ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

অকৃতকার্য শিক্ষাব্যবস্থা

অকৃতকার্য শিক্ষাব্যবস্থা

পুড়ে যাওয়া পান বরজ। ছবি: সমকাল

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৩ | ১৮:০০

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭০-৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলা-ইংরেজি পড়িতে পারে না– খবরটি আমাদিগকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করিয়াছে। মাতৃভাষা বাংলা হইলেও প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সাড়ে ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলা পড়িতে পারে না। ভাষা শিক্ষাই সকল শিক্ষার মূল। ভাষা শিখন ও পঠনে অপারগতা শিশুদের হইলেও; ব্যর্থতার ভার সম্পূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থার উপর বর্তায়।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়েভ ফাউন্ডেশনের জরিপে এই চিত্র তুলিয়া ধরিয়া বলা হইয়াছে, একই অবস্থা আফগানিস্তান, নেপাল ও মিয়ানমারেও। উল্লিখিত তিনটি দেশের সঙ্গে আমাদের তুলনা চলে না। কারণ ব্রিটিশ আমল হইতেই শিক্ষা-দীক্ষায় আমরা উহাদের তুলনায় অগ্রসর। কিন্তু বর্তমানে কেন পশ্চাদ্‌গামী? শিক্ষা পদ্ধতি এবং পাঠ্যক্রম লইয়া গত এক যুগে হরেক রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা হইয়াছে। কিন্তু উন্নতির বদলে কেন অবনতি হইল– সেই জবাবদিহি কে করিবে? রাষ্ট্রভাষা বাংলার দেশ, আধুনিক শিক্ষার পথে প্রায় সিকি শতাব্দী অতিক্রমকারী দেশে এহেন চিত্র শুধু পরিহাসক নয়; মর্মান্তিকও বটে।

মহামারি করোনার তাণ্ডবে টানা দুই বৎসর সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এই কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উপর একটি ধাক্কা পড়িয়াছে, সত্য। কিন্তু সেই ধকল কাটাইয়া উঠিতে সরকারি উদ্যোগ লইবার আবশ্যকতা ছিল। শিক্ষকের যোগ্যতা ও পঠন পদ্ধতি লইয়া নানা কথা রহিয়াছে। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তুলনায় বেসরকারিতে এই অভিযোগ বিস্তর। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতাকে গুরুত্ব না দিবার কুফল আমরা হাতেনাতে পাইতেছি।

পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে বাস্তববাদী না হইলে শিশুদের আগ্রহী করিয়া তোলা যাইবে না। প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক রচিত হইতে হইবে সহজ-সরল ভাষায়। এখানে পাণ্ডিত্য দেখাইতে গিয়া কঠিন শব্দ ও জটিল বাক্য ব্যবহার করিলে শিশুদের মস্তিষ্কে তাহা প্রবেশ করিবে না। পরিণামে শিশুরা পুস্তক হইতে মুখ ফিরাইয়া লইতে চাহিবে। ইহা শুধু বাংলা, ইংরাজির ক্ষেত্রে নহে; গণিতেও প্রযোজ্য। সুতরাং শিশুদের বাংলা-ইংরাজি পড়িতে না পারার জন্য তাহাদের দোষ দিয়া ফল নাই। শিখন-লিখন-পঠনকে আনন্দদায়ক ও ফলপ্রসূ করিতে না পারার পরিণাম আর কত দেখিতে হইবে?

আরও পড়ুন

×