ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

তারল্য সংকট লক্ষণ মাত্র

তারল্য সংকট লক্ষণ মাত্র

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০

তারল্য সংকটে পড়িয়া তথা উদ্বৃত্ত নগদ অর্থের অভাবে অধিকাংশ ব্যাংক ধার করিয়া চলিতেছে বলিয়া যেই সংবাদ শনিবারের সমকালে প্রকাশ হইয়াছে, উহা নূতন নহে। আমরা দেখিতেছি, গত বৎসরের ডিসেম্বর মাস হইতেই দেশের ব্যাংক খাতে এইরূপ পরিস্থিতি কমবেশি বিরাজ করিতেছে।

সমকালের আলোচ্য প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, গত বুধবার অন্তত ১৩টি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক হইতে ধার করিয়াছে এবং আন্তঃব্যাংক পর্যায়েও ধারসংক্রান্ত প্রায় দেড়শতটি লেনদেন ঘটিয়াছে। ব্যাংকগুলির স্বল্পমেয়াদি ধারের স্থিতি দাঁড়াইয়াছে ৪৪ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা। আমরা জানি, তারল্য সংকট ঘটিলে সুদ গুনিয়া অপর ব্যাংক কিংবা কেন্দ্রীয় ব্যাংক হইতে ‘কল মানি’ গ্রহণও অবশ্য অস্বাভাবিক নহে। এইরূপ ধারগ্রহীতার সংখ্যা ও মোট পরিমাণ যেই হারে বাড়িতেছে এবং দীর্ঘসময় ধরিয়া সেই প্রবণতা অব্যাহত থাকিতেছে, উহা উদ্বেগজনক না হইয়া পারে না।

 আরও উদ্বেগের বিষয় হইতেছে বিদ্যমান তারল্য সংকট ধ্রুপদি চরিত্রের নহে। ব্যাংকারগণকে উদ্ধৃত করিয়া সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমসূত্রে জানা যাইতেছে, সাম্প্রতিক সময়ে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে যেইসকল ছাড় দিয়াছে, সেইগুলিতে হিতে বিপরীত ঘটিয়াছে। খেলাপি কিংবা মন্দঋণের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক ব্যাংকেই নগদ প্রবাহে ঘাটতি দেখা দিয়াছে। অপরদিকে গ্রাহক চাহিদা মিটাইতে গিয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক হইতে ডলার ক্রয় করিতে গিয়াও নগদ টাকা খরচ হইয়া যাইতেছে। বস্তুত, খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি কিংবা ডলার সংকট বেশির ভাগ ব্যাংকের প্রতি জনআস্থাতেও চিড় ধরাইয়াছে। যেই কারণে অনেকে ব্যাংকের বদলে নগদ অর্থ হাতে রাখিতে গিয়াও তারল্য সংকটে যুক্ত করিতেছে বাড়তি মাত্রা। একই কারণে ব্যাংকে আমানত রাখিবার প্রতিও আগ্রহ কমিয়া যাইতেছে জনসাধারণের। নির্বাচনের মৌসুমে বিনিয়োগ স্থবিরতার কারণে যেইখানে ব্যাংকগুলিতে উদ্বৃত্ত অর্থ পড়িয়া থাকিবার কথা, সেইখানে তারল্য সংকট দেখা দিবার বিষয়টি হালকাভাবে লইবার অবকাশ নাই।

ইহা স্পষ্ট যে, বিদম্যান তারল্য সংকট রোগের লক্ষণ মাত্র। কারণ রহিয়াছে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি ও গ্রাহক আস্থা হ্রাস পাইবার মধ্যে। স্বীকার্য, তারল্য সংকট কাটাইতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত অর্থবছর বেশ কয়েকটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করিয়াছিল। সেইখানেও কেন সাড়া মেলে নাই, খতাইয়া দেখা জরুরি।

বাংলা প্রবাদ স্মরণ করিয়া আমরা বলিতে চাহি, এইরূপ ‘তোলা দুধে পোলা রক্ষা’ পাইবে না। ব্যাংক খাতে নগদ অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধিতে প্রয়োজন আসলে ‘বিগ পুশ’। গ্রাহক আস্থা ফিরাইতে যেইরূপ সুশাসনে নজর দিতে হইবে, সেইরূপ ডলার সংকট কাটাইতে হুন্ডিসহ অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন নিয়ন্ত্রণও জরুরি। আর খেলাপি বা মন্দ ঋণ কমাইয়া আনিবার বিকল্প নেই। উহাতে ব্যাংক খাতে সুশাসন যেইরূপ দৃশ্যমান হইবে, গ্রাহকের আস্থাও বাড়িবে। তখন তারল্য সংকট না কাটিবার যৌক্তিক কোনও কারণ নাই।

আরও পড়ুন

×