‘সাদা সোনা’র সোনালি অতীত ফেরাতেই হবে

রিয়াদ হোসেন
প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০
চিংড়ি বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক খাত। সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা এ জনপদে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় চিংড়ি। এ চিংড়ি রপ্তানি করে যে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়, তা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। চিংড়ি চাষকে সোনার চেয়েও মূল্যবান বলে মনে করা হয় বলেই চিংড়িকে ‘সাদা সোনা’ নামে অভিহিত করা হয়। কৃষি আমাদের দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। মৎস্য শিল্প হলো কৃষি খাতের অতি গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনাময় একটি উপখাত।
বাংলাদেশে এক সময় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী রপ্তানি পণ্য ছিল চিংড়ি। দুঃখজনক, বিশ্ববাজারে চিংড়ির চাহিদা বাড়তে থাকলেও আমাদের এ খাতে রপ্তানি আয় কমে যাচ্ছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী রপ্তানি পণ্য হিসেবে তা এখন সাত নম্বরে এসে দাঁড়িয়েছে। বেশির ভাগ চিংড়ি উৎপাদন হয় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলা বিশেষ করে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায়।
সম্প্রতি ইউরোপ ও আমেরিকায় রপ্তানি করা তিন কনটেইনার চিংড়ি ফেরত এসেছে, যা দেশের জন্য বড় দুঃসংবাদ। আমদানিকারক দেশ থেকে হিমায়িত খাদ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রপ্তানিকারকদের সতর্কও করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে চিংড়িতে কোনো ক্ষতিকর জীবাণু পাওয়া গেলে বাণিজ্যিক সব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হবে। এমন ঘটনার যদি পুনরাবৃত্তি হয় তাহলে সেটি আমাদের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোর প্রায় ২ লাখ ৭৫ হেক্টর জমিতে চিংড়ি উৎপাদন হয়। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফিশ এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) তথ্যমতে, পাঁচ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে চিংড়ি খাতের রপ্তানি কমেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশ থেকে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি করা হয় ৪০ হাজার ৭০২ টন। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৯০৪ টনে। কয়েক বছর ধরে চিংড়ির গড় রপ্তানি হার হ্রাস পাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে চিংড়ি খাতে যে বড় সংকট তৈরি হবে, তা সহজেই অনুমান করা যায়।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্ববাজারে চিংড়ির চাহিদা বাড়ছে। চাষিদের অতিলোভী মানসিকতার কারণে চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশের ফলে বিশ্ববাজারে এ দেশের চিংড়ির সুনাম নষ্ট হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে যাওয়া, অন্যান্য দেশে ভেনামি চিংড়ি চাষ বৃদ্ধি এবং উৎপাদনে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় দিন দিন রপ্তানি হ্রাস পাচ্ছে। এ খাতকে বাঁচাতে হলে চিংড়ি চাষ এলাকা সম্প্রসারণের পাশাপাশি হেক্টরপ্রতি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। চাষিদের ক্ষুদ্রঋণের আওতায় আনার পাশাপাশি প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী ভেনামি চিংড়ি চাষ করে বিশ্ববাজার ধরার দিকেও দৃষ্টি দেওয়া জরুরি।
শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা
- বিষয় :
- চিংড়ি