ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ভয়ংকর অপব্যবহার

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ভয়ংকর অপব্যবহার

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০

জনসচেতনতা ও নজরদারির অভাবে একটা জনহিতকর প্রযুক্তিও যে ক্ষতির কারণ হইতে পারে– বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সমকালের ‘লাখো গ্রাহক জানেই না তাদের নামে হিসাব নম্বর’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি তাহার প্রমাণ। প্রতিবেদন অনুসারে, বিভিন্ন জেলার দরিদ্র মানুষদের বিবিধ সহযোগিতার ফাঁদে ফেলিয়া তাহাদের এনআইডি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও আইরিশ লইয়া খোলা হইয়াছে লক্ষাধিক মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব। সেই হিসাবসংবলিত সিমকার্ড আবার মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তুলিয়া দেওয়া হইয়াছে ভয়াবহ সব অপরাধী চক্রের হাতে। কথিত হিসাবধারীদের সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাখিয়া জালিয়াত চক্র দিনের পর দিন চালাইয়াছে নানা প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড। ফলস্বরূপ, একদিকে বহু মানুষ জালিয়াতদের ফাঁদে পড়িয়া জীবনের শেষ সম্বলটি হারাইয়াছে; অন্যদিকে এই সকল অপকর্মের সহিত সামান্যতম সংশ্লিষ্টতা না থাকার পরও প্রতারণার মামলা খাইয়া অসংখ্য দরিদ্র মানুষকে থানা ও আদালতের বারান্দায় নিরন্তর ঘুরিতে হইতেছে।

উল্লেখ্য, প্রতিবেদনমতে, প্রতারণার মধ্যে রহিয়াছে– কারাগারে বন্দির জামিনের ভুয়া আশ্বাস দিয়া তাহার স্বজনদের নিকট হইতে টাকা হাতাইয়া লওয়া হইতে আরম্ভ করিয়া মোটা মুনাফার লোভ দেখাইয়া অনলাইনভিত্তিক ভুঁইফোঁড় প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ আকর্ষণ পর্যন্ত বিচিত্র বিষয়। সম্প্রতি দুবাইভিত্তিক অনলাইন প্রতিষ্ঠান এমটিএফই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করিয়া এই দেশ হইতে কয়েক সহস্র কোটি টাকা পাচারের ঘটনায়ও নাকি ঐ সকল ভুয়া হিসাবসংবলিত সিমকার্ড ব্যবহৃত হইয়াছে।

তবে আশার বিষয়, এই সংক্রান্ত মামলা তদন্ত করিতে গিয়া পুলিশ ইতোমধ্যে এহেন প্রতারণার হোতা শুধু নহে; উৎসও খুঁজিয়া পাইয়াছে। জালিয়াত চক্রের সদস্যদের অনেকে গ্রেপ্তারও হইয়াছে। মূলত উক্ত তদন্তের সহিত জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের বরাতেই সমকাল মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নামে এই ঘৃণ্য অপরাধ সংঘটিত হইবার তথ্য জানিতে পারিয়াছে। তদন্তের মাধ্যমে ইহাও জানা গিয়াছে, মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের কিছু সংখ্যক অসাধু ডিস্ট্রিবিউশন সেলস অফিসার ও ডিস্ট্রিবিউশন সেলস সুপারভাইজার তাহাদের কোম্পানির এজেন্টের মাধ্যমে উক্ত জালিয়াত চক্রের সহায়ক হিসাবে কাজ করিয়াছে। আমরা মনে করি, মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানিসমূহের এই নিম্নস্তরের কর্মীদের পক্ষে এত বড় জালিয়াতি ধারাবাহিকভাবে চালাইয়া যাওয়া সম্ভবপর হইবার কথা নহে; ঊর্ধ্বতন আরও কেহ এহেন অপরাধে সংশ্লিষ্ট কিনা, খতাইয়া দেখা আবশ্যক।

মোবাইল ব্যাংকিং অন্যান্য দেশের ন্যায় এই দেশেও অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক কর্মকাণ্ডের অন্যতম মাধ্যমরূপে সর্বমহলেই স্বীকৃত। প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের জটিলতাসমূহ অনেকাংশেই এই ব্যবস্থায় পরিহার সম্ভব। এই সকল কারণেই অনুমোদনের অতি অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যবস্থাটি একেবারে তৃণমূল পর্যন্ত সম্প্রসারিত হইয়াছে।

ইদানীং বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের প্রেরিত রেমিট্যান্সও এই প্রক্রিয়ায় আহরিত হইতেছে। সকল কিছু মিলাইয়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ের প্রতি মানুষের আস্থা যে কোনো মূল্যে ধরিয়া রাখিতে হইবে। ইহারই অংশ হিসাবে আলোচ্য জালিয়াতিসহ এই ব্যবস্থার যে কোনো প্রকার অপব্যবহার বন্ধ করিতে হইবে। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিত করা এই পদক্ষেপেরই অংশ।

আরও পড়ুন

×