রাতের বুড়িগঙ্গায় ‘বাল্কহেড’ কেন?

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৩ | ১৮:১৭
বুড়িগঙ্গা নদীর সদরঘাট হইতে তেলঘাটে যাত্রী পারাপার করিতে গিয়া একটি ওয়াটার বাস যেইভাবে ‘বাল্কহেড’ তথা বালুবাহী নৌযানের ধাক্কায় ডুবিয়া গিয়াছে, উহাকে ‘দুর্ঘটনা’ আখ্যা দিবার বিষয়টি প্রশ্নসাপেক্ষ। বরং রবিবারের রাত্রির এই অঘটনকে কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড বলিলে অত্যুক্তি হইবে না। আমরা জানি, দেশের সকল নৌপথেই রাত্রিকালে বালুবাহী ‘বাল্কহেড’ চলাচল নিষিদ্ধ। বুড়িগঙ্গার ন্যায় ব্যস্ত নৌপথে তো প্রশ্নই ওঠে না। কারণ এইগুলিতে যদ্রূপ পর্যাপ্ত আলোক থাকে না, তদ্রূপ বেপরোয়া গতির কারণে প্রয়োজন মুহূর্তে তৎক্ষণাৎ পথ পরিবর্তন বা গতিরোধ সম্ভবপর হয় না। উহার পরও ঘাতক বাল্কহেডটি বীরদর্পে চলিতেছিল কী প্রকারে?
বুড়িগঙ্গার দুর্ঘটনাটি যদ্রূপ বেদনাদায়ক, তদ্রূপ বিক্ষোভ জাগানিয়া। সোমবার পর্যন্ত উদ্ধার হওয়া অন্তত তিনজনের মৃতদেহ এবং আরও কয়েকজন নিখোঁজ থাকিবার খবর নৌ নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেই যেন প্রশ্নের সম্মুখে দাঁড় করাইয়া দেয়। কারণ দুর্ঘটনাটি এমন সময় ঘটিল, যখন সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগের কারণে নৌ দুর্ঘটনা ক্রমহ্রাসমান। লক্ষণীয়, সাম্প্রতিককালের প্রায় সকল দুর্ঘটনাই ঘটিতেছে রাত্রিকালে। ইহার অর্থ, নানা ব্যবস্থায় দিবাভাগে নৌ দুর্ঘটনা হ্রাস করা সম্ভব হইলেও রাত্রির নৌপথ ঝুঁকিপূর্ণই রহিয়া গিয়াছে। শুধু তাহাই নহে; সর্বসাম্প্রতিক অন্তত তিনটি দুর্ঘটনা ঘটিল তথাকথিত বাল্কহেডের ধাক্কায়। আমরা আশঙ্কা করি, রাত্রিকালে নিষিদ্ধ এই নৌযান কর্তৃপক্ষের নাসিকার অগ্রভাগ দিয়াই চলাচল করিতেছে। বুড়িগঙ্গার ন্যায় নদীতেই নিয়ম মানা হইতেছে না; রাজধানী হইতে দূরবর্তী নৌপথগুলির চিত্র বুঝিবার জন্য বিশেষজ্ঞ হইবার আবশ্যকতা নাই।বুড়িগঙ্গায় সর্বশেষ দুর্ঘটনাটি স্মরণ করাইয়া দিল, রাত্রিকালের নৌপথ নিরাপদ করিয়া তুলিতে আরও দায়িত্বশীল হইতে হইবে নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষকে। দিবারাত্রি নির্বিশেষে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় ছাড় দেওয়া চলিবে না। আমরা নিশ্চয় চাই, দুর্ঘটনায় নিখোঁজদের উদ্ধারে কর্তৃপক্ষ সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করিবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিও পাইবে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ। যেই বাল্কডেহের কারণে দুর্ঘটনা, উহার মালিকপক্ষকেও আইনি বেষ্টনীতে আনিতে হইবে। কিন্তু এই সকল উদ্যোগেই কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব শেষ হইতে পারে না। নিরাপদ নৌপথ নিশ্চিত করিতে বুড়িগঙ্গা-শীতলক্ষ্যার ন্যায় ব্যস্ত নৌপথগুলিতে ‘নৌ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা’ চালু করা যায় কিনা, ভাবিয়া দেখিতে বলি।