।

বাংলাদেশি নাগরিকদের ভারতীয় ভিসা প্রদান বিষয়ে ২০১৩ সালের ২৮ জানুয়ারি একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। ওই স্মারকে ৬৫-ঊর্ধ্ব ব্যক্তিদের ৫ বছর মেয়াদি ও তার কম বয়সীদের জন্য ১ বছর মেয়াদি মাল্টিপল ভিসা প্রদানের সমঝোতা হয়েছিল। অথচ সাম্প্রতিককালে এই সমঝোতার ব্যত্যয় ঘটিয়ে ৬৫-ঊর্ধ্বদের ১ বছর মেয়াদি ও তার কম বয়সীদের কাউকে তিন মাস, কাউকে ছয় মাস, কাউকে আবার এক বছর মেয়াদি সিঙ্গেল/ডাবল মাঝেমধ্যে মাল্টিপল ভিসা দেওয়া হচ্ছে। ফলে ভিসাপ্রার্থীদের ঘন ঘন ভিসার আবেদন করতে হচ্ছে। এতে ভিড় বাড়ছে, আবার ভিসা প্রসেসিং সেন্টারে কাজের চাপও বাড়ছে। আর মাথাপিছু ৮৪০ টাকা হারে দৈনিক বিপুল অঙ্কের ভিসা প্রসেসিং ফির কথা না-ই বা বলা হলো।

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অন্তত দু’দেশের কর্তাব্যক্তিদের দাবি অনুসারে বর্তমানে যতটা গভীর, সেখানে তো ভিসা থাকারই কথা নয়। সেটা না হলেও অন্তত ভিসার জন্য ভোগান্তি লাঘব হওয়া জরুরি। এ ক্ষেত্রে উপরিউক্ত সমঝোতা স্মারকটির শর্তানুসারে ৬৫-ঊর্ধ্বদের জন্য ৫ বছর মেয়াদি ও অন্যদের ১ বছর মেয়াদি মাল্টিপল ভ্রমণ ভিসা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে।

ভিসার জন্য এক-দেড় মাস বা তারও বেশি সময় পাসপোর্ট আটকে রাখা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ যদি সর্বোচ্চ এক সপ্তাহের ভেতরে ভিসা দিতে না পারে, তাহলে ভিসার আবেদনপত্র রেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষান্তে যে তারিখে ভিসা দিতে পারবে, সে তারিখে আবেদনকারী পাসপোর্ট নিয়ে যাবেন ও ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র পাসপোর্টে ভিসা পেস্ট করে দিলেই সমস্যার সমাধান হয়।

আশা করি, সুপ্রতিবেশীসুলভ আচরণের মাধ্যমে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদান সাবলীল করার লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে তৎপর হবে।

আকম সাইফুল ইসলাম চৌধুরী : অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব

আরও পড়ুন

×