ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

কম্বোডিয়া

ক্ষমতায় না থাকলেও হুন সেনই কলকাঠি নাড়বেন

ক্ষমতায় না থাকলেও হুন সেনই কলকাঠি নাড়বেন

সেবাস্তিয়ান স্ট্র্যাজিও

প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০

গত ২৬ জুলাই কম্বোডিয়ার বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী হুন সেন ঘোষণা দেন, তাঁর দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ছেলে হুন মানেটের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে ২২ আগস্ট। ক্ষমতা হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে সোমবার কম্বোডিয়ার রাজা নরদম সিহামনির কাছে মানেটের নাম জমা দিয়েছেন হুন সেন। সে অনুযায়ী মানেটের নিয়োগের অনুমোদন দিয়ে ডিক্রি বা আদেশ জারি করেছেন রাজা। ২১ আগস্ট সেখানে জাতীয় পরিষদের প্রথম বৈঠক হবে এবং এর পরদিনই ক্ষমতা গ্রহণ করবেন হুন মানেট। গত ২৩ জুলাই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে তিনি প্রায় ওয়াকওভার পেয়ে জয়লাভ করেন।

ছেলে প্রধানমন্ত্রী হলেও ক্ষমতাসীন কম্বোডিয়া পিপলস পার্টির (সিপিপি) প্রেসিডেন্ট হুন সেনই থাকবেন। তিনি ২৬ জুলাই এটাও বলেছিলেন, স্বাভাবিক অবস্থায় তিনি নতুন সরকারের সিদ্ধান্তে কোনো প্রভাব বিস্তার করবেন না। কিন্তু ক্ষমতার স্থিতিশীল হস্তান্তর নিশ্চিত করতে পর্দার আড়ালে কাজ করবেন। তাঁর ভাষায়, ‘বুড়োরা এখনও রাজনীতি ছেড়ে দেননি। আমি এখনও ক্ষমতাসীন দলের প্রেসিডেন্ট। দলের চারজন ভাইস প্রেসিডেন্টসহ কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যান্য সদস্য রয়েছেন; যাদের কেউ জাতীয় পরিষদ সদস্য, আবার কেউ সিনেট সদস্য।’

হুন সেনের বক্তব্য থেকে সেই জোরদার অনুমানটাই সত্য হলো– আগামী দিনগুলোতে কম্বোডিয়ার শাসন প্রধানত হুন সেনের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে। তাঁর ছেলে শুধু প্রধানমন্ত্রীর পদ ও দায়িত্বেই থাকবেন। রেডিও ফ্রি এশিয়ার (আরএফএ) সঙ্গে আলাপকালে হুন সেন বলেন, তিনি আশঙ্কা করছেন, হুন মানেটের ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশে অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে। তাঁর বক্তব্য, ‘আমি সতর্ক করে দিচ্ছি– যদি আমার ছেলের জীবনের শঙ্কা দেখা দেয়, তখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি আবার ফিরতে পারি এবং কাজ করতে পারি।’ তাঁর ভাষায়, সে ক্ষেত্রে ‘আমি অল্প সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী হবো। এর পর আমি সিদ্ধান্ত নেব– পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবেন।’


তার মানে, কম্বোডিয়ায় এমন একটা ব্যবস্থাই বহাল থাকছে, যেখানে ক্ষমতা রাজনৈতিক দপ্তর বা প্রতিষ্ঠানের বদলে এক বা একাধিক ব্যক্তির হাতে ন্যস্ত থাকে এবং সেই ব্যক্তিরা পরস্পর আনুগত্য ও বাধ্যবাধকতায় আবদ্ধ থাকেন। কম্বোডিয়ার বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নেতৃত্বের পরিবর্তন মজ্জাগতভাবেই ঝুঁকিপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরে অনুমান করা হচ্ছে, সিপিপির দায়িত্বশীলরা হুন সেনের পারিবারিক উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রেডিও ফ্রি এশিয়া বা আরএফএর সঙ্গে এক আলাপে সাবেক বিরোধীদলীয় পার্লামেন্ট সদস্য উম স্যাম এন দাবি করেন, দলের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের অনেকে আছেন যারা সম্ভবত হুন সেনের পরিবারতন্ত্রের বিপক্ষে। তাঁর ভাষায়, তাদের ওই বিরোধিতা সামনের সপ্তাহগুলোতে এমনকি ‘ক্ষমতা হস্তান্তরের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহেরও জন্ম দিতে পারে’।

হুন সেনের বিরোধীরা গত কয়েক দশক ধরেই ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে এ ধরনের ফাটল আছে বলে মনে করছিলেন। যদিও তা কখন প্রকাশ্য রূপ নিতে পারে, তা বলতে পারেননি। এখন হুন সেন যেভাবে প্রকাশ্যে দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রীর প্রাণনাশের হুমকির বিষয় উল্লেখ করছেন, তাতে এটা স্পষ্ট– ক্ষমতা হস্তান্তরে এক ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। যে ব্যবস্থাতে হুন সেন দীর্ঘ সময় ধরে নিজেকে অপরিহার্য করে তুলেছেন, সে ব্যবস্থা ছেড়ে আসার পথে কী কী সমস্যা– ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক; তাঁকে মোকাবিলা করতে হতে পারে, তা তিনি ভালোই জানেন। হুন সেনের এহেন শংকায় এটাও স্পষ্ট হয়, অন্যদের দেখানো যে আনুগত্য ও বাধ্যবাধকতার ওপর হুন সেনের ক্ষমতা দাঁড়িয়ে আছে, সেটিও বেশ নড়বড়ে।

তবে সাম্প্রতিক বক্তব্যে হুন সেন জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি তাঁর ৭১তম জন্মদিনের আগেই ক্ষমতা ছাড়ছেন। যদিও তাঁর এখনও অনেক কিছু করার আছে; তিনি তা করছেন দেশটির স্থিতিশীলতার স্বার্থে। তাঁর ভাষায়, ‘এখনই নতুন প্রজন্মের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা অধিক স্থিতিশীল ও নিরাপদ। অন্তত আমি বৃদ্ধ হয়ে কিংবা মরে যাওয়ার আগে আগে ক্ষমতা হস্তান্তরের চেয়ে এটা নিরাপদ।’

সত্যিই, এখন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সফরের দায়িত্ব থেকে হুন সেন মুক্তি পাবেন। ধর্মীয় স্থাপনা কিংবা সড়ক উদ্বোধনেও তাঁর যাওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকবে না। এসব দায়িত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি সময় ও শ্রম ব্যয় করবেন তাঁর ছেলের ক্ষমতা সুসংহতকরণে। এর মাধ্যমে বস্তুত তিনি তাঁর শাসনেরই ধারাবাহিকতাই নিশ্চিত করবেন।

সেবাস্তিয়ান স্ট্র্যাজিও: ডিপ্লোম্যাটের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সম্পাদক; দ্য ডিপ্লোম্যাট থেকে ভাষান্তর মাহফুজুর রহমান মানিক

আরও পড়ুন

×